উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রণয়ন হয়নি আইন
সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি অপসারণে সংবিধান সংশোধন
প্রথম নিউজ, ঢাকা : সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি অপসারণে সংবিধান সংশোধন, আইন তৈরি ইত্যাদি পর্যন্ত গড়ালেও বিচারক নিয়োগের কোনো আইন নেই। সংবিধানে প্রদত্ত ক্ষমতায় রাষ্ট্রপতি বিচারক নিয়োগ দেন। এক্ষেত্রেও সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নেওয়ার প্রথা রয়েছে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও স্বাধীনতার পর থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত কোনো আইন প্রণয়ন হয়নি। এ ব্যাপারে নীতিমালা করতে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা এবং আইন কমিশনের সুপারিশ থাকলেও এখন পর্যন্ত সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে প্রশ্ন উঠছে, সে বিষয়টির সমাধান হয়নি বলেও মতামত দিয়েছেন আইন বিশ্লেষকরা।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, যোগ্যতর ব্যক্তিকে বাছাই করার স্বার্থে বিচারপতি নিয়োগে আইন করা জরুরি হলেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে স্বাধীনতার পর থেকে সব সরকারই তা উপেক্ষা করেছে।
এক্ষেত্রেও পরামর্শের ব্যতিক্রম হয়েছে বলে বিভিন্ন সময়ে শোনা যায়৷ হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে যোগ্য লোক খুঁজে পেতে বিভিন্ন মাপকাঠির কথা রায়ে বলা হয়েছে৷ যেহেতু পুরো প্রক্রিয়া রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতি সম্পন্ন করেন, তাই আদেশ জারি করেননি৷ নীতিমালা তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথাও এ রায়ে বলা হয়েছে৷ নীতিমালা তৈরি সংসদের
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, সংবিধানের নির্দেশনা আছে বিচারপতি নিয়োগে নীতিমালা প্রণয়ন করার এবং এটা রিফর্ম করা হয়েছে আমাদের যে দশ বিচারপতির মামলা সেই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের কতগুলো নীতিমালা সুস্পষ্টভাবে আমরা পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, উচ্চ আদালত সংবিধানের আলোকে রুলস তৈরির জন্য বলেছেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যারা ক্ষমতায় আছেন সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশনাটা এখন পর্যন্ত কার্যকর করেননি। ১২ বছর হয়ে গেছে কিন্তু যেভাবে বিচারক নিয়োগ হচ্ছে এই পুরোনো আমলের চিন্তা-চেতনার মধ্য দিয়ে আমরা সেভাবে সৎ, যোগ্য ও মেধাবী বিচারক পাচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বড় কথা যে, সুস্পষ্টভাবে রুলস না থাকায় যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে এই বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক অপব্যবহার করা হচ্ছে সরকারের আইনজীবী বা জ্যেষ্ঠ বিচারক থেকে বিচারক নিয়োগের যে প্রক্রিয়া বা প্রথা সেটাও অনেকাংশে আমরা দেখছি যে একের পর এক লঙ্ঘন করা হচ্ছে। ইদানীং আরও একটা বিষয়ে খুবই শঙ্কিত যে দীর্ঘদিন ধরে আইনজীবী এবং সিনিয়র বিচারকদের থেকে যে বিচারপতি নিয়োগ হতো তা ছিল দুই অনুপাত এক।
অর্থাৎ তিনজন আইনজীবী নিলে একজন বিচারক থেকে নেওয়া হতো। সেটাও এখন লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং সুস্পষ্টভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে নিম্ন আদালত থেকে যেখানে জ্যেষ্ঠ বিচারকদের আসার কথা তাদের না নিয়ে অনেক নিচে থেকে নিয়ম লঙ্ঘন করে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু হাইকোর্ট নয় সুপ্রিম কোর্টেও নানাভাবে লক্ষ্য করছি জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী আরও বলেন, কয়েক বছর পরপরই আইনমন্ত্রীর মুখ থেকে শুনি যে তারা এটা (নীতিমালা) করে ফেলবেন। সম্প্রতি তিনি বলেছেন যে, সরকারের এই মেয়াদে তারা আইনটা প্রণয়ন করবেন। বাস্তবে যদি এর প্রতিফলন দেখতে পাই তাহলে আমরা মনে করি এটা একটা সুফল বয়ে আনবে।
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন জাগো নিউজকে বলেন, দেশের উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে একটা নীতিমালা করতে হবে। এটা খুবই দরকার। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও কোনো সরকারই সেটি করেনি। না করায় হয়েছে কী? যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে তখন তার ইচ্ছামতো বিচারক নিয়োগ দেন। আমরা বহুবার বলেছি, বিশেষত আমি প্রেসিডেন্ট (সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি) থাকাকালে, আমার আগের প্রেসিডেন্ট সাহেবরাও বিচারপতি নিয়োগে আইন করার কথা বলেছেন। প্রধান বিচারপতিরাও সেটি বলেছেন। দেশের মানুষও তা চায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আইনটি আজ পর্যন্ত হয়নি।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে একটি রিট আবেদন করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ একটি গাইডলাইন করে দিয়েছিলেন। বিচারক নিয়োগের সময় সেটিও ফলো করা হচ্ছে না।