নারায়ণগঞ্জে আবারো পুলিশের নতুন মামলার জালে বিএনপি : গ্রেপ্তার আতঙ্কে নেতাকর্মীরা

গ্রেপ্তার হয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। এতে নতুন করে ফের মামলার জালে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতাকর্মীরা। আর নতুন মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘরছাড়া নেতাকর্মীরা এমনটাই জানা গেছে।

নারায়ণগঞ্জে আবারো পুলিশের নতুন মামলার জালে বিএনপি : গ্রেপ্তার আতঙ্কে নেতাকর্মীরা

প্রথম নিউজ, নারায়ণগঞ্জ : আবারো পুলিশের দায়েরকৃত নতুন করে মামলার জালে বন্দি হয়ে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি। চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের গুলি, টিয়ারগ্যাস ও সংঘর্ষের ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁ থানায় পৃথক দুটি মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর এবং অঙ্গসংগঠনের ১১৩৬নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার হয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। এতে নতুন করে ফের মামলার জালে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতাকর্মীরা। আর নতুন মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘরছাড়া নেতাকর্মীরা এমনটাই জানা গেছে।
জানা গেছে, গত ২৯ জুলাই চিটাগাং রোডে মহাসড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশের হামলা, লাঠিচার্জ, গুলি ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ২৩জনের নাম উল্লেখ করে জ্ঞাতনামা ৪০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
এর আগে গত ১৯ আগষ্ট সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় ১১৩জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৬০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
দুই মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১১৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদুই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে।
জেলা বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা বলছেন, সরকার পুলিশ দিয়ে বিএনপিকে দমন করতে চাচ্ছে। এ জন্য হামলা করা হচ্ছে। নতুন মামলার জালে আটকানোর চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। গ্রেপ্তার এড়াতে নেতাকর্মীরা আবার ঘরছাড়া হয়ে পড়েছেন।
তাঁরা আরও বলছেন, বিএনপি যখনই আন্দোলনের প্রস্তুতি ও দল গোছানোর কাজ শুরু করেছে, ঠিক সেই মুহূর্তে নেতাকর্মীদের নতুন করে গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলার জালে আটকানো হচ্ছে। অনেক এলাকায় মামলার আগেই নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে।
এসব মামলায় বিএনপিকে জড়ানোর কৌশল হিসেবে অসংখ্য অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। যাদের নামে মামলা নেই, তাদেরও আটক করে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। তৃণমূলের সক্রিয় নেতাকর্মীদের তালিকা করে তাদের বাসায় প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালাচ্ছেন।
এদিকে গত শনিবার (১৯ আগষ্ট) সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলা বিএনপির পদযাত্রায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ভাংচুর এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপের
ঘটনা ঘটে।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নানসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অর্ধশতাধিক গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়।
পরে রবিবার মধ্যরাতে সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফিরোজ আহমেদ বাদী হয়ে পুলিশের উপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা প্রদান এবং ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিএনপির ১১৩ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আর ৬০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলা ৯ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে ৭দি নের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো প্রেরণ করা হয়েছে । (মামলা নং- ৩১(৮)২৩)।
মামলা আসামি হলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান, মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু, জেলা বিএনপি'র সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপি'র সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী নজরুল ইসলাম টিটু, সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙুর, সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শহিদুর রহমান স্বপন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম সজিব, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব রহমান,সোনারগাঁ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোতালেব কমিশনার, জেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপি'র প্রচার সম্পাদক পিএস সেলিম হোসেন দিপু, বন্দর উপজেলা যুবদলের
যুগ্ম আহবায়ক সম্রাট হাসান সুজনসহ ১১৩ জন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নাম উল্লেখ করা হয় ।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন, বিএনপি নেতা গাজী সুরুজ, ইব্রাহীম, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মো. সুমন, মো. আয়নাল, মো. রুহুল আমিন, সাজ্জাদ হোসেন, মাহবুব, মো. পিন্টু, মো. পারভেজ।
অন্যদিকে গত শনিবার (২৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্র ঘোষিত অবস্থান কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড শিমরাইল ডাচবাংলা ব্যাংক এলাকায় মহাসড়কে অবস্থান নিতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ঘটনা ঘটেছে।
