Ad0111

১৬ কোটি ভোক্তার অধিকার নিশ্চিতে কাজ করছেন মাত্র ১০৮ জন

জনবল সংকট নিয়েই চলছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কার্যক্রম।

১৬ কোটি ভোক্তার অধিকার নিশ্চিতে কাজ করছেন মাত্র ১০৮ জন
ফাইল ছবি

প্রথম নিউজ, ঢাকা: জনবল সংকট নিয়েই চলছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কার্যক্রম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ এই সংস্থাটি ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করলেও এখনও পরিপূর্ণ রূপ পায়নি। পায়নি প্রয়োজনীয় জনবল। অর্জন করতে পারেনি আইন বাস্তবায়নের সক্ষমতা। এর মধ্য দিয়েও সংস্থাটির কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের অনেক কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে ১৬ কোটির অধিক ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করছে সংস্থাটি।

অধিদফতরের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৩০৫ জন জনবল নিয়োগের আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে জনপ্রশাসন প্রাথমিক পর্যায়ে ২০৬ জনবল অনুমোদন করেছে। প্রয়োজনের তুলনায় এ সংখ্যা একেবারেই নগণ্য ও অপ্রতুল। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে সরকার একটি আইন প্রণয়ন করেছে। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ক্ষমতাবলে ভোক্তা অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করছে সংস্থাটি। তবে আইন প্রয়োগের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা না থাকায় সাধারণ মানুষ এই সংস্থা ও আইনের সুফল সেভাবে পাচ্ছে না। তার ওপর জনবল সংকট তো রয়েছেই।

জানা গেছে, দেশের ১৬ কোটির অধিক সংখ্যক ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে প্রতিষ্ঠানটির জনবল রয়েছে মাত্র ২০৮ জন। এর মধ্যে মাঠপর্যায়ে কাজ করা জনবলের সংখ্যা ১০৮ জন। শুধু তাই নয়, রাজধানীর অন্তত ২ কোটি ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় নিয়োজিত রয়েছেন মাত্র ৫ জন কর্মকর্তা। এর মধ্যে মহাপরিচালক একজন, পরিচালক একজন ও উপপরিচালক তিনজন। বর্তমানে পরিচালকের দুটি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে একটি পদ। এছাড়া চারজন উপপরিচালকের পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন তিনজন। শূন্য রয়েছে একটি পদ।

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৭৬ (১) অনুযায়ী, ‘যে কোন ব্যক্তি, যিনি, সাধারণভাবে একজন ভোক্তা বা ভোক্তা হইতে পারেন, এই অধ্যাদেশের অধীন ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য সম্পর্কে মহাপরিচালক বা এতদুদ্দেশ্যে মহাপরিচালকের নিকট ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অবহিত করিয়া লিখিত অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবেন।’

তবে প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে তা তদারকি করে ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শাস্তি ও জরিমানা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অমীমাংসিত রয়ে যাচ্ছে শত শত অভিযোগ। প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে তা তদারকি করে ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শাস্তি ও জরিমানা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

জানা গেছে, দেশে অধিকাংশ পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভেজাল ও প্রতারণার মহোৎসব চলছে। বস্তুত বাজারে মাছ-মাংস, দুধ-ডিম ও ফলমূল থেকে শুরু করে প্রায় সব পণ্যের পাশাপাশি সেবা খাতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও ভেজালের মিশ্রণসহ নানা প্রক্রিয়ায় প্রতারণা করা হচ্ছে। অসাধু ব্যক্তিরা অধিক মুনাফার লোভে মত্ত হয়ে একদিকে চাল, মাছ, সবজি, মসলা, দুধ, দই, মিষ্টি, বেকারি পণ্যসহ নকল ও ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বিক্রয় করছে; অন্যদিকে বিভিন্ন সেবা প্রদানে অবাধে প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। পাশাপাশি পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা করছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় জনবলের জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেওয়া আছে। বাজেট পাওয়া সাপেক্ষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জনবল অনুমোদন করছে।

তিনি জানান, নানা ধরণের সীমাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করছি। এর মধ্য দিয়েই সাধারণ ভোক্তার অধিকার নিশ্চিতে কাজ করছি। অধিদফতরে দাখিল হওয়া অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি জানান, সীমিত জনবল দিয়েই সাধ্যমতো এগুলো নিষ্পত্তি করছি।   

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মাধ্যমে ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছি। চেষ্টাটা চলছে। নানা সীমাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করছেন অধিদফতরের কর্মকর্তারা। এ সমস্যা থাকবে না। পর্যায়ক্রমে এসব সমস্যা নিরসন হবে।

সূত্র জানিয়েছে, যে কোনও ভোক্তা তার অধিকার নিশ্চিত করতে, বা পণ্য কিনে ঠকলে প্রতিকার চেয়ে অধিদফতরে অভিযোগ করতে পারবেন।

অভিযোগ দায়ের করা যাবে সংস্থার জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর। এছাড়াও জাতীয় অধিদফতরের ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্রে, উপ-পরিচালক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, টিসিবি ভবন, বন্দরটিলা দফতরে। রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, শ্রীরামপুর দফতরে। খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় শিববাড়ী মোড় দফতরে। বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়, মহিলা ক্লাব ভবন, বরিশাল দফতরে। সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় দফতরে। রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়, নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়া, রংপুর দফতরে। এ ছাড়াও দেশের প্রত্যেক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবরে অভিযোগ দায়ের করা যাবে।

ফ্যাক্স, ই-মেইল, ওয়েবসাইট, ইত্যাদি ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে বা অন্য কোন উপায়েও অভিযোগ দাখিল করা যাবে। অভিযোগের সঙ্গে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের রশিদ অবশ্যই সংযুক্ত করতে হবে। অভিযোগকারীকে তার পূর্ণাঙ্গ নাম, পিতা ও মাতার নাম, ঠিকানা, ফোন, ফ্যাক্স ও ই-মেইল নম্বর (যদি থাকে) এবং পেশা উল্লেখ করতে হবে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news