রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে বিদেশে প্রবাসী এলাকা সফর করবেন ব্যাংকাররা
তারা সরেজমিন গিয়ে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের কি কি সমস্যা হয়, কিভাবে এসব সমস্যা সমাধান করেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে কিভাবে রেমিট্যান্স বাড়ানো যায়- সেসব বিষয় জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
প্রথম নিউজ, অনলাইন : ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বিভিন্ন দেশের যেসব এলাকায় বাংলাদেশিরা থাকেন সেসব এলাকা সফর করবেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। তারা সরেজমিন গিয়ে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের কি কি সমস্যা হয়, কিভাবে এসব সমস্যা সমাধান করেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে কিভাবে রেমিট্যান্স বাড়ানো যায়- সেসব বিষয় জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
বৃহস্পতিবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) থেকে ব্যাংকগুলোতে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা ব্যাংকের বা যৌথ খরচে বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশি প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করতে পারবেন। এ কাজে বিদেশে যেতে আগ্রহীদের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাফেদার কাছে আবেদন করতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। কিন্তু বিদেশে জনশক্তি গমণের প্রবণতা বেড়েছে। বিদেশে যারা যাচ্ছেন, তারা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন না। হুন্ডি বা ব্যাংকবহির্ভূত বিভিন্ন চ্যানেলে পাঠাচ্ছেন। এতে একদিকে প্রবাসীরা মাঝে মধ্যে টাকা না পেয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। অন্যদিকে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা থেকে। ফলে দেশে ডলার সংকট প্রকট হচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে- মোট রেমিট্যান্সের ৩০ থেকে ৪২ শতাংশ হুন্ডির মাধ্যমে আসছে। এসব রেমিট্যান্সকে ব্যাংকিং চ্যানেলে আনতে পারলে দেশে ডলার সংকটের সমাধান খুব সহজেই করা সম্ভব।
দুই বছর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গিয়েছিল। তখন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল দেশটিতে গিয়েছিল কারণ অনুসন্ধান করতে। তারা ঢাকায় ফিরে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে সেটি সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠায়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবাসীরা বেশকিছু কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেন না। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- তারা যেখানে কাজ করেন আর যেখানে থাকেন এই দুইয়ের কাছাকাছি কোনো স্থানে ব্যাংকিং সুবিধা নেই। কিন্তু তাদের আশপাশেই রয়েছে হুন্ডি চক্র। এই চক্রের সদস্যরা প্রবাসীদের আবাস স্থলে গিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে তা দ্রুত দেশে পাঠায়। অন্যদিকে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে আত্মীয়স্বজনরা তা দ্রুত পান না। আর হুন্ডিতে কোনো খরচ লাগে না। কিন্তু ব্যাংকের সার্ভিস চার্জ বাবদ বেশ টাকা কেটে নেওয়া হয়। এসব সমস্যা সমাধানে প্রতিনিধিদলের সুপারিশ ছিল প্রবাসীরা কাজ করেন বা থাকেন এমন এলাকায় বাংলাদেশের ব্যাংকিং সুবিধা বাড়ানো।
বিদেশে যেসব বাংলাদেশিরা রয়েছেন তাদের অনেকের ভাষাগত সমস্যা রয়েছে। ফলে তারা ওইসব দেশের ব্যাংকে গিয়ে লেনদেন করতে পারেন না। অনেকে কাগজপত্রের অভাবে ব্যাংক হিসাবও খুলতে পারেন না। এসব সমস্যা সমাধানে ব্যাংকগুলোকে নজর দিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সূত্র জানায়, বর্তমানে বিদেশে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় বিভিন্ন ধরনের এক্সচেঞ্জ হাউজ গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশি মালিকানায়ও এক্সচেঞ্জ রয়েছে। তারা প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে দেশে পাঠায়। আর প্রবাসীরা দেনদরবার করে যাদের কাছ থেকে বেশি দাম পান তাদের মাধ্যমেই অর্থ পাঠান। এতে বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স নিয়ে একটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দাম বেশি দিলে রেমিট্যান্স দিচ্ছে, তা না হলে দিচ্ছে না। এতে ডলারের দামের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর হাতে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিদেশে প্রবাসীদের এলাকায় গিয়ে ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা প্রবাসীসহ এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর সঙ্গে কথা বলে রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলে আনার উদ্যোগ নিতে পারে। প্রয়োজনে এক্সচেঞ্জ হাউজের সঙ্গে চুক্তি করতে পারে। ব্যাংক চাইলে ছোট ছোট আকারে বাংলাদেশের এজেন্ট ব্যাংকের মতো বুথ স্থাপন করতে পারে। প্রবাসীদের ব্যাংক হিসাব খুলে দ্রুত রেমিট্যান্স পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে পারে।
বাফেদা মনে করে বিদেশে প্রবাসী এলাকায় সব ব্যাংক একই স্থানে যেতে দেওয়া হবে না। একেক ব্যাংক একেক দেশে বা স্থানে যাবে। এতে প্রবাসীদের কাছে ব্যাংকিং সুবিধা বাড়ার পাশাপাশি সেবা পাওয়া সহজ হবে। দ্রুত রেমিট্যান্স সংগ্রহ করাও সম্ভব হবে।
এদিকে বাফেদা রেমিট্যান্স সংগ্রহের ক্ষেত্রে নিজস্ব তহবিল থেকে প্রণোদনা দেওয়ার ব্যাপারে কোনো হার এবারের চিঠিতে উল্লেখ করেনি। আগের নিয়মে ব্যাংকগুলো নিজস্ব তহবিল থেকে সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারে। তবে অনেক ব্যাংক এখন ওই হারের চেয়ে বেশি প্রণোদনা দিচ্ছে।