গিনি বিসাউতে অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ, নিহত বহু
প্রথম নিউজ, ডেস্ক : পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনি বিসাউতে সামরিক অভ্যুত্থানের ব্যর্থ চেষ্টা হয়েছে। মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) এই অভ্যুত্থান চেষ্টা হয়। তবে এ ঘটনায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর বহু সদস্য নিহত হয়েছেন বলে বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
তবে নিহতের সংখ্যা ঠিক কত সেটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক সদস্যের প্রাণ হারানোর কথা দেশটির প্রেসিডেন্ট উমারো সিসাকে এমবালোও নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, গিনি বিসাউয়ের পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকে ‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যর্থ হামলা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার গিনি বিসাউতে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে প্রবল গুলির লড়াইয়ের শব্দ পাওয়া যায়। অবশ্য পরে প্রেসিডেন্ট এমবালো জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং অভ্যুত্থানের চেষ্টা সফল হয়নি।
সম্প্রতি বুরকিনা ফাসো ও মালিসহ আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে সেসব দেশে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলও করেছে। সর্বশেষ আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলীয় গিনি বিসাউতেও একই চেষ্টা হলো। তবে অন্য দেশগুলোর মতো সেখানে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
প্রেসিডেন্ট এমবালো সাংবাদিকদের বলেন, ‘মঙ্গলবার রাজধানী বিসাউয়ের একটি ভবনে সরকারি কর্মকর্তারা বৈঠক করছিলেন। তখন একে-৪৭ রাইফেল নিয়ে কিছু মানুষ সেই ভবন আক্রমণ করেন। এটা ছিল গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে হামলা। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলা গুলির লড়াইয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর বেশ কিছু সদস্য নিহত হয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনী আক্রমণকারীদের ব্যর্থ করে দিয়েছে। মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই চলতেই থাকবে।’
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ব্যক্তিরা যখন হামলা করেন, তখন ওই ভবনের ভেতরে প্রধানমন্ত্রী নুনো গোমেজ নাবিয়ামের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট এমবালো বৈঠক করছিলেন।
এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র বিবিসি’কে জানিয়েছেন, ভবনে হামলার সময় আক্রমণকারীরা বেসামরিক পোশাক পরিহিত ছিলেন এবং সেখানে এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। তবে এই আক্রমণকারী কারা এবং কেন অভ্যুত্থানের চেষ্ট হলো সে বিষয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে।
সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, বিসাউয়ের বিমানবন্দরের কাছে মানুষকে পালাতে দেখা গেছে। এছাড়া অভ্যুত্থান চেষ্টার পর বাজার পুরো বন্ধ রয়েছে। ব্যাংকও খোলেনি। রাস্তায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।
২০২০ সালের নির্বাচনে এমবালোকে বিজয়ী বলে ঘোষণা করা হয়েছিল, তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডমিঙ্গোস সিমোয়েস পেরেইরা নির্বাচনের ওই ফল মেনে নেননি। নির্বাচনের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলা বিচারাধীন থাকলেও, দেশটির সামরিক বাহিনীর সমর্থন নিয়ে একটি নতুন সরকার গঠন করতে তৎপরতা শুরু করেন এমবালো।
উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা পায় মাত্র ১৫ লাখ জনসংখ্যার দেশ গিনি বিসাউ। এরপর থেকে আফ্রিকার এই দেশটিতে অন্তত ১২ দফায় সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছে। তবে এর মধ্যে চারটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা সফল হয়।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: