অর্থনীতি নিয়ে রোডম্যাপ না থাকায় হতবাক হয়েছি : ড. দেবপ্রিয়

প্রথম নিউজ, অনলাইন: গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো এবং বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, অর্থনৈতিক সংস্কারের কোনো রোডম্যাপ বা পথরেখা সরকারের কাছ থেকে এলো না। কোনো মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা সরকার করল না। এতে আমি হতবাক হয়েছি। অন্তর্বর্তী সরকার তো মধ্য মেয়াদেই রইল।
সরকারের এই পরিকল্পনার অভাবটা আমি বেশি অনুভব করেছি গত মাসে বিনিয়োগ সম্মেলনের সময়। সম্মেলনে যারা এসেছিলেন, তাদের অনেকই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, যেসব কথা সরকার বলছে, সেগুলোর নীতি কাঠামো কী? কর, বিনিয়োগ, অর্থ প্রত্যাবাসন, রপ্তানি সুবিধা ইত্যাদি বিষয়ে সরকারের নীতি নিয়ে তারা কোনো সমন্বিত ডকুমেন্ট তো পেলেন না।
জাতীয় বাজেট সামনে রেখে অর্থনীতিতে সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার নিয়ে এত কথা বললেও অর্থনীতি নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা আমরা দেখিনি।
সরকার অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত কয়েকটি কমিটি এবং টাস্কফোর্স গঠন করেছিল, শ্বেতপত্র কমিটি দিয়ে যার শুরু। আমরা এসবের ফলাফল এখনও দেখলাম না
বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পতিত সরকারের বাজেট নিয়ে এগিয়েছে। সরকার চলতি বাজেটকে কী কী নীতির ভিত্তিতে সংশোধন করল, তা বুঝলাম না। পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো হলো কিনা, ভর্তুকি, সুদ পরিশোধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে কোন কোন নীতি নেওয়া হলো– এগুলো সংশোধনের সময় সরকার কিছুই বলল না।
অন্যদিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৪০ শতাংশই ভুয়া বলে আমরা শ্বেতপত্রে লিখেছি। এডিপি কোন নীতিমালার ভিত্তিতে সংশোধন হলো, মেগা প্রকল্প কোনটা বাদ দেওয়া হলো, কোনটার মূল্য সংশোধন করা হলো– সেগুলোও বুঝলাম না। বছর বছর ধরে বিভিন্ন প্রকল্প ১ লাখ বা ২ লাখ টাকা দিয়ে রাজনৈতিক কারণে চলমান রাখা হয়েছিল, নতুন এডিপিতে সেগুলো সরকার বাদ দিল কিনা, তাও জানতে পারলাম না। যেহেতু সরকারের ব্যয় আগামী বাজেটে সংখ্যাগতভাবে এবং জিডিপির অংশ হিসেবে কমবে, সেহেতু এই কম টাকা খরচের নীতির বিষয়েও স্বচ্ছতা দেখছি না। সুতরাং এই সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে রয়ে গেলাম।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আবার জ্বালানি খাত, ব্যাংক খাত, কর ব্যবস্থাপনাসহ কিছু ক্ষেত্রে সরকার যেসব সংস্কার করার চেষ্টা করছে, তার সঙ্গে বাজেটের সম্পর্ক পরিষ্কার হলো না। সরকার একবার নিত্যপণ্যসহ কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাট আরোপ করতে গিয়ে পিছু হটেছে। এগুলো অব্যাহত থাকবে কিনা এবং আগামী দিনে শুল্ক ব্যবস্থাপনা বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কোন ধরনের ছাড় দিতে যাচ্ছে, তাও পরিষ্কার নয়। বাজেট প্রস্তুতির জন্য সরকারের ভেতরে যে সমন্বয় দরকার, তার অভাব দেখছি।
বিদেশিদের মতো দেশীয় উদ্যোক্তা বা বিনিয়োগকারীরাও নীতির দ্রুত পরিবর্তন নিয়ে শঙ্কিত থাকেন মন্তব্য করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এখন যা করছে, তা আগামীতে কতটুকু টিকবে– সেই চিন্তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে। সেই চিন্তা তাদের মনের মধ্যে আরো জোরালো হয়েছে এ কারণে যে, সরকার তো কোনো মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা জানতে পারল না। এই সরকারের কোনো অর্থনৈতিক ‘মেনিফেস্টো’ নেই। কোনো সমন্বিত সংস্কার কর্মসূচি নেই। নীতির ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রক্রিয়াগত কোনো নিশ্চয়তা নেই। কেননা, ব্যাপক আলোচনা হয়নি। বিশেষত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মতামত নেওয়া হয়নি। সরকার অন্য সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছে; কিন্তু অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে করেনি। ইতোমধ্যে এর পরিণতি আমরা দেখতে পাচ্ছি। যেমন–রাজস্ব বিষয়ে অধ্যাদেশ নিয়ে কয়েকদিন আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বন্দরে অচলাবস্থা তৈরি হয়। শেয়ারবাজার নিয়েও বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে।