খালেদা জিয়ার দরখাস্ত পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা আমার নাই:
বেগম খালেদা জিয়ার দরখাস্ত শর্তযুক্ত শর্তে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। সরকারকে আইনের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দরখাস্ত পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা আমার নাই’ বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, আইনে আছে শর্তযুক্ত, শর্তমুক্ত। বেগম খালেদা জিয়ার দরখাস্ত শর্তযুক্ত শর্তে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। সরকারকে আইনের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। অনেকে বলছেন, ওই দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগের কথা। কিন্তু সেই দরখাস্ত নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) বার্ষিক সাধারণ সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
ক্র্যাব সভাপতি মিজান মালিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আরিফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘যে মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন সেটি কিন্তু আওয়ামী লীগ করে নাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলা হয়েছে। ২০১২ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন সেই মামলার প্রতিবেদন দেয়।’
‘মামলাটির বিচার কার্যক্রম চলাকালে তারা অন্তত দশবার হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন মামলা স্থগিত করার জন্য। অনেক বিচারকের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছেন। সব কিছুর পর রায় হয়েছে। একটি মামলায় বিচারিক আদালতে সাজা ৫ বছর, হাইকোর্টে সেটি বেড়ে ১০ বছর হয়েছে। আরেক মামলায় পরে খালেদা জিয়ার সাত বছর সাজা হয়েছে।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) যখন সাজা ভোগ করছিলেন তখন প্রধানমন্ত্রী মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে দুটি বিশেষ শর্তে সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘পুনরায় যদি একটি দরখাস্ত করা হয়, সেটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আমি এখানেও বলছি, সংসদেও বলেছি। শর্তযুক্ত শর্তে তিনি সাজা স্থগিতে যে মুক্তি পেয়েছেন সেটি যদি না মেনে পুনরায় জেলে যেতে চান, সেটাও হতে পারে। কিন্তু এ অবস্থায় ফৌজদারি কার্যবিধির কোথাও নেই, যে তাকে আমরা আগের দরখাস্ত বিবেচনা করে বিদেশ যাবার সুবিধা করে দিতে পারি, সেটা নাই।’
‘অনেকে বলছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা কারো বিদেশ যাওয়া বন্ধ করে না। কিন্তু আমি কখনো বলিনি যে তাকে (খালেদা জিয়া) বিদেশে পাঠানো যাবে না। কিন্তু একবার নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত আবার পুনর্বিবেচনার সুযোগ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় নাই।’
নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে যে, নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। গত দুইবার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে, সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। দলগুলো নামগুলো দিতে পারবেন।’
‘১০টি নাম সার্চ কমিটি সুপারিশ করতে পারবে, সেই দশটি নাম থেকে পাঁচজনকে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নিয়োগ দেবেন। এটা অ্যাক্টের উপরে হয়েছে, এটা আইন না। এটার উপরে দুটি নির্বাচন হয়েছে। তবে আমিও মনে করি, আইন হওয়া উচিত। সুজনের প্রতিনিধিও গিয়েছিল। আমি বলেছি পরিস্কার, বলেছি নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত আইন হওয়া দরকার। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সব সংসদ সদস্যকে সংসদে পাচ্ছিলাম না। তাই সংসদ সদস্যদের পাশ কাটিয়ে কোনো অর্ডিন্যান্স করবো না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘১৫ ফেব্রুয়ারি এই নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে যেহেতু সংসদ আইন করতে পারবে না। আগে যে পদ্ধতিতে হয়েছে, সেই নিয়মে হতে পারে। অথবা ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি রয়েছে। এই কমিটি নির্বাচন কমিশন ১০ জনকে নির্বাচন করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারেন। সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নাম পাঠাতে পারেন। আমি মনে করি নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কোনো বিতর্কের অবকাশ নেই।’
বিচারপতি নিয়োগে কোনো বিষয় প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘দুটি বিষয়ে কখনো রাষ্ট্রপতিকে কাউকে জিজ্ঞাসা করতে হয় না বা পারেন না। এটা তার সর্বময় ক্ষমতা। এক- প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা, দুই- বিচারপতি নিয়োগ করা। যে কাজটা রাষ্ট্রপতির, সেটি আমি কী করে বলবো! আমি তো সরকারের মন্ত্রী। বিচারপতি নিয়োগে রাষ্ট্রপতি তার সুবিবেচনা ও আইন অনুযায়ী ক্ষমতার প্রয়োগ করে যা ভালো মনে হবে, তাই সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আমি মনে করি, আপিল বিভাগে অনেকেরই প্রধান বিচারপতি হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে। আর সরকারে এসব নিয়ে কোনো চিন্তাই নেই।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি আবদুল্লাহ-আল মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু, র্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল মশিউর রহমান ও র্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন প্রমুখ।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: