বিএনপির ৪৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

বিএনপির ৪৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

প্রথম নিউজ, ঢাকা:  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ আজ শুক্রবার। ১৯৭৮ সালের এই দিনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে জন্ম হয় দেশের অন্যতম বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলটির। তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা বিএনপি এমন একটি সময়ে ৪৫ বছরে পা রাখছে, যখন দলটি ‘দমন নীতি’র বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একটি বৃহৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলের অভ্যন্তরে নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস চলছে পুনরায় সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার। দলটির টার্গেট ২০২৩ সালের শেষে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপি সেই নির্বাচন ঘিরে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা কঠিন পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্কল্প ঘোষণা করেছে। প্রত্যাশা করছে, ‘আন্দোলন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন’ আদায়ের মধ্য দিয়ে জনগণের রাজনৈতিক ভাগ্য বদলানোর। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী বেগম জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব লাভ করেন লন্ডনে বসবাসরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি দলকে গনতান্ত্রিক পন্থায় পুনর্গঠিত করে সর্বস্তরে শক্তিশালী ও আন্দোলনমুখী করার উদ্যোগ নেন। তার প্রচেস্টায় দলকে তৃনমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে পুরোদমে। সেই সঙ্গে তার নেতৃত্বে তৃনমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত মিছিল সমাবেশ আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি ১১ টি অঙ্গসংগঠনের পুনর্গঠন প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সিনিয়র নেতা সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নিরলস প্রচেস্টা ও দিক-নির্দেশনায় দলের সর্বস্তরে গতিশীলতা ফিরেছে। তারেক রহমান প্রতিদিনই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে স্কাইপেসহ ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করছেন,দিক-নির্দেশনা-আদেশ-নির্দেশ দিচ্ছেন। প্রতি সপ্তাহে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক হচ্ছে। সেখানে দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি ও দলীয় বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবনা গৃহীত হচ্ছে। দলের নেতারা বলছেন,দুই ইস্যু নিয়ে তৈরী হয়েছে বিএনপির আন্দোলনের ’রোডম্যাপ’। বেগম খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি,তারেক রহমানের নিরাপদ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সরকারকে বাধ্য করতে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলা। এই লক্ষ্য কার্যকরের জন্য আওয়ামী সরকার বিরোধী দলগুলোতে থাকা সমমনাদের নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের রোডম্যাপ প্রনয়নের চেস্টা চলছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি’র ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি বলেন, আজ থেকে ৪৫ বছর আগে দেশের এক চরম ক্রান্তিকালে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, বিশ^বরেণ্য রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এদেশের মানুষকে একদলীয় দুঃশাসনের যাঁতাকল থেকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। আমি তাঁর প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। বারবার দেশ ও গণতন্ত্রের সঙ্কটকালে অসীম সাহসিকতার সাথে জুলুম—নির্যাতনকে সহ্য করেও দুর্বার আন্দোলনে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন আমি সেই অদম্য সাহসের প্রতীক বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। এই দিনে দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত যে সকল নেতৃবৃন্দ মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের প্রতিও জানাই গভীর শ্রদ্ধা। বিএনপিকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে এখন পর্যন্ত যে সকল নেতাকর্মীরা আত্মদান করেছেন তাদের প্রতিও জানাই আমার অকৃত্রিম শ্রদ্ধা। আজ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি’র ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এই শুভদিনে আমি দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশের জনগণকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। বিএনপি গণতান্ত্রিক চেতনায় গণমানুষের দল। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দৃঢ় অঙ্গীকার বিএনপি’র সকল নেতাকর্মী অন্তরে ধারণ করে। বিএনপি’র ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই মহান দিনে আমি দলের সকল পর্যায়ের নেতা—কর্মীদের দলকে আরো গতিশীল করার ক্ষেত্রে মনেপ্রাণে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকার আহবান জানাচ্ছি। বর্তমান দুঃসময়ে জনগণকে সংগঠিত করার কোন বিকল্প নেই। দেশ আজ দুঃশাসন কবলিত। গুম—খুনের আতঙ্ক মানুষের নিত্য সঙ্গী। আইন, বিচার, প্রশাসন সবকিছুই সরকারী কব্জার মধ্যে। বিরোধী দল দমন করার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বেআইনী কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে সমাজে দেখা দিয়েছে বিপজ্জনক বিশৃঙ্খলা। খুন—খারাবী, নারী—শিশু নির্যাতন, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ইত্যাদি অনাচারের মাত্রা উত্তরোত্তর ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ সরকার যেখানে জনগণের প্রতিপক্ষ সেখানে মানুষের জানমালের কোন নিরাপত্তা থাকতে পারে না। সুতরাং জনগণের নিরাপত্তা বিধানের জন্যই বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ্বং তারেক রহমানের ওপর জুলুম—নির্যাতন চালিয়ে এবং মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে হয়রানির খড়গ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ‘গণতন্ত্রের মা’ এবং জনগণের নাগরিক ও বাক—ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষে প্রধান কন্ঠস্বর বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সকলকে একযোগে রাজপথে নামতে হবে। পাশাপাশি দেশের বর্তমান ক্রান্তিকাল অতিক্রমের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন—সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। বিএনপি’র ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে আমি দেশবাসীকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি’র পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য উদাত্ত আহবান জানা