জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে খালেদা জিয়া গোটা জাতি উদ্বিগ্ন: রিজভী
শুক্রবার বিকেলে নয়া পল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে বিএনপি'র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। জরুরি ভিত্তিতে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো প্রয়োজন। অথচ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছেন বাংলাদেশে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হচ্ছে। কোন প্রিজনারকে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু কারাবন্দী অবস্থায় বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ বাংলাদেশসহ বিশ্বে অজস্র নজির রয়েছে।বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও কারাবন্দী থাকা অবস্থায় বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে নয়া পল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে বিএনপি'র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির মুখপাত্র বলেন,আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে চাই আমার নামে আপনি মানহানি মামলা দিলে দিতে পারেন আপনার লেখাপড়ায় ঘাটতি আছে। আপনার জানাশোনার ঘাটতি আছে। যে নেত্রী আপনাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানিয়েছেন। আপনি যে অবৈধ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আপনার সেই সরকার প্রধান অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০০৭ সালের জুন মাসে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে কারাবন্দী থাকা অবস্থায় কারাগার থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছিল। যদিও তখনকার তত্ত্বাবধায় সরকার বলেছিল শেখ হাসিনার কানের যে সমস্যা এটার চিকিৎসা বাংলাদেশের হতে পারে। কিন্তু শেখ হাসিনার চিকিৎসকরা যখন বললেন তার উন্নত চিকিৎসা দরকার তখন তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হলো। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়াকে পাঠানো হচ্ছে না কেন? তার চিকিৎসকরা তো প্রতিদিনই বলছে বেগম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ তার চোখে সমস্যা লিভারে সমস্যা, হার্টে সমস্যা, ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা। সরকারের নিপীড়ন নির্যাতনের কারণেই বেগম খালেদা জিয়ার উপর এতগুলো অসুখ আক্রমণ করেছে। তিনি এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে গোটা জাতি উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় তার কেন উন্নত চিকিৎসা হবে না পররাষ্ট্রমন্ত্রী?
রিজভী বলেন,রাশিয়ার বিরোধী নেতা এলেক্সিস লাভলিন সেখানকার একদলীয় কর্তৃত্ব বাদী সরকার তাকে কারাদণ্ড দিয়েছিল তিনি সাইবেরিয়া থেকে মস্কো আসার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে তারকা কান্ড স্থগিত রেখে তাকে বার্লিং এ পাঠানো হলো উন্নত চিকিৎসার জন্য এটা কি আপনি জানেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী? আজ তো সেই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছে তাকে জিজ্ঞাসা করুন কর্তৃত্ববাদী দেশে এই ধরনের মানবিক আচরণ করা হয়।
বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন,'চীনের নোবেল বিজয়ী লুই জিয়াও বু ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে কারাগারে মারা যান। তার স্ত্রী লি জিয়াওকেও কারারুদ্ধ করা হয়েছিল কিন্তু যখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন তাকে কিন্তু কানাডা পাঠানো হয়েছিল উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আপনি কি তা জানেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী? আপনি জানেন না। আপনি কি জানেন সৌদি আরবে বাদশাহী হুকুম চলে সেখানে ভিন্ন মতলম্বী একজন লেখক ও ব্লগার বাদাও গৃহবন্দী থাকা অবস্থায়অসুস্থ হলে তাকে স্ত্রী সন্তানসহ উন্নত চিকিৎসার জন্য বাহিরে পাঠানো হয়েছিল।
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,'আপনাদের এই মানবিক গুণাবলী থাকবে কেন? যে সরকার খুন গুম করে, বিরোধীদলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য একের পর এক নীল নকশা করে, ধ্বংসযজ্ঞা অবলম্বন করে তারপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আপনি তো শুধু চাকরি রক্ষার জন্য। শেখ হাসিনার মন মত কথা বলেন। কোন মানবিক, মানবতা আপনার মধ্যে নেই।
দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলের কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন,'আপনি জানেন না বিএনপি কতটা মানবিক। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন আ স ম আব্দুর রব তার উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে পাঠানো হয়েছিল। শুধু তাই নয় তাকে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর আগে তার গ্রামের বাড়িতে ঘুরিয়ে আনা হয়েছিল। এটা বিএনপির ইতিহাস মানবতার ইতিহাস। গণতন্ত্রের ইতিহাস। আর যারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল করে ১৪ ও ১৮ নির্বাচন রাতে করে। দিনের বেলা নির্বাচন করতে সাহস পায় না। তারাই তো অমানবিক জনগণের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী কে তিলে তিলে ধ্বংস করার জন্য উন্নত চিকিৎসা হতে দেয় না কারাগারে আটক রাখে।
রিজভী বলেন, এদেশের জনগণ, বিএনপির নেতাকর্মী সবাই উদ্বিগ্ন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করছেন নিশ্চয়ই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থ হবেন। আমরা কার কাছে দাবি জানাবো যারা মিথ্যা দিয়ে, অসত্য দিয়ে দেশনেত্রীকে আটক করেছে তাদের কাছে চাইবো? উপরে আল্লাহ আছে, নিচে জনগণ। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জনগণের নেত্রী জনগনই রাস্তায় নামছে তার জন্য।
রিজভী বলেন, 'আমরা তারুণ্যের সমাবেশ দেখেছি। এই তারুণ্য সমাবেশে যত তরুন দেখেছি আমার মনে হয় বাংলাদেশে আর কোন তরুণ ছাত্রলীগ যুবলীগ করেনা। হয় সন্ত্রাসী, না হয় বকাটে এরাই ছাত্রলীগ যুবলীগ করে। আর সমস্ত শানিত চেতনার তরুণরা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও যুবদল স্বেচ্ছাসেবক দল করে এটা আমাদের বিশ্বাস।
রিজভী আরও বলেন,'আপনাদের আন্দোলনের ফসল যারা তারা দেশনায়ক তারেক রহমানের উপর কত নিপীড়ন নির্যাতন করেছে। সে যাতে দেশে ফিরে আসতে না পারে এইজন্য একের পর এক সাজা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আপনাদের এই সাজা এই নিপীড়ন নির্যাতনের শৃংখল ভাঙবেই এই তরুণরা।
যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যুবসমাজ মাঠে আছে আজ না কাল এ সরকারের পতন ঘটিয়ে ছাড়ব। তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে বিদেশে পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার দাবি জানান।
যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের পরিচালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি মামুন হাসান, সহ সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন প্রমুখ। পরে বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।