ঢাকা-জয়দেবপুর: তিন বছরের রেলপথ নির্মাণ ১৫ বছরে, নতুন গলার কাঁটা উড়ালসড়ক
উড়াল সড়কের কাজের ফলে দুর্ঘটনার ভয়ে এয়ারপোর্ট থেকে কমলাপুরের কাজ থমকে আছে। উড়ালসড়কের কাজ শেষ হওয়ার পরে রেলপথ নির্মাণকাজ আবার শুরু হবে।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ার বৃত্তে আটকে আছে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনের তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনের ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের নির্মাণকাজ। যে রেলপথ তিন বছরে সম্পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল, সেখানে সময় লাগছে ১৫ বছর। নির্মাণাধীন এই রেলপথের ঠিক ওপর দিয়েই হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (উড়াল সড়ক)। এ কারণে তেজগাঁও ও বনানী রেলস্টেশনের উন্নয়নকাজ শুরুই হয়নি। এছাড়া টেলিকমিউনিকেশনসহ সাত স্টেশনের কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলকিং সিগন্যালিং সিস্টেমের ক্রয় প্রস্তাবও অনুমোদন হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উড়াল সড়কের কাজের ফলে দুর্ঘটনার ভয়ে এয়ারপোর্ট থেকে কমলাপুরের কাজ থমকে আছে। উড়ালসড়কের কাজ শেষ হওয়ার পরে রেলপথ নির্মাণকাজ আবার শুরু হবে।
প্রকল্প প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া বলেন, ঢাকা-টঙ্গী সেকশন রেলপথের উপর দিয়ে ঢাকা উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। উপরে উড়ালসড়ক ও নিচে রেলপথ নির্মাণ করা হলে যেকোনো সময় উড়াল সড়কের নির্মাণসামগ্রী পড়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেজন্যই মূলত রেলপথ নির্মাণকাজের মেয়াদ আরও বাড়ানো হচ্ছে। উড়াল সড়ক নির্মাণের পরই আমরা এয়ারপোর্ট থেকে কমলাপুর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু করতে পারবো। পরিকল্পনা কমিশন জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প আবারও সংশোধন করা হয়েছে।
বারবার সংশোধনের ফলে বেড়েছে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয়। মূল অনুমোদিত প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৮৪৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধিত প্রস্তাবে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ১০৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধিত প্রস্তাবে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩৪২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে ভারতীয় ঋণ ২ হাজার ৮২১ কোটি ১৬ লাখ টাকা। বাকি অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে মেটানো হবে। তৃতীয় দফায় ব্যয় ব্যতিরেকে সময় বাড়ানো হয়। এখন আবারও মেয়াদ বাড়ছে। মূল অনুমোদিত প্রকল্পটি জুলাই ২০১২ থেকে জুন ২০১৫ মেয়াদে অনুমোদন হয়। পরে সেটি চার ধাপে মেয়াদ বেড়ে জুন ২০২৭ পর্যন্ত করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, ঢাকা-টঙ্গী এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনের লাইন ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করে সব মেজর করিডোরে অধিক সংখ্যক ইন্টারসিটি ট্রেন, মালবাহী ট্রেন ও কনটেইনার ট্রেন পরিচালনা করা হবে। দৈনিক যাত্রীদের জন্য কমিউটার/সিটি ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় নগর পরিবহন উন্নত করা, লেভেল ক্রসিং গেটে নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও ট্রেনভেদে যাত্রাসময় ২০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা হ্রাস করা হবে। চারটি রেলওয়ে স্টেশনে উন্নততর যাত্রী সুবিধা প্রদান এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখা যাবে এর মাধ্যমে।
রেলপথের মূল কাজ
১০৭ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ মেইন লাইন নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ, দুটি মেজর সেতু এবং ২২টি মাইনর সেতু/কালভার্ট নির্মাণ, তেজগাঁও, বনানী, টঙ্গী ও ধীরাশ্রম স্টেশন ভবন পুনর্নির্মাণ এবং ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন ভার্টিকালি বর্ধিত করা হবে। ১৪টি প্ল্যাটফরম নির্মাণ/পুনর্নির্মাণ এবং চারটি প্ল্যাটফরম বর্ধিতকরণ, ৯টি প্ল্যাটফরম শেড নির্মাণ/পুনর্নির্মাণ ও তিনটি প্ল্যাটফরম শেড বর্ধিতকরণ, অ্যাপ্রোচ সড়ক, ড্রেন, অফিস ও আবাসিক ভবন নির্মাণ/পুনর্নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক কাজ করা হচ্ছে প্রকল্পের আওতায়। এক্সেস কন্ট্রোল ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লাইটিংসহ রেলভূমির সীমানা প্রাচীর বেড়া নির্মাণ, টেলিকমিউনিকেশনসহ সাতটি স্টেশনে কম্পিউটর বেইজড ইন্টারলকিং (সিবিআই) সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপন ও সিটিসি’র সাথে ইন্টারফেসিং, ৩৭টি লেভেল ক্রসিং গেটে সিগন্যাল ওয়ার্নিং সিস্টেম স্থাপন এবং ডিজাইন, দরপত্র সেবা, কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন এবং ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ডে পরামর্শক সেবা দেওয়া হচ্ছে। ব্রিজ, ট্র্যাক ও মাটির কাজ বৃদ্ধি, চুক্তি ব্যয় বৃদ্ধি, সিগন্যালিং কাজের ব্যয় বৃদ্ধি, পরামর্শক সেবা খাতের ব্যয় বৃদ্ধি এবং পৃথক একটি পরামর্শক সেবা প্যাকেজ অন্তর্ভুক্তি ও প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ৩৩ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার লুপলাইনসহ ১১৬ কিলোমিটার ও চারটি স্টেশন পুনর্নির্মাণ প্রকল্পে খরচ মোট ১ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। এছাড়া রয়েছে দুটি ব্রিজ, ২২টি কালভার্ট, ১৮টি প্ল্যাটফর্ম, ১১টি প্ল্যাটফর্ম শেড ও সাতটি ফুটওভার ব্রিজ। গত জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ছিল প্রায় ৬৮ শতাংশ। মোট ৫৫ কিলোমিটার এমব্যাংকমেন্টের মধ্যে ৪৪ কিলোমিটার নির্মিত হয়েছে। ৯৬ কিলোমিটার ট্র্যাকের মধ্যে নির্মাণ হয়েছে ১৭ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার।