বেঁচে থাকার আর্তনাদ-বুকফাটা চিৎকারেও মন গলেনি পাষণ্ডদের!
ভয়াবহ এই লোমহর্ষক ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে দশমিনা উপজেলার সাধারণ মানুষকে। এ ঘটনায় দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ।
প্রথম নিউজ, পটুয়াখালী: বেঁচে থাকার ও বুকফাটা চিৎকার করলেও কলেজছাত্রী হাফসা (২০)কে কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। মৃত্যুর সময় তার ফোনে রেকর্ডার চালু থাকায় আগুনে পুড়ে যাওয়ার সময় হাফসার বেঁচে থাকার আকুতি ও আর্তনাদের রেকর্ড শুনে হতবাক হয়ে পড়েছেন আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী। ভয়াবহ এই লোমহর্ষক ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে দশমিনা উপজেলার সাধারণ মানুষকে। এ ঘটনায় দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ। হাফসার ফোনের রেকর্ড ও আগুন দেয়া বিভিন্ন সরঞ্জাম গতকাল আলামত হিসেবে জব্দ করেছে পুলিশ। দশমিনা থানা ও স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ২১শে জানুয়ারি উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের খলিশাখালী গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহজাহান মৃধার ছোট মেয়ে ও আলীপুরা কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্রী হাফসা বেগম দশমিনা ইউনিয়নের কাটাখালী এলাকায় তার ভাই রিয়াজ মৃধার শশুরবাড়ি বেড়াতে আসে।
জ্বিনের আছর আছে অভিযোগে ভাবী আয়শা বেগম নিপা হাফসাকে স্থানীয় মনির হোসেন এর স্ত্রী জ্বিন তাড়ানো ফকির নুরজাহান বেগমের কাছে নিয়ে যায়। ফকির নুরজাহান হাফসাকে নিয়ে রাতে তার বাড়িতে আসতে বলেন। রাতে হাফসার ভাবী নিপা ও তার মা হাফসাকে নিয়ে ফকিরের বাড়িতে যায়। এ সময় ফকির নুরজাহান তাদের বাড়ির অদূরে একটি বিলে নিয়ে হাফসাকে মারধর করে গায়ে কেরসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়।
গায়ে কেরসিন ঢেলে দেয়ার সময় হাফসা তার মোবাইল ফোনে রেকর্ড চালু করে রাখে। আগুনে জ্বলে যাওয়ার সময় হাফসার প্রচণ্ড আর্তনাদ ও আকুতি মোবাইল ফোনে রেকর্ড হয়ে যায়। গায়ে আগুন জ্বলে থাকা অবস্থায় পাশের একটি বাড়িতে দৌড়ে গিয়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকে হাফসা। ওই বাড়িতে তখন বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। বিয়ে বাড়ির মানুষ হাফসাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেও তাদেরকে বাধা দেয় ফকির নুরজাহান ও তার সঙ্গীরা। হাফসার মেজো বোন মলিনা বেগমের স্বামী আলী হোসেন মৃধা বলেন, ওইদিন রাতে হাফসাকে গুরুতর আহত অবস্থায় দশমিনা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ২২শে জানুয়ারি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় হাফসার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ২৭শে জানুয়ারি রাতে তার মৃত্যু হয়।
হাফসার বড় ভাই রিয়াজ মৃধা বলেন, তার স্ত্রী আয়শা বেগম নিপার সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া বিবাদে জড়াতো হাফসা। সেই ক্ষোভ থেকে হাফসাকে হত্যার ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি। হাফসার মৃত্যুর ঘটনায় ফকির নুরজাহান ও পুত্রবধূ আয়শা বেগম নিপাসহ ৬ জনকে আসামি করে গত ২৯শে জানুয়ারি হাফসার মা লুৎফুননেছা বেগম দশমিনা থানায় মামলা দায়ের করে। এরই প্রেক্ষিতে পুলিশ আয়শা বেগম নিপা ও ফকির নুরজাহান বেগমের স্বামী মনির সরদারকে বুধবার গ্রেপ্তার করেছে। দশমিনা থানার ওসি মো. মেহেদী হাসান বলেন, মামলায় ৬ জনসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন আসামি রয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে, দু’জনকে আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: