ডেথ রেফারেন্স: বেঞ্চ বাড়ানোর চেয়ে পেপারবুক তৈরিতে জোর দিতে হবে

বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ১৭ আসামি খালাস চেয়ে আপিল করেছেন

ডেথ রেফারেন্স: বেঞ্চ বাড়ানোর চেয়ে পেপারবুক তৈরিতে জোর দিতে হবে
ফাইল ফটো

প্রথম নিউজ, ঢাকা: করোনাভাইরাস (কোভিড ১৯) উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধেও দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে (আপিল ও হাইকোর্ট) বিভিন্ন মামলার শুনানি হয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হওয়া মামলাগুলো শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে চাঞ্চল্যকর নুসরাত হত্যা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলা, আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, রিফাত শরীফ হত্যা মামলা ও হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা মামলা উল্লেখযোগ্য।

এছাড়াও মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পৌঁছেছে। রয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স ও মামলায় হাইকোর্টে পাঠানো নথি। এসব গুরুত্বপূর্ণ মামলাসহ আরও বেশ কিছু মামলায় দেশের উচ্চ আদালতে আসা আসামির মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স ও মামলার নথি এসেছে হাইকোর্টে। কিন্তু বর্তমানে ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্যে একটিমাত্র দ্বৈত বেঞ্চ এবং জেল আপিল শুনানির জন্যে অপর একটি বেঞ্চ রয়েছে।

ফলে মামলায় পেপারবুক প্রস্তুত করে শুনানির জন্যে সময়ক্ষেপণ এবং ডেথ রেফারেন্স কোর্টের সংখ্যা কম হওয়ায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের করা আপিল ও জেল আপিল মামলাগুলো শুনানি ঠিকমতো হচ্ছে না। করোনা পূর্ববর্তী সময়ে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স কোর্ট বেঞ্চ ছিল চার-পাঁচটি। নতুন করে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার ফলে বেঞ্চ গঠন করার সময় মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স কমানো হয়। ফলে এখন হাইকোর্টে মাত্র একটি ডেথ রেফারেন্স বেঞ্চ রয়েছে। হাইকোর্টে কমপক্ষে দুই থেকে তিনটি কোর্ট বাড়ানো দরকার বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, সামনে হাইকোর্টে আরও বিচারক নিয়োগ দেওয়া হবে। আশা করা যাচ্ছে নিয়োগের পর ডেথ রেফারেন্স কোর্ট আরও বাড়ানো হতে পারে।

তবে কোর্ট বাড়ানোর চেয়ে ডেথ রেফারেন্স মামলায় পেপারবুক তৈরির কাজকে আরও গুরুত্ব দেওয়া দরকার বলে মনে করেন আইনজীবীরা। সম্ভব হলে সুপ্রিম কোর্টে নিজস্ব প্রেস থাকা দরকার বলেও মনে করেন তারা। তাহলে পেপারবুক তৈরিতে সময়ক্ষেপণ কমবে এবং ডেথ রেফারেন্স মামলার প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হবে।

গত ১৯ জানুয়ারি থেকে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে (আপিল ও হাইকোর্ট) বিচারিক কাজ চলে ভার্চুয়ালি। পরে ৬ মার্চ থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমসহ নিয়মিত কার্যক্রমে ফিরেছে আদালত। সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের কার্যক্রমও শুরু হচ্ছে পুরোদমে।

আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে আটকে আছে অনেক আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলার চূড়ান্ত বিচার কার্যক্রম। যেহেতু বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে, তাই কোর্টও ভার্চুয়াল থেকে শারীরিক উপস্থিতিতে চালু করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এখন গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর সব মামলার শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনার বিধিনিষেধের কারণে গত দুই বছর (২০২০ এবং ২০২১ সালে) দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রমও নিয়মিত চলেনি। ফলে বন্ধ ছিল গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত মামলার শুনানি। যদিও নিয়মিত আদালত না খুললেও হাইকোর্ট বিভাগের ৫৩টি বেঞ্চে বিচার কাজ অব্যাহতভাবে চলে আসছিল। ফলে এখন থেকে এসব মামলার শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ও আলেচিতসহ সব ডেথ রেফারেন্স মামলা শুনানিতে একটি কোর্টই শুধু নয়, পেপাবুক তৈরি ও অন্যান্য কারণকেও চিহ্নিত করেছেন আইনজীবীরা।

হাইকোর্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৭২টি, ২০১৬ সালের ১৬১টি, ২০১৭ সালের ১৭১টি, ২০১৮ সালের ১৫৪টি, ২০১৯ সালের ১৬৪টি ও ২০২০ সালের ৬৪টি ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য হাইকোর্টে আছে। এ ছাড়া ২০২১ সালের এবং সর্বশেষ ২০২২ সালেও মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স ও মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে। এসব গুরুত্বপূর্ণ মামলাসহ আরও বেশ কিছু মামলায় আসামির মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স ও মামলার নথি হাইকোর্টে এসেছে।

এর মধ্যে ২০১৫ সালের ৩৭টিসহ ২০১৬ সালের কয়েকটি ডেথ রেফারেন্স বর্তমানে শুনানির জন্য বিভিন্ন বেঞ্চে রয়েছে। অন্যদিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাঞ্চল্যকর নুসরাত হত্যা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলা, আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, রিফাত শরীফ হত্যা মামলা ও হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা মামলা রয়েছে। এর মধ্যে অনেক মামলায় পেপারবুক তৈরির কাজ শেষ করে শুনানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া আপিল বিভাগে আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর নারায়ণগঞ্জের সাত খুন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় পিলখানায় সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলা, পুলিশ দম্পতি হত্যার ঘটনায় তাদের কন্যা ঐশীর আপিল আবেদন, পুরান ঢাকায় বিশ্বজিৎ হত্যার আপিল ও আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার আপিল শুনানির অপেক্ষায় আছে।

আবরার হত্যা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স ও মামলার নথি গত ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে। এই নথি হাইকোর্টে পাঠান ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। মূলত বিচারিক আদালতে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকর করতে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ‘ডেথ রেফারেন্স’ হিসেবে পরিচিত। তবে দণ্ডিতরা বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জেল আপিল ও আপিলের সুযোগ পান। সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কোনো ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হলে রেজিস্ট্রার কার্যালয় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, বহিষ্কৃত তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার ওরফে অপু, বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, বহিষ্কৃত উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, বহিষ্কৃত ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, বহিষ্কৃত কর্মী মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মুজাহিদুর রহমান, মনিরুজ্জামান মনির, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, এ এস এম নাজমুস সাদাত, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, এস এম মাহমুদ সেতু, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ। এদের মধ্যে তিন আসামি জিসান, তানিম ও রাফিদ পলাতক।

যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা, বহিষ্কৃত গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, বহিষ্কৃত আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা ও আকাশ হোসেন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি এদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে আবরার ফাহাদকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। পরে রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়। তিনি বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। থাকতেন শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে।

ওই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান। অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে মামলায় এজাহারভুক্ত ছিলেন ১৯ জন এবং তদন্তকালে যুক্ত হন আরও ছয়জন। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন ও এজাহার-বহির্ভূত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারদের মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আটজন।

তবে শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এদের মধ্যে প্রথম দুজন এজাহারভুক্ত ও শেষেরজন এজাহারবহির্ভূত আসামি।

