ডেঙ্গুতে প্রাণহানি ৫০০ ছাড়িয়েছে

পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ এর আগে আর হয়নি। জেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত চিকিৎসা না থাকায় গুরুতর রোগীরা ঢাকায় ছুটে আসছেন।

ডেঙ্গুতে প্রাণহানি ৫০০ ছাড়িয়েছে

প্রথম নিউজ, অনলাইন: ডেঙ্গু রোগে মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হচ্ছে প্রতিদিনই। এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৫শ’ ছাড়িয়েছে। এক বছরে এত প্রাণহানি এর আগে আর হয়নি। বছরের বাকি সময়ে প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। এর আগে ঢাকায় এই রোগের প্রকোপ বেশি থাকলেও এবার সারা দেশেই ছড়িয়েছে ডেঙ্গু রোগী। পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ এর আগে আর হয়নি। জেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত চিকিৎসা না থাকায় গুরুতর রোগীরা ঢাকায় ছুটে আসছেন। তাদের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বজনদের। দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণের যে পরিসংখ্যান তাতে দেখা যায়, আগস্ট, সেপ্টেম্বর মাসে এর মাত্রা বাড়তে থাকে। তবে ২০২২ সালে অক্টোবর মাস পর্যন্ত আতঙ্ক ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। 

চলতি মৌসুমে জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হওয়া ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে জুনে। পরবর্তীতে জুলাই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যু জুনের তুলনায় সাত গুণের বেশি হয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, জুলাই মাস ছিল ভয়ঙ্কর। তবে এটা আরও ভয়াবহ রূপ নেয় আগস্ট মাসে। এরপরে এখনো বাকি সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাস। এমন অবস্থায় মশা নিধন কর্মসূচি সফলভাবে পরিচালনা করা না গেলে পরিস্থিতি ভালো হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।

কীটতত্ত্ববিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, এবার মৃত্যুতে এবং ডেঙ্গু আক্রান্তের হার অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে যত ডেঙ্গু হয়েছে, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে। ২০২১ সাল পর্যন্ত এ দুটি মাসের একটি মাসে ডেঙ্গু পিক ছিল। ২০২২ সালে দেখেছি অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু ছিল। এরপর দেখলাম নভেম্বর, ডিসেম্বর পার হয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ডেঙ্গু চলে আসছে। মশক নিধন কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। তিনি বলেন, মশা জন্মানোর তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করে যারা মশার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছেন তারা টার্গেট করে মশার নিধন করতে হবে। 

সর্বশেষ একদিনে আরও ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। গত ২৩ দিনে মৃত্যু ২৫৫ জন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০৬ জনে। দেশে ইতিমধ্যে ডেঙ্গু রোগী মৃত্যু ও শনাক্তে পুরনো রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৭০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ১ লাখ ৬ হাজার ৪২৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে ৫১ হাজার ২৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫৫ হাজার ৪০২ জন। মৃত ৫০৬ জনের মধ্যে নারী ২৮৮ জন এবং পুরুষ ২১৮ জন। মোট মৃত্যুর মধ্যে ঢাকার বাইরে মারা গেছেন ১৩২ জন এবং রাজধানীতে ৩৭৪ জন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হবে। কারণ অনেক ডেঙ্গু রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন, তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খাতায় নেই।

ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২ হাজার ৭০ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৫৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৩১২ জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ২ হাজার ৭০ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮২৫ জনে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৫৮০ জন এবং ঢাকার বাইরে ৪ হাজার ২৪৫ জন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ১ লাখ ৬ হাজার ৪২৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি রোগীর মধ্যে পুরুষ আক্রান্ত ৬৬ হাজার ৩৮৯ জন এবং নারী ৪০ হাজার ৪০ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯৮ হাজার ৯৮ জন।
অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন। জুলাইতে শনাক্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন এবং মারা গেছেন ২০৪ জন। আগস্টের ২৩ দিনে ৫৪ হাজার ৫৯৭ জন শনাক্ত এবং প্রাণহানি ২৫৫ জনের। 

ডেঙ্গু না কমার পেছনে মশা নিধনে ব্যর্থতা দায়ী: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ না কমার পেছনে মশা নিধনে ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, আমরা যতই রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিই না কেন, মশা না কমলে দেশে ডেঙ্গু রোগীও কমবে না। সিটি করপোরেশনগুলো যেন ভেজাল ওষুধ না ছিটায় সে আহ্বান জানান মন্ত্রী। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাহিদ মালেক বলেন, ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত ৫শ’ মানুষের মৃত্যু এবং এক লাখ লোক আক্রান্ত হয়েছে। মশা যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার সেভাবে হচ্ছে না বলেই ডেঙ্গুর সংক্রমণ কমছে না। তবে আমাদের সেবা নিয়ে মানুষের কোনো অভিযোগ নেই। তিনি বলেন, সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের ওষুধ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে স্প্রে জোরদার করতে হবে, ভেজাল ওষুধ ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে হবে।
মশা নিধন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আশপাশের দেশ থেকে বাংলাদেশে পরিস্থিতি খারাপ। সবাইকে যার যার জায়গায় দায়িত্ব পালন করতে হবে। সিটি করপোরেশনগুলো যেন ভেজাল ওষুধ না ছিটায় সে আহ্বান জানান মন্ত্রী।