কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে হাসপাতাল ছাড়ছেন ডেঙ্গু রোগীরা
রোগীদের বাইরে থেকে রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষা করতে হচ্ছে। এতে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন আসছে বলেও অভিযোগ তাদের। যে কারণে প্রতিদিন বিপাকে পড়ছেন রোগীরা।
প্রথম নিউজ, সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। কিন্তু ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা নেওয়া প্রধান হাসপাতাল সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ও কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে ভর্তি বাতিল বা ছাড়পত্র না নিয়েই হাসপাতাল ছাড়ছে রোগীরা।
রোগীদের বাইরে থেকে রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষা করতে হচ্ছে। এতে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন আসছে বলেও অভিযোগ তাদের। যে কারণে প্রতিদিন বিপাকে পড়ছেন রোগীরা। আবার সঠিক চিকিৎসা সেবা না পেয়ে অনেক রোগীরা ভর্তি হওয়ার পরও হাসপাতাল থেকে বাড়িতে চলে যাচ্ছেন।
বুধবার (২ আগস্ট) সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে জেলার ৯টি উপজেলায় ২০ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। জেলায় এখন পর্যন্ত মোট ২১১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে ১৪৪ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এখনও ৬৭ জন জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ৪২ জন, শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজে ১৯ জন, খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজে ২১ জন, নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজে ৫ জন, কাজীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ২১ জন, কামারখন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫ জন, বেলকুচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ জন, উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮ জন, চৌহালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩ জন, তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬ জন, রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪ জন, শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪৪ জন।
এছাড়া ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৩ জুলাই কোরবান আলী সেখ (২৭) নামে এক যুবক এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা গেছেন। সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের ডেঙ্গু কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতাল রেজিস্টারে ভর্তি রোগী ১৭ জন থাকলেও বেডগুলোতে মাত্র ১০ জন ডেঙ্গুরোগী রয়েছেন।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে চৌহালী উপজেলার ঘোড়জান ইউনিয়নের চরধীতপুর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে লুৎফর রহমান (৪৩)। তিনি বলেন, দুদিন হলো হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। সব পরীক্ষা বাইরে গিয়ে করতে হয়। এরা শুধু প্যারাসিটামল ও গ্যাসের ট্যাবলেট দেয়।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত আরেক রোগী শাহজাদপুর উপজেলার পোরজোনা ইউনিয়নের আব্দুল মান্নান সেখের ছেলে চাঁদ আলী (২০)। তিনি বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে প্রতিদিন রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষা করতে হয়। অথচ এই হাসপাতালে এমন পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থাই নেই। বাইরের প্যাথলজিতে পরীক্ষা করতে প্রতিবার ৪ থেকে ৫ শত টাকা খরচ হয়। এরপরেও সঠিক রিপোর্টটি পাওয়া যায় কি না সন্দেহ আছে।
সদর উপজেলার চক শিয়ালকোল গ্রামের দুলাল প্রামাণিকের ছেলে ডেঙ্গুরোগী মোহাম্মদ শান্ত (২২) বলেন, এই হাসপাতালে মানসম্মত কোনো সেবা না থাকায় এরইমধ্যে অনেক ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েও না বলে চলে গেছেন। আজ আমরাও চলে যাব। হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ সেবিকা খাদিজা খাতুন বলেন, হাসপাতালে অনেক ডেঙ্গুরোগী ভর্তি ছিলেন। তবে এরইমধ্যে কয়েকজন রোগী চিকিৎসা সম্পন্ন না করে, ছাড়পত্র না নিয়েই, আমাদের না বলেই চলে গেছেন।
সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ফরিদুল ইসলাম বলেন, বেশ কদিন ধরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য হাসপাতালে আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেবার।
সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রতন কুমার রায় বলেন, হাসপাতালে ৫০ টাকার বিনিময়ে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষার জন্য যে রিএজেন্ট প্রয়োজন হয় সেটির সরবরাহ না থাকায় বর্তমানে বাইরের প্যাথলজি থেকে এই পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন রামপদ রায় বলেন, জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। সেই জন্য আমরা দ্রুত রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষার ব্যবস্থা করছি। অল্পদিনের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।