গ্রামের পর গ্রাম গিলে খাচ্ছে নদী, আতঙ্কে মানুষ

গ্রামের পর গ্রাম গিলে খাচ্ছে নদী, আতঙ্কে মানুষ

প্রথম নিউজ, বরিশাল: টানা চার দিনের ভারি বর্ষা শেষে বরিশাল জেলার কীর্তনখোলা, সন্ধ্যা, তেঁতুলিয়া, আড়িয়াল খাঁ ও মেঘনা নদীর ভাঙনে বিলীন হতে চলেছে গ্রামের পর গ্রাম। জেলার ১০ উপজেলার মধ্যে ৮টির অসংখ্য স্থানে ইতোমধ্যে ভাঙন শুরু হয়েছে। এসব এলাকায় বাস্তুহারা হয়েছে অনেকেই, আতঙ্কে রয়েছে অন্যরাও। সবমিলিয়ে জেলার মোট ৮০টির বেশি পয়েন্টের ভাঙনের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাবে নদীভাঙন রোধে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। নদীর পানি নেমে যাওয়ার সময় এই ভাঙন তীব্রতর হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা। তাই নদীতীরবর্তী বাসিন্দাদের ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, সড়ক, ফসলি জমি, ঘরবাড়িসহ ধর্মীয় স্থাপনা রক্ষায় দ্রুত বরাদ্দ দেওয়াসহ কার্যকরী পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।

তথ্যমতে, বরিশাল সদর উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে কয়েক দিনে বিলীন হয়েছে দক্ষিণ আইচা গ্রামের জনগুরুত্বপূর্ণ প্রায় আধা কিলোমিটার সড়ক। এই গ্রামে ভাঙন প্রতিবছর হলেও তা রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই গ্রামেরই আরেক পাশ ছুঁয়ে যাওয়া কীর্তনখোলা নদীও বর্ষায় আগ্রাসী রূপ নিয়েছে। আওয়ামী শাসনামলে নদীভাঙন রোধে তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বর্তমানে যথাযথ নয়। তাই অধিকাংশ বাসিন্দা ভাঙনের কবলে পড়ে ভিটামাটি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। কীর্তনখোলা নদীর স্রোত তীব্র হওয়ার দরুণ এখন এই নদীতীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা চরম আতঙ্কে রয়েছে বলে জানা গেছে।

বাবুগঞ্জ উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদীর আগ্রাসী মনোভাবে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের শিকারপুর ব্রিজ এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ব্রিজটিও ঝুঁকির মুখে। এছাড়াও এই নদীর ভাঙন দিন দিন বরিশাল বিমানবন্দরের কাছাকাছি চলে আসছে জানিয়ে তা বিলীনের শঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

এছাড়াও আড়িয়াল খাঁ নদীর মুলাদী উপজেলা অংশের সফিপুর ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। এতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে চার শতাধিক পরিবার। এছাড়া এই উপজেলার জয়ন্তী নদীতীরের মৃধারহাট, ষোলঘর, ভেদুরিয়া, বাটামারা, আলীমাবাদ এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলার দশটি ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় সন্ধ্যা নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাকেরগঞ্জ উপজেলার কারখানা নদীতীরবর্তী চারটি ইউনিয়নেও শুরু হয়েছে ভাঙন।

হিজলা উপজেলার পুরাতন হিজলা এলাকার বাউসিয়া নদীতীরের এলাকাসহ মেঘনা নদীর হরিনাথপুর ও গঙ্গাপুরের লঞ্চঘাটসংলগ্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।

মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনা নদীর শাখা নদী তেঁতুলিয়া, ইলিশা, লতা, গজারিয়া ও কালাবদরের তীরবর্তী এলাকা ভাঙতে শুরু করেছে। এসব নদীর তাণ্ডবে বিলীন হচ্ছে মেহেন্দিগঞ্জ সদর এলাকাসহ, চাঁনপুর, জাঙ্গালিয়া, শ্রীপুর, ভাষাণচর, দড়িরচর, খাজুরিয়া, গোবিন্দপুর, উলানিয়া দক্ষিণ ও উত্তর অংশ। বরিশাল জেলাজুড়ে এমন ৮০টির বেশি পয়েন্টে ভাঙনের অতি ঝুঁকিতে আছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।

মেহেন্দিগঞ্জের বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে এখানকার ঐতিহ্যবাহী মাতুব্বর বাড়ি মসজিদ ইলিশা নদীতে বিলীন হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ফসলি জমি ভাঙনের মুখে রয়েছে।