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে হত্যার দায়ে বিচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের আবেদনসহ রায় ও মামলার নথি হাইকোর্টে পৌঁছেছে। কক্সবাজারের বিচারিক আদালত থেকে এ ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়। ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছার পর সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, বিচারিক আদালত থেকে মামলার রায়সহ নথিপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। এখন তা সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হবে। নিয়ম অনুসারে পরবর্তী প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। অনুমোদনের জন্য মামলার নথি ‘ডেথ রেফারেন্স’ আকারে হাইকোর্টে পাঠাতে হয়। সিনহা হত্যার দায়ে গত ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকতকে ফাঁসির রায় দেন। আর হত্যায় সহযোগিতা ও ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্য এবং পুলিশের তিন সোর্সকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। মামলার ১৫ আসামির মধ্যে বাকি চার পুলিশ সদস্য ও তিন এপিবিএন সদস্যকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। ডেথ রেফারেন্সের সঙ্গে ৩০০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি পাঠানো হয়েছে।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফের বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনার পাঁচদিন পর ওই বছরের ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে তৎকালীন ইনচার্জ লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি এবং টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ২ নম্বর আসামি করে ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে র‌্যাব। ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে র‌্যাব। চার্জশিটে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

ডেথ রেফারেন্স কী: আইনজ্ঞরা জানান, ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালত যখন আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেন তখন ওই দণ্ড কার্যকরের জন্য হাইকোর্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক মামলার সব নথি হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন। যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। ওই নথি আসার পর হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে। পেপারবুক তৈরি হলে মামলাটি হাইকোর্টে শুনানির জন্য ‘তৈরি’ মর্মে ধরে নেওয়া হয়। পেপারবুক প্রস্তুত হওয়ার পর ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিরা যদি আপিল করে থাকেন তা শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন।

বেঞ্চ বাড়ানোর পাশাপাশি জোর দিতে হবে পেপারবুক তৈরিতে: সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান জাগো নিউজকে বলেন, যেহেতু হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স কোর্ট সংখ্যা কম, এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি আরও যেন অন্তত দুটি কোর্ট দেওয়া হয়। তাহলে যেসব মামলা আছে সেগুলো দ্রুত শুনানি করা সম্ভব হবে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য মামলার প্রস্তুতি নিতে পেপারবুক তৈরি করতে হয়। আমাদের পেপারবুক তৈরির কাজ গর্ভমেন্ট প্রেসে হয়। যেহেতু সরকারের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি কাজ থাকে, সেখানে গর্ভমেন্ট প্রেসে পেপার তৈরির কাজটি খুব ধীরে হয়। কিন্তু যত মৃত্যুদণ্ডের বিষয় পেন্ডিং আছে সেই পেপারবুক তো তৈরি হতে হবে। তবে সেটাতো হচ্ছে না। যার কারণে মামলা রেডি হচ্ছে না। আর মামলা রেডি না হলে কোর্ট বাড়ালেও কোনো লাভ নাই। তিনি বলেন, তার পরেও যেসব মামলা রেডি হয়েছে, আলোচিত মামলাগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে হয়তো একটু বেশি জোর দিয়ে পেপারবুক তৈরি হয়েছে। সেই মামলাগুলো শুনানির জন্যও একাধিক কোর্ট থাকতেই হবে। তবে ডেথ রেফারেন্সের বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। একজন মানুষের জীবন-মৃত্যুর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে শুনানি হাইকোর্টের নিয়মিত বেঞ্চে হওয়াটা সমীচীন বলে আমি মনে করি।

মনজিল মোরসেদ বলেন, আমি মনে করি এতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভার্চুয়াল কোর্টে শুনানি হওয়ার সুযোগ থাকেন না। এ জন্যে এটা রেগুলার (সরাসরি উপস্থিতিতে) কোর্টে হওয়া উচিত। অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসএম মনির বলেন, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এখনতো বিচারকের সংখ্যা কম আছে। হয়তো মার্চেই বিচারক নিয়োগ হতে পারে। তখন ডেথ রেফারেন্স বেঞ্চ বাড়ানো হতে পারে। যদিও এসব মামলায় বেঞ্চ বাড়ানো-না বাড়ানোর কোনো বিষয় না। তারপরও এসব মামলায় পেপারবুক তৈরি হবে এবং শুনানি হবে। আশা করি বিচারক নিয়োগ পেলে এর সামাধান হবে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom