১২ বছর সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ১৪৬ মৌসুমি শ্রমিক

দুবেলা দুমুঠো খেয়ে পরিবার নিয়ে বাঁচতে বাধ্য হয়ে ন্যায্য পাওনা বুঝে পেতে সরব হয়েছেন শ্রমিকরা। 

১২ বছর সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ১৪৬ মৌসুমি শ্রমিক

প্রথম নিউজ,হাসানুল কবির নাজির কুষ্টিয়া: বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (ব্যাট) কুষ্টিয়া লীফ ফ্যাক্টরীতে কর্মরত ১৪৬ জন মৌসুমি শ্রমিকের ভবিষ্যত অনিশ্চিত। দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ তারা কোম্পানী ও শ্রম আইনের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। শেষ পর্যন্ত দুবেলা দুমুঠো খেয়ে পরিবার নিয়ে বাঁচতে বাধ্য হয়ে ন্যায্য পাওনা বুঝে পেতে সরব হয়েছেন শ্রমিকরা। 

ইতিমধ্যে গত ৪ জুলাই ভুক্তভোগী শ্রমিকরা "ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কুষ্টিয়া ফ্যাক্টরীতে দীর্ঘ ১২ বছর কর্মরত ১৪৬ জন মৌসুমি শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ে সৃষ্ট ক্ষোভ নিরসন" প্রসঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন পাঠিয়েছেন। এই আবেদনের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে: কুষ্টিয়া-৩(সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু, শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, শ্রম পরিদপ্তরের শ্রম পরিচালক, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন এর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক, কুষ্টিয়া জেলার জেলা প্রশাসক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর খুলনা এর পরিদর্শক ও কুষ্টিয়ার উপ-মহাপরিদর্শক, বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ এর এমডি, হেড অব এইচ আর, হেড অব লীফ ও কুষ্টিয়ার প্লান্ট ম্যানেজার, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোং লিমিটেড শ্রমিক/কর্মচারী ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক এবং একই শ্রমিক সংগঠনের কুষ্টিয়া ইউনিটের কার্যকরী সভাপতি/ সহ-সম্পাদককে। তারপরও সমাধান দূরে থাক, আশ্বাসও মেলেনি। তবে শ্রমিকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহাবুবউল আলম হানিফ তাদের সাথে সরাসরি সাক্ষাত করতে রাজি হয়েছেন বলে একটি সূত্র দাবি করেছে। 

সবশেষ গতকাল ১০ জুলাই ভুক্তভোগী শ্রমিকরা ন্যায্য দাবি আদায়ে সৃষ্ট ক্ষোভ নিরসনকল্পে শ্রমিকদের স্বার্থে গণমাধ্যমের নিরপেক্ষ ও অগ্রণী ভূমিকা কামনা করে কুষ্টিয়া জেলা পর্যায়ে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমের সম্পাদক/জেলা প্রতিনিধি বরাবর আবেদন পাঠিয়েছেন। আবেদন পত্রে তারা উল্লেখ করেছেন-"আমরা ১৪৬ জন মৌসুমি শ্রমিক ২০১২/২০১৩ সালে কোম্পানীর অধিন লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে ও উত্তীর্ণ হয়ে কুষ্টিয়া লীফ ফ্যাক্টরীতে তামাক প্রক্রিয়াজাত করনের সাথে সরাসরি জড়িত আছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমরা কোম্পানী ও শ্রম আইনের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আছি। এর মধ্যে এক নিয়োগপত্র, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি, বীমা, ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার, কোম্পানির মুনাফা অন্যতম। উল্লেখ্য যে, আমরা ১৪৬ জন মৌসুমি শ্রমিকরা যাদের স্থলাভিষিক্ত তারা উপরোল্লিখিত সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করতো ।

ভুক্তভোগী শ্রমিকরা আরো উল্লেখ করেছেন- দীর্ঘ ১২ বছর আমরা উপরে উল্লেখিত দাবিগুলো আদায়ের জন্য সিবিএ নেতাদের লিখিত ও মৌখিক ভাবে জানিয়ে আসছি। কিন্তু সিবিএ নেতারা বরাবরই নিয়োগ বানিজ্য সহ নিজেদের স্বার্থ আদায়ে কোম্পানীর ব্যবস্থাপকদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। ২০১৩ সালে কোম্পানীর বাৎসরিক মুনাফা বন্টনের সময় কোম্পানীর ট্রাষ্ট্রিবোর্ড ২০১২ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ১১৬ জন মৌসুমি শ্রমিককে মুনাফায় অন্তর্ভুক্ত রেখে মুনাফার টাকার অংশ ঘোষনা করে। ঐ সময় ট্রাষ্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন ভাদু মিনু পরিষদের নির্বাচিত সভাপতি গোলাম রসুল ভাদু। কিন্তু ঐ বছর নির্বাচন থাকায় বিরোধী দলের আপত্তির কারণে ১১৬ জন শ্রমিক কোম্পানীর মুনাফা থেকে বঞ্চিত হই। তখন থেকে আমরা ১৪৬জন মৌসুমি শ্রমিকরা কোম্পানীর মুনাফায় অংশগ্রহণের দাবি আদায়ে সোচ্চার হয়ে উঠি। কিন্তু আমাদের ন্যায্য দাবিকে তোয়াক্কা না করে ২০১৫ সালে কোম্পানীর বাৎসরিক মুনাফা বন্টনের সময় কোম্পানীর ট্রাষ্টিবোর্ডের মিটিং-এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক কোম্পানীর ব্যবস্থাপকদের ৫শ জনের অধিক কর্মকর্তা কর্মচারিকে কোম্পানীর মুনাফায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে ১৪৬ মৌসুমি শ্রমিকদের মাঝে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং প্রতিবাদ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের সিবিএ-র নির্বাচনে সিবিএ ও ম্যানেজমেন্টের যোগসাজশে ১৪৬ জন মৌসুমি শ্রমিককে ভোটাধিকার প্রয়োগে বিরত রাখা হয় যা এখনও অব্যাহত আছে। অথচ ২০১৩ ও ২০১৫ সালের সিবিএ নির্বাচনে আমরা ১৪৬ জন মৌসুমি শ্রমিক ভোট প্রয়োগ করি। বিভিন্ন দাবি আদায়কে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে সকল শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে যে কোন মূহুর্তে শ্রমিক অসন্তুষ্ট দেখা দিতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কুষ্টিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।