ভোটকে সামনে রেখে প্রশাসন সাজাচ্ছে সরকার: মির্জা ফখরুল

গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব অভিযোগ করেন তিনি।

ভোটকে সামনে রেখে প্রশাসন সাজাচ্ছে সরকার: মির্জা ফখরুল

প্রথম নিউজ, অনলাইন: নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেদের মতো সবকিছু সাজিয়ে নিতে চায় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচন শুরু হয়ে গেছে। পুলিশ ও প্রশাসনে রদবদল করা হচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ নিজেদের মতো সবকিছু সাজাতে চায়। ভোটের জন্য প্রশাসন সাজাচ্ছে সরকার। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব অভিযোগ করেন তিনি।

সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষে ওই সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক ফোরাম। ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচন কিন্তু শুরু করে দিয়েছে। নির্বাচনে তাদের রিগিং (কারচুপি) করতে হবে, সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, কন্ট্রোল করতে হবে। এজন্য সব সাজানো শুরু করে দিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, পত্রিকায় দেখলাম পুলিশে ব্যাপক রদবদল। ব্যাপক পদোন্নতি। সাড়ে সাতশ’ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। আর পোস্টিংগুলো সব করা হচ্ছে। অর্থাৎ মাথার মধ্যে নির্বাচন। আবার বুধবার দেখলাম সচিবদের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রশাসনেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। একটাই উদ্দেশ্য নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের মতো করে সব সাজিয়ে নিতে চায়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বডির যে কেমিস্ট্রি, সেই বডির কেমিস্ট্রিটাই হচ্ছে ভিন্নরকম। তারা কখনোই ভিন্নমত সহ্য করতে পারে না, কখনোই পারে না। 

মির্জা ফখরুল বলেন, লড়াই শুরু হয়ে গেছে। একদিন-দুইদিনে তো লড়াই শেষ হয় না। কারণ, প্রতিপক্ষ খুন-গুম করতে দ্বিধা করে না। রাষ্ট্রযন্ত্রকে হাতে নিয়ে নিয়েছে। পুলিশের কাছে যাবেন, অভিযোগ লেখাতে পারবেন না। কোর্টে যাবেন, সেখানে কোনো বিচার পাবেন না। আপনি কোথায় যাবেন? এই ব্যবস্থা দূর করতে হবে। এজন্যই সরকারকে সরাতে হবে। সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আওয়ামী লীগকে ‘ছদ্মবেশী বাকশাল’ আখ্যা দিয়ে ফখরুল বলেন, এরা আমাদের কথা বলা, লেখা, সংগঠন করার অধিকার বন্ধ করে দিয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। সেলফ সেন্সরশিপের মাধ্যমে সাংবাদিকরা এখন লিখতে পারছেন না। দেখা হলে, সাংবাদিকদের প্রশ্ন করা হলে তারা চাপের কথা বলেন। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, সবাই এমনটাই চায়। বাকশাল করেছিলেন আপনারা।

সবকিছু সাজিয়ে ক’দিন রাখতে পেরেছিলেন। ফেরাউন, নমরুদও চেয়েছিল। এরশাদ সাহেবও চেয়েছিলেন আজীবন ক্ষমতায় থাকতে, কিন্তু হয়নি। পারে না। কারণ, মানুষ যখন জেগে ওঠে তখন সেটা আর সম্ভব হয় না। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের এখন কোনো বিকল্প নেই। একটাই পথ হলো রাস্তা, এই রাস্তায় নেমে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে জোরদার করে, বেগবান করতে হবে। জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক ফোরামের আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন ঠাকুরের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর শিকদারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাংবাদিক নেতা এম এ আজিজ, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, সদস্য কাদের গণি চৌধুরী বক্তব্য দেন।

অন্যদিকে গতকাল বিকালে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের জুলুম-নির্যাতন বেড়ে চলছে। শুধু তাই নয়, রাজনীতি থেকে বিএনপিকে সরিয়ে দেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছে সরকার। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে খুন-হত্যা-মিথ্যা মামলায় নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।

সম্প্রতি নরসিংদীতে একটি চক্রান্তমূলক হত্যাকা- ঘটিয়ে ডাকসুর সাবেক জিএস ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সাবেক সংসদ সদস্য খায়রুল কবির খোকনকে এবং তার সহধর্মিণীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া এ মামলায় বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, নরসিংদীতে বিএনপি কার্যালয় ও খোকনের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এটির উদ্দেশ্য হচ্ছে- খোকনকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়া। অথচ ছাত্র রাজনীতি থেকে এখন পর্যন্ত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় খোকনের অবদান অস্বীকার করতে পারবে না ।  

এর আগে ২৭শে মে নরসিংদীতে দুই ছাত্রদল নেতা নিহতের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা আরও ৩৫-৪০ জনকে আসামি করা হয়। সংঘর্ষে নিহত জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমানের ভাই আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় এ হত্যা মামলা করেন। এই মামলায় যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎসহ এখন পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গুলশানের সংবাদ সম্মেলনে এ সময়  আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কামরুজ্জামান রতন প্রমুখ।