‘উপস্থাপনা পেশাটা দারুণ উপভোগ করি, রেজাউদ্দিন স্টালিন

প্রথম নিউজ, অনলাইন: রেজাউদ্দিন স্টালিন আশির দশকের অগ্রগণ্য কবি। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া এ গুণী কবি সাহিত্যের মাঠে তো আছেনই, ব্যস্ত সময় পার করছেন বেতার-টিভিতেও। বিটিভিসহ চারটি চ্যানেলের অনুষ্ঠানের নিয়মিত উপস্থাপক তিনি। সমসাময়িক ব্যস্ততা ও বিভিন্ন বিষয়ে কবি কথা বললেন ।
কেমন আছেন?
ভালো আছি। এই মুহূর্তে প্রেস ক্লাবের একটি অনুষ্ঠানে আছি।
বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলে আপনাকে নিয়মিত উপস্থাপনায় দেখা যায়।
এগুলো নিয়ে জানতে চাই।
এটিএন বাংলায় ২০ বছর ধরে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছি, নাম ‘সবার জন্য’। নজরুল বিষয়ক দুটি অনুষ্ঠান করি চ্যানেল ২৪-এ—‘চেতনায় নজরুল’ ও জিটিভিতে ‘আমারে দেব না ভুলিতে’। আরটিভিতে করি ‘অক্ষরের গল্প’।
এই অনুষ্ঠানে নিভৃতচারী গুণী মানুষদের খুঁজে বের করে সাক্ষাৎকার নিই। যারা নিজে থেকেই ভালো ভালো কাজ করেন; রাজনৈতিক জায়গা থেকে, পেশাগত জায়গা থেকে—তারাই আসেন অনুষ্ঠানে। এটিএন নিউজে করি ‘ছাড়পত্র’, যদিও কিছুদিন স্পন্সর জটিলতায় বন্ধ আছে অনুষ্ঠানটি। সমাজের নানা অসংগতি নিয়ে এই অনুষ্ঠান। পলিথিন ব্যবহারের অপকারিতা, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, যত্রতত্র ময়লা ফেলা—এসব পরিবেশ কতটা ক্ষতি করে সেটা তুলে ধরি।
একটা সময় বিটিভির নিয়মিত ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘চাওয়া পাওয়া’ করতাম। মাঝখানে তো রাজনৈতিক কারণে সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। গত ঈদ থেকে আবার অনুষ্ঠানটি করছি। এবারের ঈদের পর্বটি বেশ সাড়াও ফেলেছে।
উপস্থাপনার ব্যস্ততায় লেখালেখিতে ছেদ ঘটছে না?
না। উপস্থাপনা আমার পেশা, লেখালেখি আমার নেশা। আমি রাত জেগে পড়াশোনা করি। এখনো দিনে তিন-চার ঘণ্টা করে পড়াশোনা করি। তা ছাড়া আমি লিখি কম। সব সময় চেয়েছি ভালো লিখতে। অযথা সংখ্যা বাড়ানোর ইচ্ছা কোনো দিনই ছিল না। আমার কবিতাগুলো দেখবেন, একটা থেকে আরেকটা আলাদা, ব্যতিক্রম। এটা সম্ভব হয় লেখার মানের দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার কারণে।
উপস্থাপনায় জড়ালেন কিভাবে?
যখন নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে অবসর নিলাম খানিকটা বেকার হয়ে গেলাম। তখন উপস্থাপনায় নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করলাম। ধীরে ধীরে বিভিন্ন চ্যানেল থেকে ডাক পেতে শুরু করলাম। এখন উপস্থাপনা পেশাটা দারুণ উপভোগ করি।
৬০টি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন। এর মধ্যে আপনার প্রিয় কাব্যগ্রন্থের নাম জানতে চাই।
১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয় আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ফিরিনি অবাধ্য আমি’, এটা আমার খুব প্রিয়। এ ছাড়া ‘আশীর্বাদ করি আমার দুঃসময়কে’, ‘আঙ্গুলের জন্য দ্বৈরথ’, ‘হিংস্র নৈশ্য ভোজ’, ‘সব জন্মে শত্রু ছিল যে’ও খুব প্রিয় আমার।
২০০৫ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছিলেন। কবি হিসেবে আর কোনো অপূর্ণতা আছে?
কবিরা সারা জীবনে একটা অসাধারণ কবিতা লিখতে চায়। যেটা সবার মুখে মুখে থাকে। যেমন জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’, কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’—এমন একটা কবিতা লেখার অপেক্ষায় আছি। জানি না কবে এই অপেক্ষার অবসান হবে।
আপনার কবিতা ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, উড়িয়া, রুশ, চীন, জাপান, জার্মানি ও ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেছেন বিদেশি কবিরা। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কিভাবে?
এখন পর্যন্ত ৪২টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে আমার কবিতা। রাশিয়া, ইউক্রেন, ফ্রান্স, জাপান, চীন, ভারত, পাকিস্তানসহ অনেক দেশের বড় কবিদের সঙ্গে সম্পর্ক আমার। করোনাকালে যখন ঘরে বসেছিলাম তখনই যোগাযোগটা হয়। আমিসহ অন্যান্য দেশের কবিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই একে অন্যকে খুঁজে নেন। ভার্চুয়াল একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। এখন আমরা নিয়ম করে ভার্চুয়ালি কথা বলি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করি। অনেকে আমাকে মনে করতেন ভারতীয় কবি। তাদের কাছে পরিষ্কার করেছি, আমি বাংলাদেশি। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। আমাদের সংস্কৃতি অনেক উঁচুমানের। আমাদের দেশের আরো কয়েকজন কবিকে আমি তাঁদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। তারা এখন আমাদের সাহিত্যকে অনেক ওপরে স্থান দেন। নিয়ম করেই বাংলা কবিতা অনুবাদ করেন নিজেদের ভাষায়। এভাবে বাংলা সাহিত্য পৌঁছে যাচ্ছে অনন্য উচ্চতায়।
আপনার কবিতা থেকে গান হয়েছে। জুলাই বিপ্লবে প্রমিথিউসের বিপ্লব একটি গান করেছেন। সেটিও বেশ সাড়া ফেলেছিল...
হ্যাঁ। জুলাই আন্দোলনের শুরুর দিকে। ৬ জুলাই গানটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিপ্লব প্রকাশ করেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে সেটি ছড়িয়ে পড়ে। এক দিনেই ১০ লাখের বেশি মানুষ গানটি শুনেছিলেন। বলতে পারেন, জুলাই আন্দোলনের গতিকে আরো বাড়িয়ে তোলে গানটি। এটি ছাড়াও ‘চোখের ভেতর মুখ দেখেছি’, ‘অভয়’—কবিতা দুটি থেকেও গান হয়েছে।
জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আপনি। তরুণ প্রজন্মের কবিদের জন্য কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন?
অপরাজনীতির কারণে কবিরা আসলে দুই ভাগে বিভক্ত। গত ১৭ বছরে আমার একটা কবিতার বইও সরকার নেয়নি। অথচ কাদের বই সরকারি খরচে প্রকাশিত হয়েছে, কেনাবেচা হয়েছে দেখেছেন। তরুণ কবিরা সবাই হৃদয় ভাঙার দল। তারা বই প্রকাশ করতে গেলে পকেট থেকে টাকা দেওয়া লাগে। তাহলে বাংলা একাডেমির কাজ কী? বছরে বছরে শুধু বই মেলা করা? মেধাবী তরুণদের বই প্রকাশের উদ্যোগ তো নিতে পারে তারা। আমরা বিষয়টি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। আশা করছি, সমস্যার সমাধান হবে। তরুণরা বই প্রকাশে সহযোগিতা পাবে।