বেনজীর কোথায় জানেন না, তাহলে রাষ্ট্র আছে?
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) উদ্যোগে “বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।”
প্রথম নিউজ, অনলাইন: দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আপনি যদি এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কথা শুনেন, তাদের বডি ল্যাংগুয়েজ দেখেন- এরা যেন আমাদের প্রভু। ওই এক প্রভু আজকে কোথায় গেছে? এমনভাবে কথা বলতেন, পিস্তল দেখিয়ে বলতেন, এটা তোমাকে এমনি দেয়া হয় নাই, এটা ব্যবহার করার জন্য দেয়া হয়েছে। করেছেনও ব্যবহার, মানুষকে মেরেছেন, গুম করেছেন, এখন আপনি (বেনজীর আহমেদ) কোথায়? গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) উদ্যোগে “বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, কী ভয়াবহ চিন্তা করেন! পত্রিকা খুললে শুধু লুট আর লুট ছাড়া কিচ্ছুই পাবেন না। অদ্ভুত! কারা লুট করছে? যারা আমাদের সমাজে, রাষ্ট্রের বড় দায়িত্বে তারা, ইমাজিং। আর্মির সাবেক প্রধান, ইমাজিং, যারা আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রধান আইজি তাদেরটা বেরিয়ে আসছে। সংসদ সদস্য চোরাচালানীর সঙ্গে জড়িত টুকরা টুকরা হয়ে যায়। মাদক পাচারকারীও সংসদ সদস্য ছিল কক্সবাজারের টেকনাফে, এই কোন সমাজ বলেন আপনারা।
পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, তার (বেনজীর) সম্পর্কে আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান বলেছেন, ‘আমি তার সম্পর্কে কিছুই জানি না’। তাহলে রাষ্ট্র কিছুই জানে না। তাহলে এটা রাষ্ট্র আছে এখন? মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা। বাংলাদেশ ব্যাংক লুট হয়ে যায়। সোনা হারিয়ে যায়, ডলার রিজার্ভ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়ে চলে যাচ্ছে, ওদিকে ইন্টারন্যাশনাল হ্যাকিং হচ্ছে মিলিয়ন অ্যান্ড মিলিয়ন ডলার নিয়ে চলে যাচ্ছে, কল্পনা করা যায়। শেয়ারবাজারে রথি-মহারথিরা লুটপাট করে শেষ করে দিচ্ছে, সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব (আবুল মাল আবদুল মুহিত) বলেছেন, আমার কিছু করার নাই ওদের হাত অনেক লম্বা। বাংলাদেশে এখন অনেক বড় বড় মানুষ, এত বড় বড় যে, তাদের আশপাশে যাওয়া যায় না। কেউ সন্ন্যাসী, কেউ বিরাট ধর্মীয় আলেম।
তিনি আরও বলেন, পত্রিকায় আসছে চট্টগ্রামের একটি ব্যাংকের শাখা থেকে ১৪৯ ভরি সোনা লোপাটের ঘটনা। এখন থেকে ১৪৯ ভরি সোনা তো কিছুই না ভাই, ব্যাংক থেকে তো টনকে টন সোনা চলে যাচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। কোনো দিকে কোনো চিন্তা নাই, জবাবদিহিতা নাই, চিন্তা নাই, কিচ্ছু নাই। একটাই চিন্তা ছিল, আমাকে ক্ষমতায় বসিয়ে রাখতে হবে, কেউ নাড়াতে পারবে না। তার জন্য আমি আমার চতুর্দিকে সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়ে আমার সমস্ত রক্ষী তৈরি করেছি, একেকটা রক্ষী।
ফখরুল বলেন, আমি জামায়াতের রাজনীতি সমর্থন করি না। কিন্তু জামায়াতের যে কৌশল এবং তাদের যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া- সেটা অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত, বৈজ্ঞানিক। জামায়াতের রাজনীতি ঠিক কমিউনিস্ট পার্টির মতো অনেকটা। তাদের স্টাডি সেল আছে। তাদের যে ছাত্রশিবির, তাদের প্রত্যেকটা সেল আছে। তাদেরকে লেখাপড়া করতে হয়, বই পড়তে হয়। বই পড়ে তাদেরকে উত্তর দিতে হয়। তারা নিজেরা বই এবং পত্রিকা প্রকাশ করে। এগুলো যদি আপনার চর্চার মধ্যে না থাকে, আর জ্ঞানের চর্চা ও জ্ঞান ছাড়া আপনি কখনো সফলতা অর্জন করতে পারবেন না।
আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো জরুরি মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এরা সরকার নয়, এরা বর্গী, ডাকাত, লুটেরা। এদেরকে যদি আমরা প্রতিরোধ করতে না পারি, ঠেকাতে না পারি আমাদের দেশের অস্তিত্ব থাকবে না।
আয়োজক সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও শাহাদতবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী মাহবুব আলমের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারী, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক সামসুল আলম সেলিম, ডা. আবু নাসের প্রমুখ।