বিনামূল্যে পূ্র্বাচলে প্লট নেন খায়রুল হক

প্রথম নিউজ, অনলাইন: পূর্বাচল নতুন শহরে ১০ কাঠা পরিমাণ একটি প্লট নিয়ে মূল্য পরিশোধ করেননি সাবেক বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। পরে তার নামে বরাদ্দ হওয়া প্লটটি বাতিলও করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। একপর্যায়ে রাজউক ও গণপূর্তের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হাত করে বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করান। ছয় বছর আগে প্রথম কিস্তির টাকা চেক দিলেও তা নগদায়ন হয়নি। ফলে টাকা না দিয়ে প্লট দখলে নেয়ার অভিযোগ ওঠে সাবেক এই বিচারপতির বিরুদ্ধে। অভিযোগটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সংস্থাটির সেগুনবাগিচার প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খায়রুল হকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
তিনি জানান, ২০০৩ সালে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ পান বিচারপতি খায়রুল হক। প্লট বরাদ্দের শর্ত মোতাবেক প্রথম কিস্তির সাড়ে ছয় লাখ টাকা পরিশোধ না করায় রাজউক বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তিনি পরবর্তীতে ২০০৯ সালে বিগত সরকারের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে পুনরায় আইন ও বিধি-বহির্ভূতভাবে প্লট হস্তান্তর গ্রহণ করেন। এখানে পুরো টাকা না দিয়ে ৬ বছর আগের প্রথম কিস্তির টাকার চেক জমা দেন, যা নগদায়ন হয়নি। তারপরেও অবসর গ্রহণের পরে যাবতীয় পাওনা পরিশোধের শর্তে তাকে অবৈধভাবে প্লট হস্তান্তর করা হয়। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশনের অংশ হিসেবে রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এবিএম খায়রুল হক কর্তৃক বিধি-বহির্ভূতভাবে প্লট হস্তগত করার অভিযোগটি কমিশন কর্তৃক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এক দুদক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বিধি-বহির্ভূতভাবে একটি প্লট গ্রহণ করেছেন এ রকম একটি অভিযোগ অনুসন্ধানে নথিপত্র চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে। সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এসএম রাশেদুল হাসান, একেএম মুর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এবং উপ-সহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন রয়েছেন এই দলে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের স্মারক নম্বর রাজ-৫/২০০৫/৪৮৫, তারিখ ২১-০৯-২০১০ অনুযায়ী ইস্যুকৃত পত্র এবং ওই পত্রের সংশ্লিষ্ট নথি (নোটিশসহ) এর ফটোকপি, যেগুলো সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে।
রাজউক’র বরাবর পাঠানো চিঠিতে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের সেক্টর-০১, রোড নং-১০২, প্লট নং-০০৪, কোড নং-৮৫১১ এর বরাদ্দসংক্রান্ত নথিপত্রের ফটোকপি চাওয়া হয়েছে। এছাড়া উপ-কর কমিশনারের কার্যালয় থেকে আয়কর রিটার্নের নথি ও তাতে দাখিল করা সকল সংযুক্ত রেকর্ডের (শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত) ফটোকপি চাওয়া হয়েছে। দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। জরুরি ভিত্তিতে এসব রেকর্ডের ফটোকপি সরবরাহ করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বা ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।
এর আগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গতকাল সকালে ধানমণ্ডির বাসা থেকে দেশের ঊনবিংশতম প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে অন্তত দু’টি মামলা রয়েছে। দুর্নীতি ও রায় জালিয়াতির অভিযোগে গত বছরের ২৭শে আগস্ট তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন। একই বছর ২৫শে আগস্ট খায়রুলের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় মামলা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী ভূঁইয়া। মামলায় সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পরিবর্তন ও জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়। এবিএম খায়রুল হক ২০১০ সালের ১লা অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ১৭ই মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ই মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন। তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ হয়ে যায়।