পূর্বাচলে নতুন ব্রিজ, প্রতিমিটারে খরচ ৫৫ লাখ টাকা

 পূর্বাচলে নতুন ব্রিজ, প্রতিমিটারে খরচ ৫৫ লাখ টাকা

প্রথম নিউজ, ঢাকা : রাজধানীর পূর্বাচলে ৩০০ ফুট  সড়ক থেকে মাদানী এভিনিউ পর্যন্ত নতুন দুটি সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর অনুমোদনও দিয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় একটি ব্রিজ নির্মাণ হবে যার নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে প্রতিমিটারে (৩.২৮ ফুটে এক মিটার) ৫৫ লাখ টাকা। 

২৮৯ মিটার ব্রিজটি নির্মাণে মোট খরচ ধরা হয়েছে ১৫৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব কিছু হিসাব-নিকাশ করেই এই ব্যয় ধরা হয়েছে। 

ব্রিজ ছাড়াও এ প্রকল্পের আওতায় এক কিলোমিটার আইল্যান্ড-ড্রেন-ফুটপাত নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। মোট ৮.৫৩ কিলোমিটার আইল্যান্ড-ড্রেন-ফুটপাত নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। 

এ ছাড়া সাড়ে ১০ মিটার কালভার্ট নির্মাণের জন্য ব্যয় ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। কোটি টাকা খরচে কেনা হবে একটি জিপ গাড়ি, চার জনের ভ্রমণে ব্যয় হবে ১০ লাখ টাকা। ফিজিক্যাল ও প্রাইস কনটিনজেন্সিতে ১০ কোটি টাকা এবং পরামর্শকে যাবে এক কোটি টাকার বেশি। 

• গাড়ি নেই অথচ তেল-মবিলের খরচ ৮ কোটি!

মঙ্গলবার একনেক সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। একনেকের সারসংক্ষেপ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, ‘পূর্বাচল ৩০০ ফুট  সড়ক থেকে মাদানি এভিনিউ পর্যন্ত সংযোগকারী দুটি সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে পাঠানো হয়েছিল। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদিত এই প্রকল্পটি চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নের এই প্রকল্পটি ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ পৌরসভায় বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রকল্পের ডিপিপিতে দেখা গেছে, এই প্রকল্পের আওতায় পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়ক এবং মাদানী এভিনিউ’র সংযোগ সড়ক হিসেবে ট্রাফিক ডাইভার্সনের জন্য দু’টি বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা হবে। ঢাকা শহরের সাথে পার্শ্ববর্তী এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করার মাধ্যমে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। যার মাধ্যমে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা উল্লেখ রয়েছে। এই প্রকল্পের সড়ক বিভাজক ও ড্রেন কাম-ফুটপাতসহ ৮.৫৩ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন করা হবে। সেই সাথে সাথে ২৮৯ মিটার ব্রিজ এবং ১০.৫০ মিটার কালভার্ট নির্মাণই প্রকল্পের প্রধান কাজ।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) পরিকল্পনা, ডিজাইন ও গবেষণা ইউনিটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (গ্রেড-২) মো. আলি আখতার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে পূর্বাচলের ৩০০ ফিটের সঙ্গে মাদানি এভিনিউয়ের সংযোগ করা হবে। আসলে ডিপিপিতে মিটার উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে এগুলোর কোয়ালিটি খুব রিচ। রুরালের তুলনায় এই প্রকল্পের অধীনে আরও অনেক বেশি রিচ হবে। পূর্বাচলের রাস্তার তুলনায় এগুলোর খরচ বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক।  

• পাউবো প্রকল্পে ‘খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি,’ ৩৪ কোটির হিসাব না মিললেও ‘দায়মুক্ত’ তারা! 

ব্রিজ নির্মাণের ব্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডাবল লেনের ব্রিজ নির্মাণেই ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা প্রতিমিটার ব্যয় হয়। কিন্তু সড়ক যদি চার লেন বা ছয় লেন হয়, তাহলে কিন্তু এর ব্যয় দ্বিগুণ বা তিন গুণ হয়ে যায়। যদিও আমি সুস্পষ্টভাবে এটা এখনও জানি না। তবে এটুকু বলি এ কারণেই এর ব্যয় বাড়ে। কারণ, স্পেসিফিকেশন হাই থাকলে ব্যয় বাড়ে। রুরাল থেকে হাইওয়ের ব্যয় বেশি হয়।   
বাংলাদেশে প্রকল্প বাস্তবায়নের খরচ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি। এই ধরনের প্রকল্পে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন যতখানি হয়, সে তুলনায় এর সাথে যারা জড়িত থাকে তাদের একাংশের সম্পদ বিকাশ বা মুনাফার ওপর বেশি প্রাধান্য পায়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া বলেন, এই প্রকল্পটি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন কৌশল অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে নগর উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে প্রকল্পটি বিবেচনা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত সংযোগ সড়ক দু’টি পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়ক এবং মাদানী এভিনিউ সড়কের ট্রাফিক ডাইভার্সনের জন্য বিকল্প সড়ক হিসেবে কাজ করবে। ফলে ঢাকা শহরের সাথে পার্শ্ববর্তী এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সড়ক দুটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সব কিছু বিবেচনা করেই প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রকল্প বাস্তবায়নের খরচ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি। এই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় মূলত প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন যতখানি হয়, সে তুলনায় এর সাথে যারা জড়িত থাকে তাদের একাংশের সম্পদ বিকাশ বা মুনাফার ওপর বেশি প্রাধান্য পায়।’