দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর হচ্ছে বিএনপি
কোন্দল, সিনিয়র নেতাদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কোনো তথ্য কিংবা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার না করার নির্দেশ দিবে বিএনপি।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর হচ্ছে বিএনপি। দলীয় কোন্দল নিরসন, নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং, বিভাজন থেকে সরে আসতে বিএনপি’র এই কঠোরতা। ইতিমধ্যে শীর্ষ পর্যায়ে এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনে লাগাম টেনে ধরতে চায় দলটি। একই সঙ্গে নেতাকর্মীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে চান হাইকমান্ড। আর এজন্যই কোন্দল, সিনিয়র নেতাদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কোনো তথ্য কিংবা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার না করার নির্দেশ দিবে বিএনপি। শিগগিরই এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে দলটির দপ্তর বিভাগ। বিএনপি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের মতে, উল্লিখিত কারণে চলমান আন্দোলনে প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া যুগপৎ আন্দোলনেও সাফল্য পেতে দলে নিয়ম শৃঙ্খলা প্রয়োজন বলে মনে করেন শীর্ষ নেতারা। সম্প্রতি বিভিন্ন কর্মসূচিতে দলীয় কোন্দলের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ ছাড়া কমিটি গঠন নিয়ে অঙ্গ সংগঠনের একটি অংশ বিদ্রোহ করে আসছেন। তারা দলের বিপক্ষে প্রচার-প্রচারণাসহ বিক্ষোভ-মিছিল ও প্রতিবাদ করছেন। এতে দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মনে করেন শীর্ষ নেতারা। গত মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে এসব বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। পরে নেতারা দল ও নেতাকর্মীদের লাগাম টেনে ধরার বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
সূত্র মতে, বিএনপি’র অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন্দল বেড়েছে। বেড়েছে বিশৃঙ্খলা। এ ছাড়া গ্রুপিংয়ের কারণে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা পদবঞ্চিত হচ্ছেন। এতে নেতাকর্মীদের একটি অংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। নানা রাগ-অভিমানের কারণে আন্দোলন কর্মসূচিতেও অংশ নেন না তারা। পদবঞ্চিতদেরও সমন্বয়ের মাধ্যমে দলে ভেড়াতে চান সিনিয়র নেতারা।
বিএনপি’র নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় কোন্দল বেড়েছে এটি অস্বীকারের সুযোগ নেই। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এই বিষয়ে অবগত। সামনে সরকারবিরোধী বড় আন্দোলন আসছে, এই মুহূর্তে দলীয় কোন্দল দলের জন্য অশুভ। তাই বিএনপিসহ দলের সকল অঙ্গসংগঠন ও সহযোগী সংগঠনের কোন্দল নিরসন করতে দলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ নিয়েছেন। খুব অল্প সময়েই এসব সমাধানে কাজ করবে বিএনপি। তিনি জানান, যারা পদবঞ্চিত হয়ে দলের বিরুদ্ধে কাজ করছেন কিংবা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া যেসব কমিটিতে বিভাজন আছে কিংবা নেতাকর্মীরা বঞ্চিত আছেন তাদের বিষয়টি সমাধান করা হবে। এজন্য একটি কমিটি করা হবে। কমিটি ক্রমান্বয়ে সবাইকে দলে স্থান দেয়ার কাজ করবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ যাতে দলের কিংবা সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার না চালায় তার জন্য নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে একটি সতর্কতা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। বিএনপি’র একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি’র এক দফা আন্দোলন ঘোষণার আগেই দলকে সুসংগঠিত করতে কাজ করছেন নীতিনির্ধারকরা। এজন্য নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে। প্রথমবারের মতো সবাইকে সতর্ক করা হবে। তারপরও কেউ দলীয় শৃঙ্খলা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে দল কঠোর ব্যবস্থা নিবে।
বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, নীতিনির্ধারণী ফোরামের সিদ্ধান্তের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আমরা দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছি। কেউ শৃঙ্খলা নষ্ট করলে তার বিরুদ্ধে দল কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আগামীতেও নেয়া হবে। বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শৃঙ্খলা ফেরাতে দলের সিনিয়র নেতারা সক্রিয়। ইতিমধ্যে আমরা গাজীপুর ও নরসিংদী জেলার কোন্দল নিরসনে কাজ করেছি। গ্রুপিং রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে আগামীর আন্দোলনে আমরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করবো।