যে কারণে গা ভর্তি সোনা পরতেন বাপ্পি লাহিড়ী
দুই বাংলার জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও সুরকার বাপ্পি লাহিড়ী
প্রথম নিউজ, ডেস্ক : দুই বাংলার জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও সুরকার বাপ্পি লাহিড়ী। গান নিয়ে যেমন তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, তেমনই তার পোশাকও বরাবরই আকর্ষণের কেন্দ্রে থেকেছে। তার গহনা পরা নিয়ে নানা রসিকতাও শোনা গেছে। তবে কেন গহনা পরতেন, সেটিও জানিয়েছিলেন তিনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবিপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো সময়ই সোনার হার, ব্রেসলেট, আংটি ছাড়া দেখা যেত না তাকে। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, তার গহনার প্রতি ভালোবাসার কারণ। হলিউডের মিউজিশিয়ান এলভিস প্রিসলির দ্বারা তিনি অনুপ্রাণিত।
তিনি বলেছিলেন, ‘হলিউডের গায়ক এলভিস প্রিসলি সোনার হার পরতেন। আমি প্রিসলির বড় ভক্ত ছিলাম। আমি ভাবতাম, যদি কোনো দিন সফল হই, তা হলে নিজের অন্যরকম ভাবমূর্তি গড়ে তুলব। ঈশ্বরের আশীর্বাদে সোনার মাধ্যমে সেটি করতে পেরেছি। আগে লোকে ভাবত, আমি সবাইকে দেখানোর জন্যই সোনার গহনা পরি। কিন্তু সেটি ঠিক না। সোনা আমার কাছে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গলায়, হাতে ও গাজুড়ে থাকা সোনাই যেন ছিল তার স্টাইল স্টেটমেন্ট। কেউ প্রশ্ন করলেই একগাল হেসে বলতেন, তিনি সোনা বেশ পছন্দ করেন। আর এটিই সত্যি, সুযোগ ও সময় করে প্রায়ই সোনা কিনে ফেলতেন তিনি। এক কথায় যাকে বলে সোনার মানুষ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাপ্পি লাহিড়ী সবার খুব প্রিয় এমন এক সুরকার ও গীতিকার, যার তাল, ছন্দ ও লয়ে মুগ্ধ থাকা ভক্তমহল সর্বদাই বেশ পছন্দ করতেন প্রিয় বাপ্পিদাকে এই লুকেই দেখতে। কখনও গলার একগুচ্ছ হার, কখনও হাতের ব্রেসলেট, কখনও আংটি সবটাই ঝক ঝক করত, আর তাই সোনা কেনার কোনো সুযোগই ছাড়তেন না তিনি।
অসুস্থ হওয়ার পরও সোনা কিনেছেন বাপ্পি লাহিড়ী, সেপ্টেম্বর মাসে করোনার পর থেকেই শরীরে ধরেছিল ভাঙন, পাশাপাশি বার্ধক্যের জেরে শরীরে ক্ষয় দেখা যাচ্ছিল, তবু মনের জোরে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। ধনতেরাসে নিজে হাতে কিনেছিলেন নিজের জন্য উপহার, তাও সেই সোনাই।
এই শুভ দিনে সাধ্যমতো সবাই পরিবারে সোনা নিয়ে আসে, সোনার অলঙ্কারে সেজে ওঠেন, বাপ্পি লাহিড়ী সোনার অলঙ্কার নয়, তবে শেষ ধনতেরসে নিজের কোন শখটা মিটিয়েছিলেন তিনি! তা হলো কাপ-প্লেট। সোনার থালায় খাওয়ার গল্প হয়তো মধ্যবিত্ত পরিবারে সবাই শুনেছে, কিন্তু বাস্তবে সোনার পেয়ালায় চা সেবন ঠিক কতজনেরই বা ভাগ্যে জোটে, নিজের সেই সাধও পূরণ করে গিয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী।
বাপ্পি লাহিড়ীকে জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেছিলেন, বহুদিনের ইচ্ছে ছিল সোনার কাপ-প্লেটে চা খাব। সেই শখ পূরণ হলো এবার।
সেদিন তিনি আরও জানান, আজ ধনতেরাসে স্ত্রীকে বললাম, আমার জন্য একটা সোনার কাপ-প্লেট সেট কিনে আনতে। ও তাই করল। না, এবার সোনার চেন নিইনি। সোনার অনেক গহনাই রয়েছে আমাদের কাছে। তাই ভাবলাম, কাপ-প্লেটের সেট কিনে আনাটাই বেশ হবে। অনেক দিন ধরেই শখ ছিল আর এবার সেটি পূরণ হয়ে গেল।
মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টার দিকে জুহুর ক্রিটি কেয়ার হাসপাতালে মারা যান তিনি। গত বছর এপ্রিলে করোনা আক্রান্ত হয়ে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। গত এক মাস ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। সোমবার হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ি ফেরেন তিনি।
মঙ্গলবার অবস্থার অবনতি হওয়ায় ফের নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় মৃত্যু, জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: