ডিউটিতে যাওয়ার পথে গুলিতে নিহত হন নাজমুল
বেঁচে থাকার জন্য সরকারের সহযোগিতার অপেক্ষায় পরিবার। এই ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে আইনের আওতায় আনার দাবি স্বজন ও এলাকাবাসীর।
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক : রাজধানী ঢাকায় কোটা আন্দোলন চলাকালীন গুলিতে নিহত যুবক নাজমুলের গ্রামের বাড়িতে চলছে মাতম। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশাহারা পরিবার। বেঁচে থাকার জন্য সরকারের সহযোগিতার অপেক্ষায় পরিবার। এই ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে আইনের আওতায় আনার দাবি স্বজন ও এলাকাবাসীর। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা নাজমা বেগম। শোকে পাথর বাবা সৈয়দ আবুল কায়েস। পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনরাও কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা আন্দোলনে গুলিতে নিহত নাজমুল হাসানের গ্রামের বাড়িতে এভাবেই চলছে মাতম।
স্বজনরা জানায়, জীবিকার তাগিদে ছোটবেলা থেকে রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করে নাজমুল হাসান। পরিবারের হাল ধরতে রাজধানীর ফরাজী হাসপাতালের ফিজিওথেরাপি টেনকিশিয়ান হিসেবে এক বছর আগে চাকরি নেয় সে। গত ১৯শে জুলাই দুপুরে রামপুরার আফতাবনগর এলাকার বাসা থেকে ডিউটির উদ্দেশ্যে বের হয়। গোলাগুলি ও সংঘর্ষের খবরে সড়কে যান চলাচল না করায় হেঁটে যাওয়ার সময় বনশ্রী এলাকার গোদারা ঘাটের সাঁকোর কাছে পেটে গুলিবিদ্ধ হয় ২২ বছর বয়সী নাজমুল।
পরে গুরুতর অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পাশে থাকা এক পথচারী নাজমুলকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় নাগরিক প্রাইভেট হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে। ওইদিন রাতেই তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার চরগোবিন্দপুর এলাকায়। ২০শে জুলাই পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় নাজমুলকে।
নাজমুলের আকস্মিক মৃত্যুতে হতবাক আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী। এই ঘটনায় দোষীদের বিচারের দাবি করেছেন তারা। পাশাপাশি অসহায় পরিবারটির পাশে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান স্বজনরা। নিহত নাজমুলের বাবা সৈয়দ আবুল কায়েস বলেন, আমার ছেলে কাজে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। নাজমুল ছিল পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। আমরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছি। এই ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।
নাজমুলের মা নাজমা বেগম বলেন, বাইরে গোলাগুলি হচ্ছে, অনেকবার নিষেধ করেছিলাম ডিউটিতে যাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু আমার কথা শুনেনি ছেলেটি। হতভাগা এভাবে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যাবে, বুঝতেও পারিনি।
নিহতের মামা সাইদুল মাতুব্বর বলেন, এই ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করা উচিত। নির্দোষ ছেলেটিকে কীভাবে গুলি করে মেরে ফেললো, তার বিচার হওয়া উচিত।
প্রতিবেশী মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ছোটবেলা থেকেই নাজমুল ঢাকায় থাকে। এলাকায়ও ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। এমন মৃত্যু কোনো ভাবেই আমরা মেনে নিতে পারছি না।
নাজমুলের বন্ধু রাজীব হোসেন বলেন, নাজমুলের পরিবার আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় চলে যায় সে। ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে আসলে আমি ও নাজমুল একত্রে চলাফেরা করি। কি করে এমন মৃত্যু মেনে নিবো আমরা?