পাবনা মানসিক হাসপাতালে রোগী বাড়ছে ১০ গুন, বাড়েনি সেবার মান

রোগী ভর্তিতে দালাল চক্র মাথাপিছু ১০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেয়

পাবনা মানসিক হাসপাতালে রোগী বাড়ছে ১০ গুন, বাড়েনি সেবার মান
পারনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে রোগীদের দীর্ঘ লাইন

প্রথম নিউজ,পাবনা: দেখলে মনে হবে যেন হাটের ভিড়ের দৃশ্য অথবা টিকিটের জন্য টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের জনস্রোত। তবে আসলে এটি দেশের বিশেষায়িত একমাত্র মানসিক হাসপাতালের বহির্বিভাগের চিত্র। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে উপলক্ষে ৯ অক্টোবর পাবনা মানসিক হাসপাতাল ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

জানা গেছে, বহির্বিভাগে ২০১০ সালে সেবা নিয়েছে ২২ হাজারের কাছাকাছি রোগী। ২০২০ সালে রোগীর সে সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৫২ হাজার। সে হিসেবে ১০ বছরে রোগী বেড়েছে আড়াইগুণ। তবে কিঞ্চিতও বাড়েনি হাসপাতালের আউটডোরে অবকাঠামো কিম্বা চিকিৎসা সুবিধা।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ১০ বছরে রোগী বাড়লেও বাড়েনি চিকিৎসক, জনবল বা অবকাঠামো। ফলে যা সেবা দেওয়া হয় তার চেয়ে বেশি রোগী ফিরে যেতে বাধ্য হয়। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।

৯ অক্টোব হাসপাতালের বহির্বিভাগে মোট ২৮৫ রোগী সেবা নিয়েছেন। এ দিন লালমনিরহহাট থেকে আসা মক্তব আলী জানান, সাতদিন অপেক্ষার পর আজ ভাইকে বহির্বিভাগে দেখাতে পেরেছি।

কক্সবাজারের রামু থেকে মইশা মার্মা এসেছেন বাবাকে নিয়ে। আবেদ আলী মন্ডল এসেছিলেন পাবনার চাটোমাহর উপজেলার হান্ডিয়াল থেকে।

তারা জানান, সকাল ৭টায় সিরিয়াল থাকলেও দুপুর ২টায় দেখাতে পেরেছি। এ সময় একটুও বসতে পারিনি। লোকজনের ভিড়ে বসা দূরের কথা ঠিকমত দাঁড়িয়ে থাকাও কঠিন।

পাবনার বেড়া উপজেলার রাবেয়া আক্তার লামিয়া (২২) আসেন ভাইকে নিয়ে। সঙ্গে দুই বছরে ছোট বাচ্চা ছিল তার। তিনি জানান, রোগী বা স্বজনদের বসার কোনো জায়গা নেই। দুপুর ২টার দিকে শিশুকে খাওয়াতে পাশের চা দোকানে যেতে হয়েছে।

সূত্র জানায়, হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে পাঁচটি সিট খালি হয়। এর মধ্যে ভিআইপিদের সুপারিশকৃত দুটি ও সাধারণের জন্য তিনটি বরাদ্দ থাকে। এ তিন সিটে চলে বাণিজ্য। রোগী ভর্তিতে দালাল চক্র মাথাপিছু ১০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেয়। এরা এতোই বেপরোয়া যে মন্ত্রী, এমপি বা সচিবের সুপারিশকৃত রোগীও টাকা ছাড়া ভর্তি হতে দেয় না।

হাসপাতালের রোগী সেবার তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০০৯-১৬ পর্যন্ত বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই লাখ ৭৫ হাজার ৫৫৬ রোগী। এর মধ্যে নারী এক লাখ ৫১ হাজার ৩৮৯ এবং পুরুষ এক লাখ ২৪ হাজার ১৬৭।

অপর এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৪ সালে আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪২ হাজার ৭৮৭ রোগী, ২০১৫ সালে ৪৬ হাজার ৯৯৯, ২০১৬ সালে ৩ হাজার ৭৬৩, ২০১৭ সালে ৩৫ হাজার ৭৬৩, ২০১৮ সালে ৪৪ হাজার ৭২৮ ও ২০১৯ সালে ৫২ হাজার ৮৩৩ জন।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান জানান, আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াইশ রোগী সেবা পান। দূর-দূরান্ত থেকে খুব সকালে অনেক রোগী আসেন। তাদের অফিস খোলা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয়। এ সময় অনেক দালাল তাদের ক্লিনিকে নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে রোগীর হয়রানি ঠেকাতে আউটডোরে সশস্ত্র আনসার রাখা হয়েছে।

ভর্তি বাণিজ্যের ব্যাপারে হাসপতালের পরিচালক জানান, কেউ ইচ্ছে করলেই রোগী ভর্তি করতে পারে না। রোগীকে অবশ্যই বহির্বিভাগে ১০ টাকার টিকিট কেটে দেখাতে হয়। এরপর তিন সদস্যের মেডিকেল টিম যোগ্য মনে করলে সিট খালি সাপেক্ষে ভর্তির সুপারিশ করে। তবে এখানে বেড ফাঁকা হয় কালে ভদ্রে। একটি বেড ফাঁকা হলে ভর্তির জন্য অপেক্ষমান থাকে ৩০-৪০ রোগী। স্বাভাবিকভাবেই ভর্তির জন্য অসংখ্য তদবির থাকে। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও পাবনা মানসিক হাসপাতালের সেবার মান দৃষ্টান্তমূলক। এখান থেকে প্রতি বছর গড়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার রোগীকে সেবা দেয়া হয়।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom