তদন্ত চলাকালীন টিউলিপ সিদ্দিকের মন্ত্রীত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত

দ্য টাইমস এর সম্পাদকীয়

তদন্ত চলাকালীন টিউলিপ সিদ্দিকের মন্ত্রীত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: নগর মন্ত্রী হওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির প্রথম পছন্দ ছিলেন না টিউলিপ সিদ্দিক। টিউলিপের রাজনৈতিক বুদ্ধি বা যোগ্যতা  বিচার না করেই স্যার কিয়ের স্টারমার উত্তর লন্ডনের প্রতিবেশীকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে রেকর্ড করেছেন। হ্যাম্পস্টেড এবং হাইগেটের এমপি টিউলিপ  যুক্তরাজ্যের মানুষের কাছে আর্থিক পরিষেবা পৌঁছে দেবার ক্ষেত্রে যথসামান্য আগ্রহই দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ। টিউলিপ শহরের দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব সহ কোষাগারের অর্থনৈতিক সচিব হওয়ার জন্য কেন যোগ্যতম প্রার্থী নয়, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে সেই বিষয়টি আরো প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। গত বছর ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের কর্তৃত্ববাদী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টিউলিপের  আর্থিক খাতের সম্পৃক্ততার নানা অভিযোগ রয়েছে।

টিউলিপ শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। তদন্তে  তার ফ্ল্যাট এবং হাসিনার সমর্থকদের সাথে তার সংযোগের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে। আগস্টে তার ফ্ল্যাটের ভাড়া থেকে আয় সম্পর্কে সংসদীয় কমিটি  তদন্ত শুরু করে। টিউলিপ নিজে সেইসময় প্রশাসনিক তদারকির জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন। তখন জানা যায়, হাসিনার রাজনৈতিক মিত্রের মালিকানাধীন ২ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি বাড়িতে চলে যাওয়ার পর মন্ত্রী তার সম্পত্তি থেকে ভাড়া সংগ্রহ করছিলেন। এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, সিদ্দিক তার পরিবারকে উপহার দেওয়া আরও দুটি সম্পত্তিতে বাস করতেন, যা তাকে বিনা অর্থব্যয়ে উপহার দিয়েছিলেন হাসিনাঘনিষ্ঠ এক আবাসন ব্যবসায়ী।  হাসিনার আরেক রাজনৈতিক মিত্র টিউলিপের বোনকে হ্যাম্পস্টেডে একটি  ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছিলেন সেখানেও মন্ত্রী মাঝেসাঝে থাকতেন। যদিও আওয়ামী লীগের সাথে কোনো সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন টিউলিপ।

একইসঙ্গে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে সিদ্দিকের নাম এসেছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে তার পরিবার অবকাঠামো প্রকল্প থেকে ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ডের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। রাশিয়ার অর্থায়নে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বিশেষভাবে তদন্তের আওতায় রয়েছে, সেখানে হাসিনার  আর্থিক সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ২০১৩  সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে এই প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে টিউলিপকে দেখা গিয়েছিলো। কমিশন সিদ্দিকসহ পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ চেয়েছে। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা এই দাবিগুলিকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে বর্ণনা করেছেন। অভিযোগ, হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা সিদ্দিককে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে। অর্থ আত্মসাৎ, বিরোধীদের দমন-পীড়ন এবং নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হাসিনার রেকর্ড দেখে টিউলিপকে বিচার করা উচিত নয়। কিন্তু মন্ত্রী তার সমর্থকদের প্রভাব উপেক্ষা করতে পারেননি। 

ফলে সিদ্দিক দেশে-বিদেশে নৈতিক প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। টিউলিপ সিদ্দিকের লন্ডনের ফ্ল্যাট নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর লেবার নেতা স্যার কিয়ার স্টারমারের নৈতিক মানদণ্ড বিষয়ক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে এ বিষয়ে তদন্ত চালানোর দাবি জানিয়েছেন টিউলিপ । জুলাই মাসে মন্ত্রী পদে নিয়োগের সময় সিদ্দিক তার পরিবারের আর্থিক স্বার্থ এবং রাজনৈতিক যোগসূত্রের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ অফিসে সবটা জানিয়েছিলেন কিনা তা তদন্ত করে দেখা  হবে। এই সমস্ত বিতর্ক সিদ্দিককে আবিষ্ট  করে রেখেছে, তিনি তার মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। একজন দুর্নীতিদমন মন্ত্রীকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা তার যোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে। তিনি চীনে আসন্ন বাণিজ্য মিশনে যোগ দেবেন না। তিনি মিডিয়ার সামনেও আসতে  পারছেন না , কারণ  আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে তাকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে।

তদন্ত চলাকালীন সিদ্দিকের মন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যদি তিনি স্বচ্ছ থাকেন তার সরকারে ফেরার পথ প্রশস্ত হবে। আর যদি অভিযোগ ওঠার পরও নিজ পদে বহাল থাকেন তাহলে অস্বস্তির মুখে পড়বেন স্যার কিয়ের স্টারমার। প্রধানমন্ত্রীর কাছে টিউলিপের স্থলাভিষিক্ত করার জন্য কার্যকর বিকল্প রয়েছে, যেমন এমা রেনল্ডস, এই  সহকারী ট্রেজারি মন্ত্রী নিজ  শহরকে  ভালো করে চেনেন।  তাই এই টালমাটাল পরিস্থিতির সময়ে এমার কথাও প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্ব সহকারে ভাবা উচিত।