বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীরা হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদরদপ্তরে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিশেষ সভায় এসব বিষয় তুলে ধরেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগাম ছাড়া হয়ে উঠছে। উৎপাদনকারী থেকে ভোক্তাপর্যায়ে পৌঁছাতে পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যায়। এরমধ্যে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয় মধ্যস্বত্বভোগীরা। বাজার মনিটরিং না করলে এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তাই বাজার মনিটরিংয়ের আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদরদপ্তরে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিশেষ সভায় এসব বিষয় তুলে ধরেন সংশ্লিষ্টরা।
সভায় বাজার সমিতির নেতারা বলেন, বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীরা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। নানা হাত পাল্টে একটি পণ্য ভোক্তাপর্যায়ে এসে দাম বেড়ে যাচ্ছে। কেন বাড়ছে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য বাজার মনিটরিং করতে হবে। বাজারের সামনে ডিজিটাল বোর্ড রাখা, যাতে প্রতিটি পণ্যের মূল্য তালিকা থাকে। সেক্ষেত্রে ক্রেতারা সহজেই পণ্য কিনতে পারবে।
সিটি করপারেশনের কর্মকর্তারা বলেন, যেখান থেকে পণ্য বাজারে আসে সেখানেই মনিটরিং করা উচিত। এছাড়া রাজধানীর বড় বড় আড়তে পণ্য মজুত করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। এজন্য ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, আমরা যখন বাজার মনিটরিংয়ে যাই তখন মূল্য তালিকা পাই না। এটা আমরা নিশ্চিত করতে পারি না। খুচরা বাজারে গেলে ব্যবসায়ীরা বলেন ক্যাশ মেমো তারা পায় না। ব্যবসায়ীরা দোষ চাপিয়ে মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। মূল্য কমে গেলে বলে অনেক লস হয়ে গেছে। তাদের এই মালামাল বেশি দামে কেনা।
তিনি বলেন, কারওয়ান বাজারে ৩২ টাকার শসা ৭৫-৮০ টাকা হয়ে যায়। এটা কেন হয় তা খুঁজে দেখা দরকার। বাজার কমিটির সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য, কিন্তু তাদের কোনো সহযোগিতা পাইনি। ভোক্তা অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এক ব্যবসায়ী দিনে এক লাখ ডিম বিক্রি করে। কিন্তু কোথা থেকে কত দামে কিনেছে তার কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তাই ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানাবো নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে আপনারা ব্যবসা করেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের নানা ধরনের পদক্ষেপ থাকে। বাজার মনিটরিং করার ব্যবস্থা আমাদের রয়েছে। যাদের যেই দায়িত্ব সেগুলো যথাযথভাবে পালন না করলে সমস্যাটা হয়। আমরা চাঁদাবাজির খবর পাই। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, অতিলোভী ব্যবসায়ীরা চাহিদা ও যোগানের মধ্যে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে লাভবান হচ্ছেন। মধ্যস্বত্বভোগীরা সুবিধা নিয়ে নেবে। আমরা সবাই মিলে যদি কাজ না করি এমন সুবিধা পেয়ে যাবে। মধ্যস্বত্বভোগী যারা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্র করছেন। আমরা কাজ করছি, কেউ যদি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করেন তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম ও অফ.) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, আজকে পাঁচ পণ্যের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ডিম, মুরগি, আলু, পিঁয়াজ ও শাকসবজি এসব নিয়ে। কারোর প্রতি দোষারোপ না করে সুনির্দিষ্ট কিছু জায়গা যেখানে মনিটরিং দরকার সেগুলো করেন। পাইকারি বিক্রেতার কাছ থেকে দামের স্লিপ নেবেন। তিনি বলেন, রাজধানীর সব জায়গায় যদি বাজার অভিযানে যান আমরা আপনাদের সহায়তা দেবো। একযোগে গেলেও যত ফোর্স লাগে তার ব্যবস্থা করবো। আর পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে কোথাও কোনো অভিযোগ পেলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো। আমরা এটিকে অন্যান্য বিষয়ের মতোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছি।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, বিশৃঙ্খলাকে সুশৃঙ্খল করতে হবে। এজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমাদের যেই চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। ম্যাসেজ টু কমিশনার চালু হচ্ছে। সেখানে যে কোনো অভিযোগ বা অপরাধ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা সবাই মিলে বাজার মূল্যের যেই বিশৃঙ্খলা আছে সেটা শৃঙ্খলা আনতেই আপনাদের নিয়ে এখানে বসেছি। আমাদের নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমরা সেগুলো মোকাবিলা করতে চাই। আপনারা যে কোনো কিছু আমাদের জানাতে পারেন। তালিকা টানিয়ে রাখার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কীভাবে দেওয়া যায় এবং একজন মানুষ যেন সহজেই জানতে পারে আজকের বাজার দর কেমন আছে।
কমিশনার বলেন, বাজারে কোনো জিনিসের স্বল্পতা নেই। কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে সংকট তৈরি হয়। কারওয়ান বাজারে একটি ৫০ টাকার জিনিস ১০০ টাকা হয়ে যাচ্ছে। এটা কেন হচ্ছে মনিটরিং করতে হবে। যারা মনিটরিং করবেন আমরা আপনাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেবো। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির ৫০ থানার অফিসার্স ইনচার্জ, ডিএমপির আট বিভাগের উপকমিশনার, ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা এবং রাজধানীর বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা।