ওষুধের দামে নাভিশ্বাস
![ওষুধের দামে নাভিশ্বাস](https://prothom.news/uploads/images/2025/02/image_750x_67a977badd590.jpg)
প্রথম নিউজ, অনলাইন: স্ট্রোকজনিত কারণে শরীরের ডান পাশ অচল হয়ে গেছে সাঈদ হোসেনের (৪২)। এর সঙ্গে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ এবং হরমোনের সমস্যা। রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে ফলোআপের জন্য এসেছিলেন তিনি।
তার স্ত্রী ফাহমিদা খাতুন বলেন, গত বছর স্ট্রোকের পর থেকে সাঈদ দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন।
তার উচ্চ রক্তচাপসহ আরো বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। তার ওষুধের জন্য শুরুতে মাসে ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হতো। কিন্তু ওষুধের দাম বাড়ায় এখন মাসে প্রায় ৬-৭ হাজার টাকা খরচ হয়। এত খরচের কারণে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে।
রাজধানীর ফার্মেসিগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফেক্সোফেনাডিন প্রতি পিস ৮ টাকা থেকে ৯ টাকা, অ্যাজিথ্রোমাইসিন প্রতি পিস ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা, মন্টিলুকাস্ট প্রতি পিস ১৬ টাকা থেকে ১৭ টাকা ৫০ পয়সা, ভিটামিন বি১ বি৬ বি১২ এর প্রতি পিসের দাম ৭ টাকা থেকে দুই ধাপে দাম বাড়িয়ে ১০ টাকা করা হয়েছে।
এ ছাড়া ইসমিপ্রাজল এর প্রতি পিসের দাম ৫ টাকা থেকে ৭ টাকা, লোসারটান পটাশিয়াম ৫০ মিলিগ্রামের প্রতি পিসের দাম ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা, প্যারাসিটামল ৫০০ মিলিগ্রামের ১০ পিস ওষুধের দাম ৮ টাকা থেকে ১২ টাকা, প্যারাসিটামল ৬৬৫ মিলিগ্রাম ১০ পিস ওষুধের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা হয়েছে। প্যারাসিটামল সিরাপের দাম হয়েছে ২০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা। অ্যামলোডিপাইন অ্যাটেনোলোল ৫ মিলিগ্রামের দাম ৬ টাকা থেকে ৮ টাকা, ব্রোমাজিপাম ৩ মিলিগ্রামের দাম ৫ টাকা থেকে ৭ টাকা হয়েছে।
অ্যাসপিরিন ৭৫ মিলিগ্রামের দাম এক পাতায় ১০ পিসের দাম পড়ত ৫ টাকা, এখন ৮ টাকা টাকা হয়েছে। বাড্ডার হোসেন মেডিক্যাল হল নামের ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে এসেছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী তারেক মাহমুদ।
তিনি বলেন, আমি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছি। এটা নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়। আগে এক পাতা ওষুধ ৮০ টাকায় কিনতাম।
এখন সেটা ১০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আয় একই থাকছে খরচ বেড়েই চলেছে। বাঁচতে গেলে ওষুধ তো কিনতেই হবে। এ খরচ আমি কীভাবে কমাব?
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, একজন রোগীকে চিকিৎসা নিতে নিজ পকেট থেকে ব্যয় করতে হচ্ছে ৬৮ দশমিক ৫০ ভাগ টাকা। রোগীকে সবচেয়ে বেশি ৬৪ ভাগ টাকা ব্যয় করতে হয় ওষুধ খাতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘ওষুধের খরচ কয়েকটি কারণে বাড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে, দেশের মানুষ প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ কিনতে পারে এবং অপ্রয়োজনে ওষুধ খায়। দোকানদারদের কাছে গেলে তারাও ইচ্ছামতো ওষুধ দেয়, অনেক অসাধু চিকিৎসকও অতিরিক্ত ওষুধ দিয়ে থাকেন। এজন্য দায়ী কম্পানিগুলোর আগ্রাসী মার্কেটিং। দেশে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ওষুধ উৎপাদন হয়। এ জন্য তারা ‘পুশ সেল’ করে। তাই চাহিদা নির্ণয় করে সে অনুযায়ী উৎপাদন করতে হবে।’
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক এবং মুখপাত্র ড. মো. আকতার হোসেন বলেন, ‘আমি অল্প কিছুদিন হলো দায়িত্ব পেয়েছি। আমার জানা মতে গত পাঁচ-ছয় মাসে ওষুধের দাম বাড়ানোর কোনো বিষয় নেই।’
ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ওষুধের দাম বাড়েনি। বাজারে যদি দাম বেড়ে থাকে তাহলে তা অন্যভাবে বেড়েছে।’