পিআর হলো ‘মাদার অব অল রিফর্ম’: চরমোনাই পীর

পিআর হলো ‘মাদার অব অল রিফর্ম’: চরমোনাই পীর
প্রথম নিউজ, অনলাইন: জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের প্রধান রক্ষাকবচ হলো নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন। এমন মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় জুলাইয়ের চেতনা ও স্বপ্ন রক্ষায় পিআর-ই হলো একমাত্র সমাধান। এটি ‘মাদার অব অল রিফর্ম’। এখন আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার, গণহত্যার বিচার এবং জাতীয় নির্বাচনের পদ্ধতি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
চরমোনাই পীর বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন অতীতের মতো ব্যর্থ না হয়, সেজন্য এখনই রাষ্ট্র সংস্কার প্রয়োজন। পতিত স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের বিচার করতে হবে। আর এই সংস্কার টেকসই করতে চাইলে প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতির বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, ২৮ জুলাইয়ের জনসমুদ্র পিআর পদ্ধতির পক্ষে গণপ্রত্যাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। পিআর ছাড়া কোনো সংস্কার টিকবে না। ২০০৮ সালের অভিজ্ঞতা আমাদের সামনে আছে। ৪৯ শতাংশ ভোট পেয়ে কেউ যদি সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ আসন পায়, তাহলে যে কোনো সংবিধান কাটা-ছেঁড়া করা সম্ভব হয়। পিআর না থাকলে আগামী নির্বাচনেও সেই সম্ভাবনা থেকেই যায়।
বর্তমান ব্যবস্থায় ভোটের সামান্য ব্যবধানে আসনের বড় উত্থান-পতন হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে করে রাজনীতিতে অস্থিরতা আসে। কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে এমন হঠাৎ উত্থান-পতনের সুযোগ নেই। তাই এটি রাজনীতিকে ভারসাম্যপূর্ণ করে তোলে। পিআর পদ্ধতিতে বড় পরিবর্তনের জন্য বড় ধরনের কারচুপি করতে হয়, যা সহজ নয়। ফলে নির্বাচনে কারচুপির প্রবণতাও কমে যায়।
পিআর নিয়ে ওঠা ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে চরমোনাই পীর বলেন, সংসদ সদস্যদের কাজ এলাকার উন্নয়ন নয়, নীতি নির্ধারণ। আর উন্নয়ন নিশ্চিত করার দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের। তুরস্কের মডেলের মতো বিভাগভিত্তিক পিআর প্রবর্তন করলে ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্বও নিশ্চিত করা যাবে।
সরকার অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে- এই অভিযোগকে অগ্রাহ্য করে তিনি বলেন, ইতালিতে ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন হলেও তারা রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল। আর আমাদের দেশে সরকার মেয়াদ পূর্ণ করলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটেনি। ফলে পিআর মানেই অস্থিতিশীলতা- এটি ভিত্তিহীন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মৌলিক বিভেদ নেই। দলগত বিভাজনের রাজনীতিতে জোট ও মহাজোট সরকার চলে এসেছে। তাই সহাবস্থানের মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। এটাই তো আমরা চাই।
 গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। এই জুলাই মাসের মধ্যেই আমরা জুলাই ডিক্লেয়ারেশন চাই। তিনি পিআর পদ্ধতিকে কেন্দ্রীয় ইস্যুতে পরিণত করায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, যারা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চান, তারাই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, নাগরিক ঐক্যের চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান মান্না, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমাদ আবদুল কাদের, ড. শহীদুল হক (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, অধ্যাপক এ কে এম ইউসুফ (ঢাবি), গোলাম সারোয়ার মিলন (জনতা পার্টি), ড. ফয়জুল হক (রাজনৈতিক বিশ্লেষক), অ্যাডভোকেট শিশির মনির (সুপ্রিম কোর্ট), মাওলানা ফজলুর রহমান (ইসলামী ঐক্যজোট), মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী (বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন) প্রমুখ।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, সহকারী মহাসচিব কে এম আতিকুর রহমান, শ্রমিক আন্দোলনের সেক্রেটারি কে এম বিল্লাল হোসেন এবং যুব আন্দোলনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান মুজাহিদ প্রমুখ।