নির্দিষ্ট স্টপেজ থাকলেও থামছে না গাড়ি, মহাসড়কে বাড়ছে যানজট

নির্দিষ্ট স্টপেজ থাকলেও থামছে না গাড়ি, মহাসড়কে বাড়ছে যানজট

প্রথম নিউজ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিভিন্ন রুটের পরিবহনের জন্য নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড থাকলেও থামানো হয় না। ফলে বেদখল হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। যাত্রীদের জন্য ছাউনি থাকলেও তা কাজে আসছে না। দূরপাল্লার বাস ও স্থানীয় রুটে চলাচলকারী ছোট গাড়ি নিজেদের ইচ্ছামতো থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করছে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগামী যানবাহনগুলো চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন সময় যানজটের সৃষ্টি হয়। আবার যত্রতত্র গাড়ি থামানোয় ঘটছে দুর্ঘটনাও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চারলেন প্রকল্পের কাজের সময় নকশা অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রতিটি বাজারের একপাশে যাত্রীবাহী যানবাহন থামানোর জন্য কিছু জায়গা প্রশস্ত করে স্ট্যান্ড তৈরি করে। পরে ওই স্ট্যান্ডের পাশে তৈরি করা হয় যাত্রী ছাউনি।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্মকর্তার মতে, বাজারের এক পাশে বাসস্ট্যান্ড ও যাত্রী ছাউনি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল মূলত দ্রুতগতির যানবাহন চলাচল যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়। স্ট্যান্ড থেকে যাত্রীরা যাতে নিরাপদে যানবাহনে ওঠানামা করতে পারে। এতে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও কমে যেত।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বড়দারোগার হাটে কোন যাত্রী ছাউনি তৈরি করা হয়নি। কিন্তু যাত্রী ছাউনি তৈরি করা না হলেও বাস স্ট্যান্ডের জন্য আলাদা জায়গা করা হয়। কিন্তু ওই জায়গাকে স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার না করে মহাসড়কের ওপর বাসের যাত্রী ওঠানামা করানো হয়। যানবাহনগুলোও ওই জায়গায় গাড়ি দাঁড় করায় না। মহাসড়কের ওপর যানবাহন দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামার ফলে দ্রুতগতি গাড়িগুলো গতি কমে অনেক সময় যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া মহসড়কের পশ্চিম পাশে আছে অটোরিকশা স্ট্যান্ড।

নিজামপুর কলেজ (সরকারহাট) এলাকায়ও মহাসড়কের ওপর যানবাহন দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করেন চালকরা। হাদি ফকিরহাট বাজারে যাত্রী ছাউনি ও নির্দিষ্ট বাসস্ট্যান্ড থাকলেও সেটি ব্যবহার হয় না। যাত্রী ছাউনি থেকে কমপক্ষে ৩০ গজ দূরে মহাসড়কের ওপর বড় গাড়ি ও ছোট গাড়ি দাঁড়া করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করতে দেখা গেছে। যাত্রী ছাউনির সমানে পথচারীরা মলমূত্র ত্যাগ করছে।

মিরসরাই পৌর সদরের যাত্রী ছাউনি থেকে প্রায় ৫০ গজ দূরে সড়কের ওপর প্রতিদিন কয়েকশ যাত্রী গাড়িতে ওঠানামা করছেন। যানবাহনের জন্য নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড ও যাত্রী ছাউনির সামনের অংশ ভ্যানগাড়ি, মাইক্রোবাস, নছিমন ও ভাসমান ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে। বারইয়ারহাট পৌর বাজারের যাত্রী ছাউনি পুরোটায় অস্থায়ী দোকানিরা দখল করে নিয়েছে। ওই ছাউনিতে কোন যাত্রী বসার বা অপেক্ষা করার জায়গা নেই। এছাড়া যাত্রীবাহী যানবাহনগুলোও যাত্রী ছাউনির কাছে দাঁড়ায় না।

মিরসরাই সদরে চট্টগ্রাম শহরে যেতে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করা যাত্রী ইকবাল হোসেন বলেন, যাত্রী ছাউনির কাছে নির্দিষ্ট বাসস্ট্যান্ড সাইনবোর্ড দেওয়া হলেও ব্যাবহারের কোনো উদ্যোগ নেই। গাড়িগুলো সেখানে দাঁড়ায় না। গাড়ি দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে যাত্রীরাই সেখানে অপেক্ষা করতেন। এতে গাড়ি ওঠানাম অনেকটা নিরাপদ হতো।

বারইয়ারহাট-দারোগারহাট লাইনের সেইফ লাইন পরিবহনের চালক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, বাজারগুলোতে নির্দিষ্ট স্টপেজ করা থাকলেও যাত্রীরা তাদের সুবিধা মত স্থানে উঠতে নামতে চান। ফলে যাত্রীরা যেখানে থাকেন সেখানেই গাড়ি দাঁড় করানো হয়। সব যাত্রী নির্দিষ্ট স্টপেজে অপেক্ষা করলে চালকরা বাধ্য হয়ে ওই জায়গায় গাড়ি থামাতে বাধ্য হবেন।

ওই চালক স্বীকার করেন মহাসড়কের ওপর যাত্রী ওঠানামা করাতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে। জোরারগঞ্জ চৌধুরীর হাট হাইওয়ে থানা পুলিশের ইনচার্জ সোহেল সরকার বলেন, চালকরা যখন যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাত্রী ওঠানাম করাচ্ছে। নির্দিষ্ট স্টপেজ ব্যবহার না করায় দুর্ঘটনা ঘটছে। দ্রুতগতির গাড়ির গতি কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাধ্য করে কাউকে স্টপেজ ব্যবহার করানো যায় না। সড়কে নির্ধারিত নির্দিষ্ট বাস স্ট্যান্ড, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে আমাদের সচেতন হতে হবে।