নাসীরুদ্দীনের আপত্তিকর মন্তব্যে উত্তপ্ত কক্সবাজার এনসিপি’র মঞ্চ ভাঙচুর

নাসীরুদ্দীনের আপত্তিকর মন্তব্যে উত্তপ্ত কক্সবাজার এনসিপি’র মঞ্চ ভাঙচুর

প্রথম নিউজ, কক্সবাজার: এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর একটি বিতর্কিত বক্তব্যের জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কক্সবাজার। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে ইঙ্গিত করে ‘নব্য গডফাদার’ বলার পরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে কক্সবাজারে। প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিএনপি নেতারা। চকরিয়ায় এনসিপি নির্ধারিত পথসভা বিএনপি ও স্থানীয় জনতার বিক্ষোভের মুখে পণ্ড হয়ে যায়। দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের বহনকারী গাড়িবহর থামতেই উত্তেজিত জনতা গাড়ির ওপর স্থাপিত অস্থায়ী মঞ্চ ভেঙে ফেলেন। গতকাল বিকাল সোয়া ৪টার দিকে চকরিয়া উপজেলা সদরের জনতা মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। 

এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কক্সবাজার জেলার সীমানা পার করিয়ে দেয়া হয়েছে। চকরিয়ায় এই সহিংসতার সূত্রপাত হয় দুপুরে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে এনসিপি’র ‘জুলাই পদযাত্রা’ শেষে আয়োজিত জনসভায় দেয়া বক্তব্যকে ঘিরে। সমাবেশে এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে যেমন নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান ছিলেন, এখন শুনছি কক্সবাজারে নব্য গডফাদার শিলং থেকে এসেছেন। ঘের দখল, জায়গা-জমি দখল, চাঁদাবাজি করছেন। আবার নাকি সংস্কারও বোঝেন না। আমি নাম বলছি না। তবে কক্সবাজারের জনতা এসব সংস্কারবিরোধীকে রাজপথেই ঠেকিয়ে দেবে ইনশাআল্লাহ্‌।’ বিএনপি’র নেতাকর্মীদের দাবি, এই বক্তব্য সরাসরি বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কক্সবাজারের সন্তান সালাহউদ্দিন আহমদকে উদ্দেশ্য করে দেয়া হয়েছে। 

এই বক্তব্যের প্রতিবাদে শনিবার বিকাল থেকেই কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। দফায় দফায় মিছিল করে বিএনপি’র অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রতিবাদের এই দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক ছাড়াও মফস্বলের স্টেশনগুলোতেও মিছিল সমাবেশ হচ্ছে বলে জানা গেছে। চকরিয়ায় বিক্ষোভকারীরা এনসিপি’র পথসভা মঞ্চ ভেঙে দেয়। একইসঙ্গে শহরে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, সৃষ্টি হয় চরম উত্তেজনা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সেনাবাহিনীর তিনটি সাঁজোয়া যান তাদের চকরিয়া পার করে দেয়। চকরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। 

নতুন কোনো গডফাদারের আবির্ভাব হতে দেবো না: নাহিদ
বাংলাদেশে নতুন কোনো গডফাদারের আবির্ভাব হতে দেবো না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, গত সরকারের আমলে কক্সবাজার সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হয়ে গিয়েছিল। মাদকের অভয়ারণ্য হয়ে গিয়েছিল। নারায়ণগঞ্জে যেমন গডফাদার ছিল, কক্সবাজারেও গডফাদার ছিল। শেখ হাসিনা এক গডফাদার আর তার আন্ডারে ছোট ছোট গডফাদার পুরো বাংলাদেশ জুড়ে ছিল। আমরা সেই গডফাদারতন্ত্রের অবসান ঘটিয়েছি। আমরা আবার নতুন কোনো গডফাদারের আবির্ভাব হতে দেবো না। শনিবার দুপুর ২টার ?দিকে কক্সবাজার শহরে জুলাই পদযাত্রা শেষে পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে শহীদ দৌলত ময়দানে সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। কক্সবাজারের পর্যটন নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, পর্যটন শিল্পের নামে কক্সবাজারে লুটপাট আর উচ্ছেদ করেছে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ। আমরা পরিবেশবান্ধব পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে চাই। যেখানে কক্সবাজারের মানুষের হক এবং অধিকার নিশ্চিত হবে। রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশে একটি সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি আমাদের দরদ রয়েছে। তাদেরকে অধিকারহীন, রাষ্ট্রহীন করে রাখা হয়েছে। কিন্তু তার সমাধান এটা না যে, বছরের পর বছর বাংলাদেশ তাদের দায়িত্ব নেবে। রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নিতে গিয়ে আমাদের কক্সবাজারের মানুষের প্রতি বেইনসাফি করছি, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কক্সবাজারের মানুষের যাতে নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলার বিঘ্ন না ঘটে এসব বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো, ড. ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানাবো এবং পুরো বিশ্ব বিবেকের প্রতি আহ্বান জানাবো, আপনারা রোহিঙ্গা ইস্যু দ্রুত সমাধান করুন। রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে সম্মানের এবং অধিকারের সঙ্গে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করুন। এনসিপি’র দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ট্যাবলেট বদি উৎখাত হলেও অনেক ট্যাবলেট বদি রয়ে গেছে। এ সময় তিনি সবাইকে মাদক ও ইয়াবার বিরুদ্ধে লড়াই করার আহ্বান জানান।

এতে সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম সচিব এসএম সুজাউদ্দিন বক্তব্য দেন। ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র অংশ হিসেবে এনসিপি’র ১৯তম দিনের এ কর্মসূচি কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হয়। বেলা পৌনে ১টার দিকে কক্সবাজার শহরের বাস টার্মিনাল থেকে শুরু হয় জুলাই পদযাত্রা। পদযাত্রাটি কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দানে এসে শেষ হয়। এনসিপি’র এই পদযাত্রাকে ঘিরে জেলার এনসিপি নেতৃবৃন্দের মাঝে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয় এবং কক্সবাজারকে ব্যাপক নিরাপত্তার চাদরে ডেকে রাখা হয়।

পেকুয়ায় নাসীরুদ্দীনকে অবাঞ্চিত ঘোষণা
এদিকে পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, সালাহউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দিনের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যে পেকুয়ায় বিক্ষোভ হয়েছে। বিকাল ৫টার দিকে সালাহউদ্দিন আহমদের জন্মস্থান পেকুয়ায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল বের করে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে পেকুয়ায় অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন। বিক্ষোভ মিছিলে পেকুয়া উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি বাহাদুর শাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক জেড এম মোসলেম উদ্দীন, কৃষকদলের সভাপতি আবু ছিদ্দিক রনিসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।