প্রধানমন্ত্রীর সাথে তামিমের সাক্ষাৎ

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি। প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এই কথা জানান তামিম।

প্রধানমন্ত্রীর সাথে তামিমের সাক্ষাৎ

প্রথম নিউজ, অনলাইন: প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে গতকাল গণভবনে যান তামিম ইকবাল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি। প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এই কথা জানান তামিম। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন। তামিম ইকবালের ফিটনেস ইস্যুতে গত কিছুদিন ধরেই বেশ আলোচনা চলছিল। এত আলোচনা ভালোভাবে নেননি তিনি। তাই গত বৃহস্পতিবার হুট করে সংবাদ সম্মেলন ডেকে আন্তর্জাতিক  ক্রিকেটকে বিদায় বলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। অবসরের ঘোষণা দিতে গিয়ে তামিম বলেন, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। 

এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেয়া নয়। অনেক দিন ধরেই আমি এটা নিয়ে ভাবছি। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি।’ অবসরের ঘোষণা দিতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তামিম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে পঞ্চপাণ্ডবের অন্যতম এই ক্রিকেটার বলেন, ‘আমি সবসময় বলেছি ক্রিকেট খেলেই বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে গিয়ে অনেক পরিস্থিতির মুখে পড়েছি, সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার ছোট চাচার হাত ধরেই ক্রিকেটে এসেছি। যারা আমাকে এই পর্যায়ে আনতে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’  

ওদিকে রাতে জরুরি সভা করে তামিমকে ফেরার আহ্বান জানান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সে সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম। এখন অবধি এটাই আছে। কোনো কারণে তামিম না খেললে ভাইস ক্যাপ্টেন খেলা পরিচালনা করবে। আছে লিটন দাস।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, আমরা চাচ্ছি তামিম সিদ্ধান্ত বদলে ফিরে আসুক। সেতো আমাদের কাছে পদত্যাগ করেনি!’ 

তামিমের বড় ভাই জাতীয় দলের ম্যানেজার নাফিস ইকবালের মাধ্যমেও যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন জানিয়ে বোর্ড সভাপতি বলেন, ‘সকাল থেকে তামিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি, পাচ্ছি না। নাফিস ইকবালের মাধ্যমেও পাইনি। আমার সঙ্গে এখন পর্যন্ত যোগাযোগ হয়নি। তখন আমি নাফিসের কাছে একটা মেসেজ পাঠাই, ওর সংবাদ সম্মেলনের পর। আমি বলেছি, তামিম অধিনায়ক হিসেবে এই সিরিজ শেষ করুক। এরপর আমরা বসে ঠিক করবো, কী করা যায়। তার মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটারের এমন করা ঠিক হচ্ছে না। তার দলে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ তার আহ্বানে সাড়া না দেয়াতে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে দিয়ে তামিমকে ডেকে পাঠান প্রধানমন্ত্রী। 

গতকাল দুপুরে স্ত্রী আয়েশা ইকবালকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তামিম। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে বের হয়ে সংবাদ মাধ্যমকে তামিম বলেন, ‘দুপুরবেলায় আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বাসায় দাওয়াত করেছিলেন। ওনার সঙ্গে অনেকক্ষণ আমরা আলোচনা করেছি। উনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন খেলায় ফিরে আসতে। আমি আমার রিটায়ারমেন্ট এই মুহূর্তে তুলে নিচ্ছি। কারণ আমি সবাইকে না বলতে পারি কিন্তু দেশের যে সবচেয়ে বড় ব্যক্তি তাকে না বলা আমার পক্ষে অসম্ভব। তাতে অবশ্যই পাপন ভাই ও মাশরাফি ভাইয়ের বড় ভূমিকা ছিল। মাশরাফি ভাই আমাকে ডেকে নিয়েছেন। পাপন ভাই সঙ্গে ছিলেন। 

প্রধানমন্ত্রী আমাকে দেড় মাসের জন্য একটা ছুটিও দিয়েছেন।’ অবসরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করলেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে খেলবে না তামিম। মানসিক ও শারীরিকভাবে ফিট হতে দেড় মাসের মতো ক্রিকেটের বাইরে থাকবেন তিনি, এমনটা জানান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। বলেন, ‘আমার একটা ধারণা ছিল ওর (তামিমের) প্রেস কনফারেন্সটা দেখে, হয়তো আবেগ থেকে সিদ্ধান্তটা নিয়েছে। আমার একটা বিশ্বাস ছিল, ওর সঙ্গে যদি সামনাসামনি একবার বসতে পারি তাহলে হয়তো এটার একটা সমাধান পাবো। প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে আমরা সবাই ওর সঙ্গে বসেছিলাম এবং ও আপনাদের সামনেই বলে গেল, সে যে অবসরের চিঠিটা দিয়েছে সেটা সে প্রত্যাহার করছে। সে অবসর নেয় নাই। তবে প্রধানমন্ত্রী ওকে দেড় মাসের ছুটি দিয়েছেন। যাতে মানসিক ও শারীরিকভাবে ফিট হয়ে এশিয়া কাপ থেকে খেলতে পারে।’

আগামী ৩১শে আগস্ট শুরু হবে এশিয়া কাপ। তবে দেড় মাসের ছুটিতে থাকা মানে তামিম আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের পরের দুই ম্যাচ খেলবেন না। এরই মধ্যে তামিমের জায়গায় লিটন দাসকে অধিনায়ক করার ঘোষণা দিয়েছে বিসিবি। তামিমের বদলে দলে ডাকা হয়েছে রনি তালুকদারকেও।