ভয়াবহ দুর্যোগ মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের পদত্যাগ দাবী বিএনপির

ভয়াবহ দুর্যোগ মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের পদত্যাগ দাবী বিএনপির

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বন্যা উপদ্রæত অঞ্চলকে অবিলম্বে দুর্গত অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করার দাবি করে বিএনপি বলেছে পদ্মা সেতু উদ্বোধনী উৎসবে অতিরিক্ত মনোযাগী হওয়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষের আহাজারি তাদের কানে যাচ্ছে না। সকল উৎসব পরিহার করে জনগণে দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এই ভয়াবহ দুর্যোগ মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের পদত্যাগ দাবী করা হয়। সোমবার রাতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এর জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় বিএনপির নেতৃবৃন্দ এ দাবি করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান  তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য  ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যরিষ্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস,বাবু গয়েশ^র চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান,নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী,ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। 
সভায়  নিম্ন বর্ণিত সিদ্ধান্ত সমূহ গৃহীত হয়।
১। সভায় বিগত ১৩ জুন অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ পঠিত ও অনুমোদিত হয়।
২। সভায়, মাননীয় চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সভাকে অবহিত করেন। সভায় দেশনেত্রীর আশুরোগ মুক্তি কামনা করা হয়।
৩। সভায়, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জসহ কয়েকটি জেলার ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। সভা মনে করে, ভারত থেকে উজানের পানির ঢল হঠাৎ করে নেমে এসে অপ্রস্তুত জনগণকে মহা দুর্যোগের মধ্যে ফেলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বন্যার আগেই কোনও সতর্ক বানী প্রচার করতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার অপরিকল্পিত ভাবে হাওড় অঞ্চলে রাস্তা ও বাধ নির্মাণ করে এবং হাওড়ের পারে দূর্বল বাধ নির্মাণ করে অতিদ্রæত বন্যার পানি জেলা গুলোকে ডুবিয়ে দিয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ জেলা সুনামগঞ্জ ও সিলেট, সুনামগঞ্জ শহর ও সিলেট শহর প্রায় পুরোটাই পানির তলে যাওয়া লক্ষ লক্ষ মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। সুপেয় পানির অভাব, খাদ্যের অভাব সর্বোপরি নিরাপদ স্থলে যেতে না পেয়ে বান ভাসি মানুষ ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যে পড়েছে। অনেকে বন্যার পানিতে ভেসে গেছে এখন পর্যন্ত এর সঠিক তথ্য সরকার দিতে পারে নি। দাফনের জন্য শুকনো জায়গা না পেয়ে লাশ ভাসিয়ে দিতে হয়েছে। কয়েক মাস আগে বন্যায় নিয়েছে ধান এবার ভিটেবাড়ীসহ নিঃস্ব হয়েছে মানুষ। সরকারি ত্রাণ তৎপরতা নেই বললেই চলে। সেনা বাহিনীর কাছে নৌযান নেই Ñ। উদ্ধার কাজে প্রয়োজননের তুলনায় অপ্রতুল। ধীর গতির ত্রাণ তৎপরতার জন্য দুর্য়োগ চরমে পৌছেছে।
সভা মনে করে, বন্যা উপদ্রæত অঞ্চলকে অবিলম্বে দুর্গত অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করতে হবে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনী উৎসবে অতিরিক্ত মনোযাগী হওয়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষের আহাজারি তাদের কানে যাচ্ছে না। সকল উৎসব পরিহার করে জনগণে দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এই ভয়াবহ দুর্যোগ মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের পদত্যাগ দাবী করা হয়।
বন্যার পানি এরপর দেশের মধ্যাঞ্চল ও পরবর্তী নি¤œাঞ্চলকে প্লাবিত করবে। বন্যা উপদ্রæত অঞ্চলে অবিলম্বে উদ্ধার কার্যক্রম, পর্যাপ্ত পরিমান ত্রাণ বিতরণ, ঔষধ বিতরণ করার আহŸান জানানো হয়। সভায় দলের পক্ষ থেকে সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের দূর্গত মানবতার পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহŸান জানানো হয়।
সভায়, বিএনপি ত্রাণ কমিটির আহŸায়ক জনাব ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে অবিলম্বে দুর্গত এলাকায় ত্রাণ কার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।
৪। সভায়, শুধুমাত্র সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশী টাকা মাত্র ১২ মাসে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সম পরিমান অর্থ জমা হওয়ায় প্রমাণিত হয়েছে যে, এই সরকারের আমলে হাজার হাজার কোটি টাকা সরকারের লোকেরা দূর্নীতির মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কিভাবে পাচার করছে। গেøাবাল ফিনান্সিয়াল ইনিস্টিটিউট এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে গত কয়েক বছরে ৬৫ হাজার কোটি টাকা পাচারের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। সভা অবিলম্বে এ বিষয়ে সকল তথ্য জন সমক্ষে প্রকাশের জোর দাবী জানায়।
৫। সভায়, যৌথ নদী কমিশন  (জেআরসি) বৈঠক ছাড়াই ঢাকা দিল্লি যৌথ পরামর্শক কমিশনের  (জেসিসি) বৈঠকে ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের আলোচনা অর্থহীন বলে উল্লেখ করা হয়। সভা মনে করে, ( জেআরসি) বৈঠক ও বৈঠকের সুপারিশ ব্যতীত বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতে বিরাজমান দ্বিপাক্ষিক প্রধান সমস্যাই হচ্ছে দুই দেশের অভিন্ন নদীর পানি বন্টনের সমস্যা। বন্যা খরা এই দুই সমস্যাই ভাটার দেশ বাংলাদেশে প্রধান সমস্যা। সরকারের উদাসীনতা, নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারনেই এখন পর্যন্ত এই সমস্যার কোন সমাধান হয়নি। সভা মনে করে ব্যর্থতা স্বীকার করে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত।
৬। সভায়, আপতত সাংগঠনিক কার্যক্রম সীমিত করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এর নির্দেশে বিএনপি ও সকল সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের সকল নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে বন্যা দূর্গত এলাকায় সর্বাত্মক সহযোগীতা প্রদানের জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom