গ্রেপ্তার আ.লীগ নেতাদের পাশে নেই দলীয় আইনজীবীরাও
গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলটির শীর্ষ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: গণ-আন্দোলনে টানা ১৫ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন মামলায় একের পর এক গ্রেপ্তার হচ্ছেন দলটির প্রভাবশালী নেতারা। যাদের মধ্যে রয়েছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য থেকে শুরু করে সাবেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্য (এমপি) এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা। ভারতে আশ্রয় নেওয়া দলীয় প্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ গ্রেপ্তার নেতাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে গুলি চালিয়ে হত্যার অভিযোগে এরই মধ্যে মামলা হয়েছে আড়াইশর বেশি। এর মধ্যে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলটির শীর্ষ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গণহত্যার মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর তাদের অনেককে ট্রাইব্যুনালে হাজিরও করা হয়েছে। তবে মামলার আসামি হলেও এখনো গ্রেপ্তার না হওয়া আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলের নেতাদের বিরুদ্ধে যে-সব মামলা হচ্ছে তা আইনগতভাবে মোকাবিলার কথা ভাবছেন না তারা। এসব মামলাকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, হয়রানিমূলক ও বিদ্বেষপ্রসূত’ উল্লেখ করে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার কথা জানিয়েছেন। ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন নেতারা।
এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘অসাংবিধানিক’ দাবি করে আওয়ামী লীগের এসব নেতা বলেন, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনের মাধ্যমে সরানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন তারা। নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা, দেশের অর্থনীতি ঘুরে না দাঁড়ানো, শ্রমিক বিক্ষোভ, জাতীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা’ স্থগিত হওয়া এবং সংবিধান সংস্কারসহ বেশ কয়েকটি ইস্যুতে দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ হতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নিজ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে ভাবছে না। দলের নেতারা সাধারণ মানুষকে দুর্দশা থেকে রক্ষায় কাজ করতে চান।
তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা বলছেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমাতে গণহত্যা ও নির্যাতনের বহু ঘটনা ঘটেছে। আর এসব ঘটনার পরিকল্পনা ও নির্দেশদাতা ছিল আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটি বা ঊর্ধ্বতন দায় প্রমাণে এর সপক্ষে ইতিমধ্যে যথেষ্ট তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা এবং দলটির সাবেক মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণে এগুলো যথেষ্ট। ইতিমধ্যে আন্দোলনে নিহতদের স্বজন, আহত, প্রত্যক্ষদর্শীসহ কয়েকশ ব্যক্তির বক্তব্য নিয়েছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তাদের ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী হিসেবে হাজির করা হবে।
এছাড়া সাক্ষ্য হিসেবে ঘটনার সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন, ভিডিও ফুটেজ এবং আসামিদের মধ্যে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। প্রসিকিউশন মনে করে, ন্যায়বিচার ও বিচারে স্বচ্ছতার লক্ষ্যে সংশোধিত আইনে আসামিপক্ষকে সব রকম আইনি সুবিধা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে বিচারে স্বচ্ছতা, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। অবশ্য, ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানো, প্রসিকিউশন ও লোকবল বাড়ানো না হলে বিচারকাজ বিলম্বিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।