অস্বস্তি-অসন্তোষের মধ্যেই আসন সমঝোতা

ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেই এ কৌশল নেয়া হয়েছে।

অস্বস্তি-অসন্তোষের মধ্যেই আসন সমঝোতা

প্রথম নিউজ, অনলাইন : নানা জটিল সমীকরণ আর অস্থিরতায় জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোট শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। দফায় দফায় দুই পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে ওই সমঝোতা হয়। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে কোনো ধরনের ঘোষণা দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেই এ কৌশল নেয়া হয়েছে। এজন্য জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতাকে কৌশলগত বলছে আওয়ামী লীগ। ৪০ থেকে ৫০টি আসন নিয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে চায় জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। এজন্য ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা আসন সমঝোতার জন্য দেন দরবার করেছেন। 

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে একটি নির্দিষ্টসংখ্যক আসনে সমঝোতার বিষয়টি জাতীয় পার্টির নেতাদের জানিয়েছে। জাতীয় পার্টি ইস্যুতে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি তাদের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করবে। তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চলছে। সবাই শুধু বিভিন্ন দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে কথা বলেন। 

এই সময়টাকে, আমাদের এই অ্যালায়েন্সটাকে আমরা যতটা রাজনৈতিক মূল্য দিচ্ছি, আসনের ব্যাপারটা কম। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তারা গতবারের চেয়ে এবার আরও বেশিসংখ্যক আসন নিয়ে সংসদে যেতে চাইছেন এমনটা জানিয়েছেন জাপার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। একাদশ জাতীয় সংসদে দলটির ২২টি  আসন থাকলেও তাদের এখন দাবি ৪০ থেকে ৫০টি। দলটির নেতাদের অভিমত হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে না। ফলে আগামী নির্বাচনে সবার নজর থাকবে ৪টি বিষয়ের দিকে। নির্বাচনের দিন সহিংসতা, ভোটে কারচুপি, কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি এবং সংসদের গঠনটা কেমন হয় সেদিকে। জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আমরা একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। এ ব্যাপারে আমরা দুটো দলই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেহেতু রাজনৈতিকভাবে বড় দল হলো আওয়ামী লীগ এবং তারা নির্বাচন করছে, আমরাও নির্বাচন করছি। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত এই দুটি দলের। সেজন্য আমরা একটা সম্পর্ক উন্নয়ন করছি। অন্যদিকে ১৪ দলীয় জোট শরিকদের প্রাথমিকবাবে ৭টি আসন ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে শরিক দলগুলোর মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তুষ্টি। শরিক একটি দলের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে জোট নেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে আসন সমঝোতা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন। তবে গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শরিকদের অসন্তুষ্টি নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হয়নি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। 

তারা জানান, জরিপ, জনপ্রিয়তা ও সার্বিক দিক বিবেচনা করেই শরিকদের আসন নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। মুখ দেখে এবার কাউকে ছাড় দেয়া হয়নি। যারা নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে জয়লাভ করে আসতে পারবেন কেবল তাদেরকেই আসন নিয়ে ছাড় দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, শরিকদের কাউকে নির্বাচনে বিজয়ের গ্যারান্টি দেবে না আওয়ামী লীগ। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই বিজয়ী হতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কোনো ছাড় দেবে না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে থাকা শরিক দলগুলোকেও ৭টির বেশি আসন ছেড়ে দেয়ার সুযোগ নেই। 

তিনি বলেন, এখন শরিক দলের যত নেতা আছেন, তাদের সন্তুষ্ট-অসন্তুষ্ট হওয়ার কিছু নেই। যার যার প্রতীকেই নির্বাচন করতে পারবে সবাই। তাদের কেউ বাধা দেয়নি, দেবেও না। তাদের সবার এবার নির্বাচন করার সুযোগ আছে। তারা যার যার প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। কারও ব্যাপারে কোনো বাধা নেই। এর আগে বৃহস্পতিবার শরিক দলগুলোর জন্য ৭টি আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু জানান, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিকে তিনটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ-ইনু) তিনটি এবং জাতীয় পার্টিকে (জেপি-মঞ্জু) একটি আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননকে বরিশাল-৩, মুস্তফা লুৎফুল্লাহকে সাতক্ষীরা-১ এবং ফজলে হোসেন বাদশাকে রাজশাহী-২ আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া, জাসদের হাসানুল হক ইনুকে কুষ্টিয়া-২, এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনকে বগুড়া-৪ এবং মোশাররফ হোসেনকে লক্ষ্মীপুর-৪ আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এর বাইরে জাতীয় পার্টির (জেপি-মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে পিরোজপুর-২ আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছে। 

শরিকদের আসন পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে  ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, আমরা বিনয়ের সঙ্গে আসন পুনর্বিবেচনার দাবি করেছি। আমরা বলেছি, যে ৭টি আসনের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটা আরেকটু বাড়ানো দরকার এবং জোটের প্রার্থীর আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রত্যাহার করা দরকার। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের মধ্যদিয়ে চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছি। আমরা আমির হোসেন আমুর প্রস্তাবকে প্রাথমিক প্রস্তাব হিসেবে গ্রহণ করে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছি। এদিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলসহ জাতীয় পার্টির সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা সাপেক্ষে ‘কৌশলগত সিদ্ধান্ত’ নেবে আওয়ামী লীগ বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। শরিকদের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, শরিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, সিদ্ধান্তের অগ্রগতি হয়েছে। যারা যোগ্যতা?দের আসন দেয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টিও দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় কাজ করছে। তাদের সঙ্গেও আলাপ চলছে। এক্ষেত্রে ১৪ দলসহ জাতীয় পার্টির সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা সাপেক্ষে কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগ। এদিকে গতকাল সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত জোট শরিকদের কয়েকজন ব্যক্তিগতভাবে আমির হোসেন আমুর সঙ্গে বৈঠক করেন।