চকরিয়ায় ও নাইক্ষ্যংছড়িতে ২ দিনে ২৩০ গরু আটক

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পথ দিয়ে অবৈধভাবে নিয়ে আসা গরু-মহিষের চালানে নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় নতুন পথে দেশে নিয়ে আসছে পাচারকারীরা।

চকরিয়ায় ও নাইক্ষ্যংছড়িতে ২ দিনে ২৩০ গরু আটক
চকরিয়ায় ও নাইক্ষ্যংছড়িতে ২ দিনে ২৩০ গরু আটক

প্রথম নিউজ, কক্সবাজার: বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পথ দিয়ে অবৈধভাবে নিয়ে আসা গরু-মহিষের চালানে নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় নতুন পথে দেশে নিয়ে আসছে পাচারকারীরা। এতে করে ক্ষতিতে পড়ছেন দেশীয় খামারি ও উদ্যোক্তারা। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিনে প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের ২৩০টি গরু ও দুটি ট্রাক আটক করছে নাইক্ষ্যংছড়ির ১১ ব্যাটালিয়ানের বিজিবির সদস্যরা। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাচারকারীরা বার বার ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় চক্রের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে বান্দরবান পার্বত্য জেলার আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার অরক্ষিত সীমান্ত পথ দিয়ে অবৈধভাবে গরু-মহিষ নিয়ে আসছে পাচারকারীরা। এতে দেশীয় খামারিরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। ব্যাংক ঋণসহ পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছে তারা।

গত ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বান্দরবান জেলার আলীকদম ৫৭ বিজিবি’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো: শহীদুল ইসলাম বলেন, চোরাচালান নির্মূলে ব্যাটালিয়ন কর্তৃক নিয়মিত টাস্কফোর্স ও যৌথ অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। নিয়মিত অভিযানে গত ৬ মাসে আট কোটি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ৮০৭টি গরু-মহিষ আটক করা হয়েছে। আটককৃত গরু মহিষ নিলামে বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ছয় কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার ৪৪২ টাকা।

তিনি জানান, এ ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবধি তিন কোটি ছয় লাখ ৬২ হাজার ৫৯০ টাকার অবৈধ কাঠ জব্দ করা হয়েছে। অবৈধ গরু আটকের বিষয়ে এ পর্যন্ত ২৬টি মামলা হয়েছে। তন্মধ্যে দুটি মামলা থানায় এবং ২৪টি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দু’জন আসামিকে গ্রেফতার করে থানায় সোপার্দ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বিজিবিরি অধিনায়ক বলেন, সম্প্রতি আলীকদম উপজেলার মধ্য দিয়ে মিয়ানমার থেকে গবাদি পশু চোরাচালান অত্যাধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। চোরাকারবারিরা পাহাড়ি গিরিপথ ও নদীপথ ব্যবহার করে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে গবাদিপশু নিয়ে আসেছে। তারা এসব পশু আলীকদম-চকরিয়া, লামা-ঈদগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, গবাদিপশুর আড়ালে এ চক্রের সদস্যরা মাদকদ্রব্য বিশেষ করে ইয়াবা পাচার করে আসছে। এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত দুই মাদক পাচাকারীকে আটকও করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আলীকদম উপজেলার দুর্গম সীমান্ত এলাকা হয়ে পোয়ামুহুরী ও কুরুকপাতা এলাকার বিভিন্ন গিরিপথ দিয়ে চোরাকারবারিরা গবাদিপশু নিয়ে আসছে। চোরাচালান নির্মূলে ‘ক্রিলাই পাড়া অস্থায়ী যৌথ চেকপোস্ট’ স্থাপন করে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু করেছে বিজিবি।

খামারিদের অভিযোগ, চোরাচালান চক্র এসবের মাধ্যমে শুধুমাত্র এলাকার ভারসাম্য নষ্ট করচ্ছে তা নয়। তারা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকেও ধ্বংস করে দিচ্ছে। এর ফলে সরকার একদিকে যেমন কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, একইসাথে দেশীয় খামার শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। খামারিরা বলছেন, চোরাচালানকৃত এসব গরু-মহিষের বেশিরভাগ ক্ষুরারোগসহ বিভিন্ন রোগাক্রান্ত। যার ফলে এসব গরু দেশীয় বাজারে প্রবেশ করায় খামারসহ অন্য গবাদিপশুর মাঝে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিনে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়ন বিজিবি'র সদস্যারা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালীর পাহাড়ি পথ দিয়ে পাচারকালে প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের ২৩০টি গরু ও দুটি ট্রাক আটক করছে নাইক্ষ্যংছড়ির ১১ ব্যাটালিয়ানের বিজিবির সদস্যরা। ভোরে কক্সবাজারে চকরিয়ার ডুলাহাজারা রংমহল এলাকা থেকে এসব আটক করা হয়। এ সময় গভীর জঙ্গলে বিভিন্ন স্হানে অবৈধভাবে পাচার হয়ে আসা একাধিক চক্রের শত শত গরু বিভিন্ন স্থানে ছিল বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয় খামারিদের অভিযোগ, অবৈধভাবে নিয়ে আসা গরু-মহিষের বেচাকেনার জন্য চকরিয়া উপজেলার বাসস্ট্যান্ড, হাঁসের দীঘি, ডুলাহাজারা ও ঈদগাঁও উপজেলার বিভিন্ন স্হানে নতুন নতুন বাজার বসছে। এক শ্রেণির প্রভাবশালী পাচারকারী চক্র বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সহায়তায় এসব গরু-মহিষ বিক্রি করছেন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom