এখনো ৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকার হদিস মেলেনি

ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের থার্ড পার্টি মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের গাড়ি থেকে ছিনতাই হওয়া টাকা পুরোপুরি উদ্ধার হয়নি।

এখনো ৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকার হদিস মেলেনি
এখনো ৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকার হদিস মেলেনি

প্রথম নিউজ, অনলাইন: ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের থার্ড পার্টি মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের গাড়ি থেকে ছিনতাই হওয়া টাকা পুরোপুরি উদ্ধার হয়নি। ঘটনার দিন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ ৯ কোটি টাকা উদ্ধারের কথা জানালেও পরে তুরাগ থানা পুলিশ ৩টি ট্রাংক থেকে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পায়। এ হিসেবে ছিনতাই হওয়া ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকার মধ্যে এখনো ৭ কোটি ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার হদিস মিলছে না। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তারের কথাও জানায়নি ডিবি ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে তুরাগ থানায় অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে যে মামলাটি করেছেন আনুষ্ঠানিকভাবে সেটি ডিবি তদন্ত করছে। ছিনতাই হওয়া টাকা উদ্ধার ও আসামি গ্রেপ্তারের জন্য ডিবি’র একাধিক টিম কাজ করছে। সন্দেহভাজন অন্তত ডজনখানেক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিবি। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। পাশাপাশি গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া কিছু টাকাও উদ্ধার করা হয়েছে বলে সূত্রটি দাবি করছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন। ডিবি মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মানস কুমার পোদ্দার  বলেন, আমরা তদন্ত করছি। শিগগিরই বিস্তারিত জানানো হবে। 

এদিকে, যে গাড়ি দিয়ে টাকা ছিনতাই হয়েছে সেই গাড়ি ও ছিনতাই হওয়া টাকার ৩টি ট্রাংক উদ্ধার করে ডিবি প্রধানের তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় চলছে। ওইদিন ডিবি প্রধান ট্রাংকের টাকা না গুনে অনুমানের উপর ৯ কোটি টাকার উদ্ধারের দাবি করেন। পরে উদ্ধার করা ট্রাংকগুলো ডিবি’র পক্ষ থেকে তুরাগ থানায় হস্তান্তর করেন। থানা পুলিশ ওই টাকা গুনে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পায়। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও ওইদিন ডিবি প্রধানের বক্তব্য দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। প্রশ্ন উঠেছে ডিবি প্রধান না গুনে কীভাবে এই পরিমাণ টাকা উদ্ধারের দাবি করলেন? আর পুলিশ টাকা গননা করে তথ্য জানানোয় ডিবি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, টাকা উদ্ধার করে ট্রাংকগুলো পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। থানা পুলিশই টাকা গুনেছে। তাই উদ্ধার করা টাকার সঠিক হিসাব তারা দিতে পারবে।

আর পুলিশ বলছে, টাকা উদ্ধার করেছে ডিবি। তাই এ বিষয়টি তারাই জানে। এসব বিষয় নিয়ে ডিবি ও পুলিশ কেউ আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি। এ ছাড়া ছিনতাইয়ে কারা জড়িত সে বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য জানাতে পারেনি পুলিশ ও ডিবি। এ ছাড়া যে গাড়ি থেকে টাকা ছিনতাই হয়েছে ওই গাড়িতে নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে কোনো অস্ত্রও ছিল না। বড় অঙ্কের টাকা পরিবহনে কেন ওই গাড়িতে অস্ত্র ছিল না এ নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ডিবি প্রধান হারুন সাংবাদিকদের বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনাটি পরিকল্পিত। টাকা বহনের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তারা কেন এত সহজে ডাকাতদের টাকা নিতে দিয়েছে সেটি আমরা খতিয়ে দেখবো।  মানি প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যশোদা জীবন দেবনাথ গতকাল বলেন, আমি ডিবিতে গিয়েছিলাম। ডিবি এটা নিয়ে খুব গুরুত্বসহকারে কাজ করছে। পজেটিভ খবরও আছে।  যেকোনো সময় বিস্তারিত জানানো হবে। 

প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মাইক্রোবাসে ৪টি ট্রাংকে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা নিয়ে মানি প্ল্যান্টের কর্মকর্তারা মিরপুরে ব্যাংকের অফিস থেকে টাকা নিয়ে সাভার এলাকার দিকে যাওয়ার সময় অস্ত্রসহ কয়েকজন গাড়িটি আটকে বন্দুকের মুখে টাকা ছিনতাই করে। ছিনতাইয়ে যে মাইক্রোবাস ব্যবহার করা হয়েছিল তার নম্বর প্লেট ছিল ভুয়া। অপর একটি প্রাইভেট কারের ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজে গাড়িটিকে শনাক্ত করা হয়। ওইদিন বিকালে খিলক্ষেত এলাকা থেকে চালকসহ ওই গাড়ি ও ৩টি ট্রাংক জব্দ করে। পুলিশ জানায়, মানি প্ল্যান্টের টাকা বহনকারী গাড়িটি সকালে মেট্রোরেল সেন্টার স্টেশনের কাছে পৌঁছালে একটি কালো মাইক্রোবাসে ৭-৮ জন লোক গাড়ির গতিরোধ করে। গাড়িতে মানি প্ল্যান্টের একজন ম্যানেজার, একজন সুপারভাইজার, দু’জন গার্ড ও চালক ছিলেন। গাড়ির দরজা এতটাই হালকা ছিল যে ডাকাতরা তা টেনে খুলে ফেলে এবং চালকসহ ৪ জনকে জোর করে নামিয়ে দেয়। পরে তারা ৪টি ট্রাংক কালো মাইক্রোবাসে তুলে নেয় এবং পালিয়ে যায়। পরে মানি প্ল্যান্টের কর্মকর্তারা ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশের সাহায্য চায়।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: