কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন এপ্রিলে মোবাইলে লেনদেন কমেছে ৯ হাজার কোটি টাকা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন এপ্রিলে মোবাইলে লেনদেন কমেছে ৯ হাজার কোটি টাকা

প্রথম নিউজ, ঢাকা : হঠাৎ চলতি বছরের এপ্রিলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন কমে যায় ৯ হাজার কোটি টাকার মতো। এছাড়া অধিকাংশ সূচকই ছিল নিম্নমুখী। তবে আগের মাসের তুলনায় কিছুটা বাড়ে অ্যাকাউন্ট বা হিসাব সংখ্যা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিলে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা, যা আগের মাস মার্চে ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৮ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, এপ্রিলে এমএফএসে জমা (ক্যাশ ইন) হয়েছিল ৪১ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা, যা আগের মাস মার্চে ছিল ৪৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এক মাসে জমা কমেছে ৪ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। এ সময় উত্তোলন (ক্যাশ আউট) হয় ৪৬ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা, যা আগের মাসে ছিল ৪৮ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। এক মাসে উত্তোলন (ক্যাশ আউট) কমেছে ১ হাজার ১০১ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, এপ্রিলে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির হিসাবে লেনদেন হয় ৩৭ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা, যা আগের মাস মার্চে ছিল ৪০ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক মাসে এ ধরনের লেনদেন কমেছে ২ হাজার ৫১২ কোটি টাকা।

তথ্যানুযায়ী, এপ্রিলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতনভাতা বাবদ বিতরণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা, যা মার্চে ছিল ৪ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। এছাড়া এপ্রিলে বিভিন্ন পরিষেবার ২ হাজার ৬১৭ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয়, যা মার্চে ছিল ২ হাজার ১২৮ কোটি। এছাড়াও এপ্রিলে এমএফএসের মাধ্যমে দেশে প্রবাসী আয় আসে ৮৫৬ কোটি টাকা, যা আগের মাসে ছিল ৮১৩ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিবন্ধিত গ্রাহক ২২ কোটি ৬৫ লাখ ৫ হাজার ৫৫৩ জন, যা আগের মাস মার্চে ছিল ২২ কোটি ৪০ লাখ ১ হাজার ৪১২ জন। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে মোবাইলে নিবন্ধিত গ্রাহক বেড়েছে ২৫ লাখ। এসব গ্রাহকের মধ্যে পুরুষ ১৩ কোটি ১৭ লাখ ৭৯ হাজার ৮২৭ জন এবং নারী ৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭০ হাজার ৫৫৪ জন। এর মধ্যে শহরের ৯ কোটি ৯১ লাখ ৬৯ হাজার এবং গ্রামের ১২ কোটি ৭৩ লাখ ৩৬ হাজার। বর্তমানে বিকাশ, নগদ, রকেট, ইউক্যাশ, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ নানা নামে ১৩টির মতো ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান এমএফএস সেবা দিচ্ছে।

জানা যায়, ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) যাত্রা শুরু হয়। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসাবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সিংহভাগই বিকাশের দখলে।

এরপর ‘নগদ’-এর অবস্থান। লেনদেন ছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবামূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, বেতনভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া গাড়িচালক, নিরাপত্তাকর্মী ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেওয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবার মাধ্যমে। পোশাক খাতসহ শ্রমজীবীরা এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন। যার ফলে দিনদিন নগদ টাকার লেনদেন কমে আসছে। এ প্রবণতা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।