প্রথম নিউজ, অনলাইন: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, শ্রমজীবী মানুষের আয় দিন দিন কমে যাচ্ছে। গ্যাস বিদ্যুতের অভাবে কলকারখানা বন্ধ হচ্ছে। এখনও প্রতিদিন শ্রমিক ছাঁটাই চলছে। বেকার হচ্ছে হাজার হাজার শ্রমিক। শ্রমিকের জীবনে অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নেই। বুধবার (৩ এপ্রিল)দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শ্রমিকদল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, পতিত হাসিনা সরকারের লুটপাট ও দূর্নীতির কারনে সরকারী পাট ও চিনিকলগুলো বন্ধ করে হাজার হাজার শ্রমিককে পথে বসানো হয়েছে। তাঁরা স্ত্রী সন্তানসহ অর্ধহারে-অনাহানে দিনাতিপাত করছে। বই-খাতা ক্রয় করতে না পেরে বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না। প্রচলিত নিয়মে ৫ বছর পর পর নূন্যতম মজুরী ও জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণা হয়ে থাকলেও, বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময়ে গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে নূন্যতম মজুরী ও জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণা করা হয়নি। অথচ চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতিতে শ্রমজীবি মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত।
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আগামীকাল দুপুর ২ ঘটিকায় নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশ করবে জানিয়ে রিজভী বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার ১ মে, ঐতিহাসিক মহান মে দিবস। বিশ্ব স্বীকৃত আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকদের রক্তাক্ত আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালনের জন্য বাংলাদেশের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ শ্রমিক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তম প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আগামীকাল দুপুর ২ ঘটিকায় নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশ করবে। এ বিষয়ে শ্রমিক দলের পক্ষ থেকে পুলিশ কমিশনার বরাবরে পত্র দিয়ে তাদেরকে অবহিত করা হয়েছে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের বিবিএস এর হিসেব অনুযায়ী ১২ কোটি ভোটারের মধ্যে ৭ কোটি ৩৫ লাখ শ্রমিক। শ্রমিক সমাজের মর্যাদার জন্য একটি দিন বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে-মে দিবস। বাংলাদেশে আজ সবচেয়ে অবহেলিত শ্রমিক সমাজ। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, জীবনযাত্রার ব্যায় বৃদ্ধি, বাজার মূল্যের সাথে অসংগতি, কম মজুরীতে শ্রমিক সমাজের এখন বেঁচে থাকাই কষ্টকর। অগণতান্ত্রিক শ্রম আইনে মালিক পক্ষের স্বার্থকে প্রধান্য দেওয়ায় শ্রমিক সমাজ সর্বত্র হয়রানীসহ নানাবিধ অসুবিধার সম্মূখীন হচ্ছে। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া ও অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার থেকে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবা বিল ২০২৩ এর মাধ্যমে শ্রমিক কর্মচারীদের দাবি উত্থাপনের অধিকারকে আইন করে বন্ধ কারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রিজভী বলেন, ফ্যাসিষ্ট আমালে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরে ঢাকার মহাসমাবেশের প্রাক্কালে সমাবেশ ও আন্দোলনকে নস্যাৎ করার অংশ হিসেবে হাজার হাজার বিএনপি ও শ্রমিক দল নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ঐ সময়ে কারাবন্দী শ্রমিকদল নেতা ফজলুর রহমান কাজলের হাতে হ্যান্ডকাপ, পায়ে ডান্ডা বেড়ী পরা অবস্থায় হাসপাতালের বারান্দার ফ্লোরে বিনা চিকিৎসায় হত্যা, মজুরী বৃদ্ধির আন্দোলনে চার জন গার্মেন্টস শ্রমিক- আঞ্জুয়ারা খাতুন, রাসেল হাওলাদার, জালাল উদ্দিন ও মো. ইমরানকে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ ফ্যাসিষ্ট খুনী হাসিনা পতনের পর ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে মহান মে দিবস পালিত হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা অভ্যুত্থানে অগনিত শ্রমিকের আত্মদান ফ্যাসিস্টের পতনকে ত্বরান্বিত করে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের ৭১ জন নেতাকর্মী, ৩০ জন রিক্সা শ্রমিক ও অসংখ্য নাম জানা-অজানা ভাসমান শ্রমিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন। শ্রমিক শ্রেণীর আত্মত্যাগ কেউ কেউ স্বীকার করতে কার্পণ্য করে। একটি গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তণ, ভোটাধিকার প্রয়োগ, শোষন ও বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা শ্রমিকের আজন্ম স্বপ্ন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, সরকারী দপ্তর গুলোতে নিয়মিত পদ বিলুপ্ত করে আউট সোর্সিং নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ফলে শ্রমের ক্ষেত্রগুলো ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে শিক্ষিত লাখ লাখ বেকার। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্র অর্জনকারী সোনালী আশঁ খ্যাত পাটের উৎপাদন ও বিপনন বন্ধ, বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য তালিকার অন্যতম উপাদান আমাদের দেশে তৈরি স্বাস্থ্যসম্মত চিনির পরিবর্তে ক্যামিকেল যুক্ত বিদেশী চিনির উপর বিদেশ নির্ভরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশ হারাচ্ছে শ্রমজিবী মানুষের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা। অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন গঠন, শোভন কাজ, নিরাপদ কর্মক্ষেত্রসহ শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থার দাবিতে শ্রমিক শ্রেণী তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্লাটফর্ম হিসাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল কর্তৃক আয়োজিত মহান মে দিবসের শ্রমিক সমাবেশে সর্বস্তরের শ্রমজীবি মানুষ অংশ নিবেন বলে আমরা আশা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে শ্রমিক দলের পক্ষ থেকে ১২ দফা দাবি সম্বলিত লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন করা হয়েছে। দাবি জানানো হয়েছে শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ গুলো বাস্তবায়নের। মহান মে দিবস পালনের লক্ষ্যে শ্রমিক দলের পক্ষ থেকে গঠিত দুইটি কমিটি নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি অধিকার প্রতিষ্ঠার এই মহান দিনে শ্রমজীবী মানুষ তাদের দুঃখ কষ্ট যাতনার প্রতিবাদে শ্রমিক দলের সমাবেশে উপস্থিত হবেন।
সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন জানিয়ে রিজভী বলেন, সমাবেশে বর্তমান শ্রম পরিস্থিতি ও সমসাময়িক জাতীয় রাজনীতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়াও শ্রমিক সমাবেশে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক মীর সরাফৎ আলী সপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।