ক্যালিফোর্নিয়ায় আগুন নেভাতে আজান দেওয়ার ঘটনা নিয়ে যা জানা গেল
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলে পুড়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল শুরু হয় গত মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি)। ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও তা নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বর্তমানে লস অ্যাঞ্জেলেসে চারটি দাবানল সক্রিয় রয়েছে।
এর মধ্যে প্যালেসেইডস দাবানল আরো এক হাজার একর এলাকায় ছড়িয়েছে। আগেই এই দাবানলে পুড়েছে ২২ হাজার একর এলাকা। ক্যালিফোর্নিয়ার ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্যালেসেইডস দাবানল মাত্র ১১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি আজান দেওয়ার একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ‘আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের লজ এঞ্জেলস শহরে আগুন নিভাতে যখন সকল প্রযুক্তি ব্যর্থ! তখনই হুজুরদের দিয়ে আযানের মাধ্যমে আল্লাহর গজব থেকে বাঁচার জন্য মিনতি করছে।
অর্থাৎ দাবি করা হয়েছে, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের এবং ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলসের আগুন নেভাতে আজান দেওয়ার দৃশ্যের।
তবে রিউমার স্ক্যানার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং অন্তত প্রায় ২ বছরের পুরোনো। অন্তত ২০২২ সাল থেকে ভিডিওটি ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে মুসলিমস অফ টিকটক নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ১৫ মে তারিখে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ওই ভিডিওর সাথে প্রচারিত ভিডিওর তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
এক্সে প্রচারিত ওই পোস্টে ভিডিওটি সম্পর্কে বলা হয়, এটি পাকিস্তানের করাচির একটি সুপারমার্কেটের সামনে ধারণকৃত। সুপারমার্কেটটিতে আগুন ধরলে আজান দেওয়া হয়েছিল, যার দৃশ্য এটি।
এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ৫ জুন তারিখে “Viral video: Pakistanis hold Azaan as fire breaks out in supermarket” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
ওই প্রতিবেদনে প্রচারিত ঘটনার একটি ভিডিও এর সংযুক্তি পাওয়া যায়। ভিডিওটি সম্পর্কে বলা হয়, এটি পাকিস্তানের করাচির আগুন লাগা একটি সুপারমার্কেটে ধারণকৃত দৃশ্য, যা এক্সে ImtiazMadmood ইউজারনেমের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার করা হয়েছে এবং ভাইরাল হয়েছে। তবে ভিডিওটির সত্যতা সম্পর্কে টাইমস অফ ইন্ডিয়া নিশ্চিত নয়।
এরই সূত্র ধরে ImtiazMadmood ইউজারনেমের এক্স অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে ২০২২ সালে প্রচারিত সেই ভিডিওটি পাওয়া যায়নি। তবে, ২০২৪ সালের ৩ মে তারিখে ওই এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি আবার পোস্ট করা হয়েছে এবং পোস্টে বলা হয়, ভিডিওটি ২০২২ সালের ৩ জুন তারিখে করাচির জেল চৌরাঙ্গীর নিকটবর্তী সুপারমার্কেটে ধারণকৃত। সুপারমার্কেটটিতে আগুন ধরলে আগুন নেভাতে আজান দেওয়া হয় যেখানে দমকলকর্মীরাও যোগ দেন। তবে, আগুন না নিভে পরেরদিনও জ্বলেছে।
এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনে ২০২২ সালের ১ জুনে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন পাকিস্তানের করাচির জেল চৌরাঙ্গির নিকটবর্তী ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে আগুন লেগেছিল। পরবর্তীতে একই সংবাদমাধ্যমে দুইদিন পর ২০২২ সালের ৩ জুনে প্রকাশিত আরেকটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৩ জুন ২০২২ তারিখেও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
সুতরাং, অন্তত ২ বছর পূর্বে আজান দেওয়ার একটি দৃশ্যকে সাম্প্রতিক সময়ে ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলসে আগুন নেভাতে আজান দেওয়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।