এ মাসের শেষ সপ্তাহে মেট্রোরেল উদ্বোধন
প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উড়ালপথে চলবে ট্রেন। তবে উদ্বোধনের পর পুরোদমে চলবে না ঢাকার এই মেট্রোরেল।

প্রথম নিউজ, অনলাইন: দেশের প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধনের প্রস্তুতি চলছে। এই মাসের শেষ সপ্তাহে উদ্বোধনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উড়ালপথে চলবে ট্রেন। তবে উদ্বোধনের পর পুরোদমে চলবে না ঢাকার এই মেট্রোরেল। প্রথম সপ্তাহে শুধু সকালে ও বিকালে চলবে এই ট্রেন। ধীরে ধীরে চলার সময় বাড়বে। আজ সোমবার অর্থায়নকারী সংস্থা জাইকার আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে মেট্রোরেল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং চলাচলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিষয়ে তিনি বলেন, এই মাসের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর সুবিধাজনক সময়ে উদ্বোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের স্টেশন হবে নয়টি। এর ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ৫ টাকা, সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। মেট্রোরেল নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সর্বশেষ প্রযুক্তিতে তৈরি ছয় বগির ট্রেন সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটবে। প্রথম দিকে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারের এই পথে মেট্রোরেল সময় নেবে ২০ মিনিট।
পূর্ণমাত্রায় চালু হলে এই সময় কমে আসবে ১৬ থেকে ১৭ মিনিটে।
ডিএমটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, এই মাসের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর সুবিধাজনক সময়ে উদ্বোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা অপেক্ষায় আছি, আমরা যে কোনো দিন তারিখ পেয়ে যেতে পারি। পেয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আপনাদেরকে জানিয়ে দেয়া হবে। প্রস্তুতির সময় বিবেচনায় সুনির্দিষ্ট তারিখের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, চতুর্থ সপ্তাহটাকে মাথায় রেখে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। আমাদের প্রস্তুতিটা থাকবে, যাতে চতুর্থ সপ্তাহের যে কোনো দিনে এটা হতে পারে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য ৮০-৯০ ভাগ প্রস্তুতি আমরা শেষ করে ফেলেছি।
দ্বিতীয় ধাপে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এবং তার পরে কমলাপুর পর্যন্ত অংশ চালু করা হবে বলে জানান এম এ এন ছিদ্দিক। মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কিলোমিটারে ৫ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। সেই হিসাবে উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভাড়া হবে ৬০ টাকা।
অন্যদিকে, উত্তরা নর্থ স্টেশন হতে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত হবে ২০ কিলোমিটারে দূরত্বের জন্য সর্বোচ্চ ভাড়া যাত্রী প্রতি ১০০ টাকা। ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা জানান, উদ্বোধনের সময় ঘোষণার হওয়ার পর ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হবে। প্রথমদিকে কেবল স্টেশনের কাউন্টার থেকে এমআরটি পাস ইস্যু করা হবে এবং সেটা রিচার্জ করা যাবে। এছাড়া স্টেশনের কাউন্টার কিংবা টিকিট বিক্রয় মেশিন থেকে নির্দিষ্ট যাত্রার টিকিট (সিঙ্গেল জার্নি টিকিট) কেনা যাবে। পরবর্তীকালে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস দিয়েও এমআরটি পাসের টাকা রিচার্জ করা সম্ভব হবে বলেও জানান কর্মকর্তারা। মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কোম্পানির প্রধান ছিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেলের সঙ্গে যাত্রীদের অভ্যস্ততা তৈরি করা এবং আন্তর্জাতিক মান বিবেচনা করে প্রথম দিকে ট্রেনের চলাচল সময়টা কম এবং ট্রেনের স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় বেশি থাকবে। আন্তর্জাতিক প্র্যাকটিস যেটা, যখন যাত্রী পরিবহন শুরু হবে, সেই ক্ষেত্রে একদম প্রথম থেকেই পরিপূর্ণভাবে যাত্রী বহন করে চলাচলটা শুরু করে না। এটা ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হয়। প্রথম দিকে হয়ত কম সময় চলবে। দুই থেকে তিন মাসের ভেতরে একদম শতভাগ অপারেশন যেভাবে চলে, সেভাবে চলবে।
এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, প্রথম দিকে হয়ত সকালের দিকে কিছুক্ষণ চলবে, বিকালে কতক্ষণ চলবে। সপ্তাহ পরে আরও কিছু সময়ে বাড়াব। এভাবে বাড়তে বাড়তে পরিপূর্ণ মাত্রায় যাবে। প্রথম দিকে চার মিনিট পরপর ট্রেন চালালে জনসাধারণ এটার সাথে অভ্যস্ত হতে বা সেভাবে পরিচিত হতে পারবেন না। আবার আমরা দাঁড়ানোর সময়টাকে হয়ত এক সময় ৩০ সেকেন্ডে নিয়ে আসব। কিন্তু প্রথম দিকে যদি আপনি এক-দুই মিনিট না দেন, তাহলে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে নামবেন-উঠবেন, এই কাজগুলো হবে না। এ জন্য প্রথম দিকে আমরা বেশি সময় দাঁড়াব। তিনি জানান, উদ্বোধনের আগেই ৬ বগির ১০টি ট্রেন সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত রাখা হবে। ব্যাকআপ হিসেবে আরও দুটি ট্রেন প্রস্তুত থাকবে। প্রতিটি মেট্রোরেল ২ হাজার ৩০০ যাত্রী নিয়ে ছুটতে পারবে বলে তিনি জানান।
ট্রেনের গতির বিষয়ে এক প্রশ্নে এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ডিজাইন স্পিড হল ১১০ কিলোমিটার, অপারেশন স্পিড হল ১০০ কিলোমিটার। তার সাথে আপনাকে দেখতে হবে, কোন লাইনটা দিয়ে আমরা চলছি। কোনো কোনো লাইন সোজা, সেখানে হয়ত ১০০ কিলোমিটার বেগে চলছে, আবার কোনো কোনো জায়গায় সাপের মতো বেঁকে গেছে, সেই জায়গাতে ধীরে চলবে ট্রেনটা। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কত সময় লাগতে পারে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রথম দিকে আমরা ২০ মিনিট ধরেছি। পরে এটা ১৬ থেকে ১৭ মিনিটে কমে আসবে। মেট্রোরেলের বিষয়ে জনসাধারণকে ধারণা দিতে দিয়াবাড়ির মেট্রোরেল ডিপোতে স্থাপন করা মেট্রোরেল এক্সিবিশন ইনফরমেশন সেন্টার (এমইআইসি) চালু করেছে ডিএমটিসিএল। প্রদর্শনী কেন্দ্রের পাশাপাশি উত্তরা নর্থ স্টেশনে ট্রেনের টিকিট কাটা এবং চলাচলের নিয়মাবলী সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন জাইকা এবং নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা।
ঢাকায় জাইকার প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহিদে বলেন, মেট্রোরেল চালু হলে মানুষের জীবনমানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। সময় বাঁচবে, অর্থের সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব বাহনে চড়তে পারবেন তারা। পাশের দেশ ভারতের দিল্লিতে পরিচালিত একটি গবেষণার সূত্র ধরে তিনি বলেন, মেট্রোরেল চালুর পর সেখানে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ব্যাপক সংখ্যায় বেড়েছে। বাংলাদেশেও নারীদের অংশগ্রহণ সেভাবে বাড়বে বলে আমরা মনে করছি।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল স্থাপনে চলমান এ প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এরপর কমলাপুর থেকে পর্যন্ত মেট্রোরেল এগিয়ে নেয়ায় মোট ব্যয় বেড়ে হয় প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। গবেষণা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে মেট্রোরেল নির্মাণে জাপানের সঙ্গে ঋণচুক্তি করে সরকার। পরের বছর প্রকল্পের বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেল ডিপোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যায় কার্যক্রম। অনুষ্ঠানে প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রকল্পের জেনারেল কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোয়েই’র প্রতিনিধি ফুজিতোমি তাকায়ুকি, প্রকল্পের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল সিস্টেমস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মারুবেনি’র প্রতিনিধি রাসোনো তেতসুয়া, ট্রেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কাওয়াসাকি’র প্রতিনিধি মিয়ামোতি হিদিয়াতি।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews