ঈদকে সামনে রেখে সড়ক-মহাসড়কে সক্রিয় হচ্ছে ডাকাতরা
বড় বড় উৎসবকে টার্গেট করে প্রতিবছরই সক্রিয় হয়ে ওঠে ডাকাতরা। বিশেষ করে কোরবানি ঈদের আগে ডাকাত দলের উৎপাত বেশি লক্ষ করা যায়।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: বড় বড় উৎসবকে টার্গেট করে প্রতিবছরই সক্রিয় হয়ে ওঠে ডাকাতরা। বিশেষ করে কোরবানি ঈদের আগে ডাকাত দলের উৎপাত বেশি লক্ষ করা যায়। কারণ, এ সময় কোরবানির পশু নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানী এবং দক্ষিণাঞ্চলের দিকে যান ব্যবসায়ীরা। এ বছর কোরবানির ঈদের এখনও এক মাস বাকি, এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা সামনে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদকে সামনে রেখে নতুন করে সড়ক-মহাসড়কে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ডাকাতরা। এমনকি ঘটনা বিশেষে হত্যার উদ্দেশ্যে যাত্রীদের ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ এসব ডাকাত।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বলছে, ডাকাতদের উৎপাত ঠেকাতে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। ঈদুল আজহাকে ঘিরে সড়ক-মহাসড়কে কোনোরকম বিশৃঙ্খলা যেন না হয়। গরু নিয়ে ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে যেন চলাচল করতে পারে সে জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সংস্থাটি। ঢাকা জেলার আশুলিয়া এলাকা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তালিকাভুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী-আন্তজেলা ডাকাত চক্রের সরদার মো. আলী হোসেন ওরফে আলী ডাকাতসহ সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের ১০ সদস্যকে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪। বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলটিকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানিয়েছে, বেশ কিছু দিন ধরে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার কবিরপুর এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র দেশীয় অস্ত্র দেখিয়ে পথচারী, রিকশাচালকসহ যাত্রীদের জিম্মি করে তাদের সর্বস্ব লুট করে নিচ্ছিল এবং ক্ষেত্র বিশেষে হত্যার উদ্দেশ্যে যাত্রীদের ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যাচ্ছিল। এ ঘটনায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় জনতা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। এতে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ডাকাত ও আন্তজেলা ডাকাতি ও ছিনতাইকারী দলের মূলহোতা মো. আলী ওরফে আলী ডাকাত তার দলবল নিয়ে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার নবীনগর এলাকায় কয়েকজন সন্ত্রাসী সংঘবদ্ধ হয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও আন্তজেলা ডাকাতি চক্রের সরদার মো. আলী হোসেন আলীসহ ১০ জন ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে রাজধানীর ডেমরা এলাকায় ৪ তলা একটি ভবনকে টার্গেট করে ডাকাতরা। ভবনের মালিক নিলুফা ইয়াসমিন সব ফ্লোর ভাড়া দিয়ে দ্বিতীয় তলায় একা বসবাস করেন। গত এপ্রিল থেকেই বাড়িটিতে ঢোকার চেষ্টা করছিল ডাকাতরা। ডিশ সংযোগের তার কেটে দিয়ে মেকানিক পরিচয়ে একাধিকবার বাসায় ঢুকে রেকি করে চক্রের সদস্যরা। ৮ মে ডাকাত সর্দার উজ্জ্বল চার সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে বিদেশি পিস্তলসহ ওই বাড়িতে প্রবেশের চেষ্টা করেন। বিষয়টি গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যায় র্যাব। পরে এদের গ্রেফতার করা হয়।
তার আগে, টাঙ্গাইলের মধুপুরে যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ডাকাতির প্রতিবাদ করতে গিয়ে আহত হয়েছেন অন্তত সাত জন। সোমবার (৩ এপ্রিল) রাত দেড়টার দিকে মধুপুরের রক্তিপাড়ার নরকোনা এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে।
ওই বাসে থাকা একজন বাসযাত্রী রবিউল ইসলাম বলেন, ঢাকার মহাখালী থেকে রাত ১০টার দিকে ৩০-৪০ জন যাত্রী নিয়ে মাদারগঞ্জ স্পেশাল পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস জামালপুরের মাদারগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। পথিমধ্যে আশুলিয়া বাইপাইল টিকিট কাউন্টারে এসে বাসটি বিরতি নেয়। এ সময় ওই কাউন্টার থেকে সাত-আট জনের সংঘবদ্ধ ডাকাত দল গাড়িতে ওঠে। বাসটি মধুপুরের দেউলাবাড়িতে পৌঁছালে ডাকাত দল মুখে মাস্ক পরে বাসের চালক ও হেলপারকে জিম্মি করে যাত্রীদের এলোপাতাড়ি দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে থাকে। যাত্রীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বর্ণালংকার, টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এ সময় প্রতিবাদ করলে ডাকাত দল সাত যাত্রীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে। পরে তারা মধুপুরের রক্তিপাড়ার নরকোনা এলাকায় নেমে যায়। গত মাসে ও চলতি মাসে এমন বেশ কিছু ডাকাতির ঘটনা নতুনভাবে সামনে এসেছে। ফলে নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতদের নতুনভাবে উৎপাতের বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-৪ অধিনায়ক ( সিও) লে. কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রহমান বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমরা এক রাতেই ১০ জনের একটি ডাকাত দলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের গ্রেফতারের পর বেশ কিছু তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। এ চক্রটি মূলত মহাসড়কে ডাকাতি করে থাকে। সময়ে সময়ে স্থান বদল করে ডাকাতি করে। আজ আশুলিয়া-মানিকগঞ্জ রোডে, আবার কাল যাবে ময়মনসিংহের রোডে, নারায়ণগঞ্জ কিংবা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে; এভাবে তারা রুট বদল করে ডাকাতি করে আসছিল। আর ডাকাত দলটিকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ডাকাত ও আন্তজেলা ডাকাতি ও ছিনতাইকারী দলের মূলহোতা মো. আলী ওরফে আলী ডাকাত। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১০টি মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতি, দস্যুতা, নাশকতা সৃষ্টিসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা রয়েছে এবং বেশ কয়েকটি মামলায় মো. আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ দিয়েছেন আদালত।’
র্যাব-৪ অধিনায়ক আরও বলেন, ‘এসব ডাকাত দল সুযোগ বুঝে এক রাতেই কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। ডাকাতি শেষ দ্রুত স্থান ত্যাগ করে অন্য কোথাও প্রস্তুতি নেয়। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তাদের রোডম্যাপ সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে এবং এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
এ প্রসঙ্গে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। র্যাবের প্রত্যেকটি ইউনিটকে আগে থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে যেন কোনোভাবে সড়ক-মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা না হয়। ডাকাতদের উৎপাত ঠেকাতে সবসময় র্যাব সতর্ক থাকে। এবারও ব্যবসায়ীরা যেন নির্বিঘ্নে তাদের মালামাল নিয়ে সড়কে চলাচল করতে পারে সে জন্য আমাদের বাড়তি নিরাপত্তা থাকবে।’
র্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, ‘ঈদুল আজহার গরুর হাটকে কেন্দ্রে করে যেসব ব্যবসায়ীর সড়ক-মহাসড়কে তাদের টাকা-পয়সা, মালামাল, গরু-মহিষ নিয়ে চলাচল করতে যদি কোনোরকম সন্দেহ হয় এবং নিরাপত্তার কোনও ঘাটতি থাকে, তাহলে আমাদের বিষয়টি জানালে আমরা সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এছাড়া প্রতিবারের মতো এবারও আমাদের বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে।’