বাজেট ২০২৩-২০২৪: রিটার্ন জমা স্লিপ পেতে গুণতে হবে ২ হাজার টাকা 

অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। মূলত করের আওতা ও পরিমাণ বৃদ্ধি করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বাজেট ২০২৩-২০২৪: রিটার্ন জমা স্লিপ পেতে গুণতে হবে ২ হাজার টাকা 

প্রথম নিউজ,ঢাকা: করযোগ্য আয় নেই। কিন্তু সরকারি বিভিন্ন সেবা পেতে আয়ের যাবতীয় হিসাবসহ আয়কর রিটার্ন জমা দিয়ে আপনি প্রাপ্তি স্বীকার বা রিটার্ন জমা স্লিপ নিচ্ছেন। এতে কোনো কর দিতে হয় না।

তবে আসছে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে সেই সুযোগ থাকছে না। করযোগ্য আয় না থাকলেও রিটার্ন জমা স্লিপ পেতে হলে দুই হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। তবে যারা নিয়মিত কর দিয়ে আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দেন, তাদের ওই বাড়তি টাকা দিতে হবে না। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। মূলত করের আওতা ও পরিমাণ বৃদ্ধি করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, শূন্য কর দেখিয়ে যারা এতদিন আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন, প্রকৃতপক্ষে রিটার্ন জমার স্লিপ বা প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পেতে তাদেরই দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। যেহেতু চলতি অর্থবছরে রিটার্ন জমার স্লিপ না নিলে ৪০ ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই করদাতাকে কর প্রদানে একরকম বাধ্য করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী বাজেটে কোনো ব্যক্তি শূন্য আয় দেখিয়ে রিটার্ন জমা দিলে স্লিপ পেতে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। অন্যদিকে আয় ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করলে নির্ধারিত হারে আয়কর দিতে হবে।

বর্তমানে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার ক্ষেত্রে পুরুষ করদাতার বার্ষিক আয় তিন লাখ টাকা, মহিলা অথবা ৬৫ বছরের বেশি পুরুষ করদাতার ক্ষেত্রে সাড়ে তিন লাখ টাকা, প্রতিবন্ধী করদাতার ক্ষেত্রে সাড়ে চার লাখ টাকা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার বার্ষিক আয় চার লাখ ৭৫ হাজার টাকা করমুক্ত। এ সীমার নিচে আয় থাকলে করদাতা এতদিন শুধু শূন্য আয় দেখিয়ে রিটার্ন জমা দিতে পারতেন, এক্ষেত্রে কোনো কর দিতে হতো না। বার্ষিক আয় করসীমার ওপর এক টাকার বেশি আয় থাকলেও তাকে ন্যূনতম আয়কর দিতে হয়।

সেক্ষেত্রে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতার ন্যূনতম করের হার পাঁচ হাজার টাকা। অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতার ন্যূনতম করের হার চার হাজার টাকা। আর সিটি কর্পোরেশন ছাড়া অন্যান্য এলাকায় অবস্থিত করদাতার ন্যূনতম করের হার তিন হাজার টাকা।

যেমন- একজন গৃহিণীর শুধুমাত্র সঞ্চয়পত্র আছে, কিন্তু তার করযোগ্য আয় নেই। দুই বছর আগে ব্যাংকে টিআইএন দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনেছিলেন। চলতি অর্থবছরে টিআইএনের পরিবর্তে ব্যাংকে রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক করা হয়। স্লিপ না দিলে সঞ্চয়পত্রের সুদ আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটার বিধান রয়েছে। আর স্লিপ জমা দিলে ১০ শতাংশ উৎসে কর কাটা হয়। বাড়তি উৎসে কর কাটার হাত থেকে বাঁচতে চলতি অর্থবছরে ওই গৃহিণী শূন্য রিটার্ন জমা দিয়ে রিটার্ন জমার স্লিপ নিয়েছেন। কিন্তু আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিয়ে স্লিপ পেতে হলে দুই হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে।

বাড়ছে করমুক্ত আয়সীমা: আগামী অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বর্তমানে করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে সাড়ে তিন লাখ টাকা করা হতে পারে বলে জানা গেছে। করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ালে বিপুলসংখ্যক করদাতা করজাল থেকে বেরিয়ে যাবেন, আর সেই করদাতাদের করজালে ধরে রাখতে ওই বিকল্প চিন্তা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে নারী করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা আপাতত বাড়ছে না।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি পর্যায়ে বার্ষিক ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনো কর নেই। তবে ৩ লাখের বেশি থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে ৫ শতাংশ হারে কর রয়েছে। ১০ লাখের বেশি থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে ১০ শতাংশ, ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ, ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ এবং ৫০ লাখ টাকার বেশি আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ কর দিতে হয়। অন্যদিকে, নারী ও জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা। প্রতিবন্ধী করদাতাদের জন্য সাড়ে ৪ লাখ টাকা এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সীমা ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করেছিল সরকার।