এসময়ে পুলিশ সর্টগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছিল। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খানসহ ৭জনকে আটক করা হয়েছিল। পরবর্তীতে বিকেলে নারায়ণগঞ্জ এসপি অফিস থেকে এড. সাখাওয়াত হোসেন খানকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
পরেরদিন রবিবার (৩০ জুলাই) সিদ্ধিরগঞ্জ থানা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মমিনুল হক বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর আক্রমন, মহাসড়তে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি ও নাশকাতার অভিযোগ তুলে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এড. এইচ এম আনোয়ার প্রধানকে প্রধান আসামি করে ২৩জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪০০ জনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ৫৬ গ্রেপ্তারের করা হয়েছিল নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. এইচ এম আনোয়ার প্রধান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি'র সদস্য মো. জসিম উদ্দিন,
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ২নং ওয়ার্ড বিএনপির প্রচার সম্পাদক মো. ফারুক, মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাগর প্রধান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি'র সদস্য  ইউসুফ আলী, মুন্সিগঞ্জ জেলা গজারিয়া থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাহাদী
ইসলাম বাবু, মুন্সীগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সভাপতি  মো. আবুল হাসেম।
মামলায় এজাহারনামীয় আসামি করা হয় জেলা বিএনপির সভাপতি সাকে এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি'র সভাপতি মাজেদুল ইসলাম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সহ-সভাপতি কাউন্সিলর জিএম সাদরিল, সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন, মহানগর জাসাসের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন স্বাধীন, বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীন ফারুক, মোহাম্মদ আলী, মো. সুবেদ আলী, সোলাইমান পলাশ, আনোয়ার হোসেন সানি, জাকির হোসেন, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুর রহমান সাগর, বিএনপি নেতা আতিক টেম্পু আতিক, আতিকুর রহমান প্রধান কামরুল হাসান সেন্টু , জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. রিফাত।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা আসার পরে মুক্তিযুদ্ধের যে মূল লক্ষ্য ও আদর্শ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, আইনের শাসন এবং মানুষের মৌলিক অধিকার এবং সর্বোপরি একটি দেশের সুশাসন সর্বোপরি ধ্বংস করে দিয়েছে।
যার ফলে বিএনপি সহ সকল গণতান্ত্রিক দলসমূহ সরকারের এই সকল আচরণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসতাছে। সরকারি সকল আন্দোলনের দাবি দাওয়া মেনে না নেওয়া কারণে সর্বশেষ একদফা দাবিতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম চলবে।
তিনি আরও বলেন, এ আন্দোলন সংগ্রাম এখন আর দলীয় না। দেশের সকল মানুষের মৌলিক অধিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি। তার জন্য আমাদের প্রতিটি অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করে থাকে। আমাদের এই আন্দোলন সংগ্রাম এখন আর ক্ষমতাসীন দলের নেতারা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে পারছে না। কারণ তাদের এখন সেরকম কোন জনপ্রিয়তা নেই।
রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে তারা এখন পুলিশ প্রশাসন ও আইন আদালতকে ব্যবহার করে আমাদের আন্দোলন সংগ্রামকে রোধ করতে চায়। তবে বলতে চাই আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করে রাজপথে থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যাবে না। যতোই মামলা মোকদ্দমা ও জুলুম নির্যাতন করুক কেনো না আমরা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাবো।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, আমাদের দলীয় নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার আতঙ্কের মধ্যেই রয়েছে। যত অজ্ঞাত আসামি সংখ্যাই বেশি। আর যাদের নামে মামলা হয়েছে তারা তো বাড়ি
করেনি সবাই পলাতক রয়েছে। যেহেতু অজ্ঞাতের সংখ্যাই বেশি সেহেতু আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে মামলা মোকদ্দমা খেতে খেতে আমাদের নেতাকর্মীরা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। যদিও রাতের বেলায় একটু সতর্ক অবস্থায় থাকে। তবে দিনের বেলা ঠিকই তারা কর্মসূচি গুলোতে অংশগ্রহণ করে থাকে। এই শেষ সময়ে আমাদেরকে মামলা হামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে অপেক্ষা করেই আন্দোলন
সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে মামলা ও গ্রেপ্তারের জালে বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে বন্দি করা আওয়ামী লীগের পুরনো অভ্যাস।  সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে তারা মামলাকে বেছে নেয়। এসব মামলার বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই।
মামলা ও গ্রেপ্তার করে বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে রাজপথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে যাবে না। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা-মামলা মোকাবিলা করেই সরকারের পদত্যাগসহ এক দফা দাবিতে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাব
ইনশাল্লাহ।