জ্বালানি তেলের প্রভাবে বেড়েছে চালের দাম
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বেড়েছে ট্রাক ভাড়া। এই অজুহাতে দেশে বেড়েছে চালের দামও।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: কৃষকের গোলায় উঠছে আমন ধান। সরকারি সিদ্ধান্তেই দেশে গত কয়েক মাসে প্রচুর পরিমাণ চাল আমদানি হয়েছে। চাল আমদানিতে উৎসাহ দিতে আমদানি শুল্কও কমানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও কমেছে চালের দাম। পাশাপাশি সরকারি গুদামে এখন ১৪ লাখ টনের বেশি খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। যা রেকর্ড। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বেড়েছে ট্রাক ভাড়া। এই অজুহাতে দেশে বেড়েছে চালের দামও।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খোলা বাজারে চাল প্রতি কেজি দেড় থেকে দুই টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চাল আনতে ট্রাকপ্রতি ভাড়া বেড়েছে গড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। এর প্রভাবেই বেড়েছে চিকন-মোটা সব চালের দাম। জ্বালানির প্রভাবে চাল পরিবহন খরচ বেড়েছে ২৮ শতাংশ। ডিজেলের দাম না বাড়লে আমনের এই মৌসুমে পাইকারি ও মিল পর্যায়ে কেজিতে চালের দাম ৫০ থেকে ৬০ পয়সা কমতো। কিন্তু এবার তা কমছে না।
রাজধানীর খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। বাজারে সাধারণ মানের নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। এ ছাড়া আঠাশ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, কাজল লতা ৫২ থেকে ৫৪ টাকা, পাইজাম ৫২ থেকে ৪৫ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৪২ থেকে ৪৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবির হিসাবে বর্তমানে মিনিকেট, নাজিরশাইলসহ সরু চালের দাম গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি। চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬৮ টাকা কেজি দরে। গত বছর একই সময় যা বিক্রি হয়েছে ৫৪ থেকে ৬২ টাকা কেজি দরে। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজি দরে।
এদিকে সরকার রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভিত্তিতে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে সরকার ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ১২ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির জন্য সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সরকার চাল কিনেছে ১০ লাখ ৬৬ হাজার টন। এ ছাড়া গত অর্থবছরের শেষের দিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় ৩২০টি বেসরকারি কোম্পানিকে ১৫ লাখ ৬১ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে আরও ৪১৫টি বেসরকারি সংস্থাকে ১৬ লাখ ৯৩ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। চলতি বছরের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৬৫ হাজার টন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় গুদামগুলোয় চালের মজুত ছিল ১২ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন।
জানতে চাইলে বাবুবাজার চালের পাইকারি ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান জানিয়েছে, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির আগে ট্রাক ভাড়া ছিল ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এখন তা ২২ থেকে ২৪ হাজার টাকা। এ হিসেবে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ২৫০ টাকা। আর কেজি প্রতি দাম বেড়েছে দুই থেকে চার টাকা। একই কারণে প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।
বাদামতলী-বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন জানিয়েছে, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পরে জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, কুষ্টিয়ার বড় মোকাম থেকে ঢাকায় ট্রাকের ভাড়া এরই মধ্যে কমপক্ষে তিন থেকে চার হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে চালের দামে। এই দাম কমার সম্ভাবনা আছে বলে তো মনে হয় না।
কৃষি বিপণন বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গত ২১ নভেম্বর বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের খুচরা মূল্য ছিল ৪৪ টাকা থেকে ৪৮ টাকার মধ্যে। গত মে মাসে মোটা চালের দাম ছিল ৪২ টাকা ৬৩ পয়সা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত জুলাই থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ৭ লাখ ৭৩ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময় চাল আমদানির পরিমাণ ছিল শূন্যের কোঠায়। আমদানিকৃত চালের মধ্যে সরকার এনেছে ৪ লাখ ৯৪ হাজার টন। আর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৭৯ হাজার টন। চালের আমদানি বাড়াতে সরকার চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। ফলে গত অর্থবছরের শেষে চাল আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩ লাখ ৫৯ হাজার টন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: