ঘুস চাওয়ায় শেরপুর থানার এসআই জাহাঙ্গীর ক্লোজড

ঘুস চাওয়ায় শেরপুর থানার এসআই জাহাঙ্গীর ক্লোজড

প্রথম নিউজ, বগুড়া: বগুড়ার শেরপুরে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নভাবে ঘুস ও অনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে না পেরে এক বছর আগে আত্মহত্যাকারীর ভাইকে প্রলুব্ধ করে একটি সাজানো মিথ্যা মামলা করা হয়। তবে মামলা না করার শর্তে আসামিপক্ষের সঙ্গে এসআই জাহাঙ্গীর আলমের ঘুস চাওয়া নিয়ে একটি অডিও প্রকাশ পায়। এছাড়া নগদ ২০ হাজার টাকা নিয়ে থানা থেকে ওই মামলার আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এসব নিয়ে ওই এসআইয়ের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেন মামলার আসামি মোবারক হোসেন। পরিপ্রেক্ষিতে এসআই জাহাঙ্গীর আলমকে বগুড়া পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে।

সোমবার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এসআই জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করায় পুলিশ সুপার কার্যালয় ২০ এপ্রিল তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করে একটি আদেশ দেন। বর্তমানে তিনি বগুড়া পুলিশ লাইনে রয়েছেন। তবে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

মামলার আসামি মোবারক হোসেন জানান, দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২৪ সালের ১২ মে তার ভাগনে আলমগীর হোসেনের স্ত্রী আঁখি খাতুন আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় উভয় পরিবারের মাঝে আপস-মীমাংসাও হয়, যেখানে থানা পুলিশের মধ্যস্থতা ছিল। এসআই মো. জাহাঙ্গীর আলম আপসনামা গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে কারেকশন করবেন বলে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে রাখেন।

কিন্তু প্রায় ১০ মাস পর গত ১৩ এপ্রিল আকস্মিকভাবে আঁখির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে একটি মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে মোবারকসহ মোট পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। মোবারকের অভিযোগ, এসআই জাহাঙ্গীর আলম টাকা দাবি করে ব্যর্থ হয়ে এ মামলায় তাদের নাম যুক্ত করেন।

মামলার আগেই এসআই জাহাঙ্গীর আলম ভাগনে আলমগীর হোসেনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলেন, বিষয়টি ম্যানেজ করতে হলে তাকে ওপর মহলে টাকা দিতে হবে। শুরুতে দুই লাখ টাকা দাবি করা হলেও পরে তা এক লাখ টাকায় নামিয়ে আনা হয়; কিন্তু ভুক্তভোগীরা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে হুমকির মুখে মামলা দিয়ে হয়রানি করা শুরু হয়। আমাদের কাছে এ ঘটনার ২৫ মিনিটের বেশি সময়ের একটি অডিও রেকর্ডিংও রয়েছে।

তিনি বলেন, ১৬ এপ্রিল ওই মামলার ৫নং আসামি মোবারক হোসেনের স্ত্রীর গর্ভের যমজ সন্তান মারা যায়। তারপরও আমি ১৭ এপ্রিল সকালে থানায় গ্রেফতারকৃত ভাগনে আলমগীরের সঙ্গে দেখা করতে গেলে এসআই জাহাঙ্গীর আমাকে জানান- আমি মামলার আসামি। একইসঙ্গে তিনি আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন, পরবর্তীতে ২০ হাজার টাকা নিয়ে দুইটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে আমাকে থানার বাইরে পাঠিয়ে দেন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই এসআইয়ের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করে গত ১৮ এপ্রিল শেরপুর উপজেলা প্রেস ক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

এ বিষয়ে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শেরপুর সার্কেল) সজীব শাহরীন সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি জেনেছি, ওই এসআইকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।