চারদিকে এত পানি, তবুও হাহাকার
রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকায় নলকূপের পানি লবণাক্ত। অনেকে পুকুরের পানি পান করে। বড় প্লাস্টিকের ট্যাংকে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা হয়। কিন্তু তা দিয়ে বেশিদিন চলে না। বাধ্য হয়ে লবণাক্ত ও নোংরা পানি পান করে নানা রকম রোগে ভুগছে এখানকার মানুষ।
প্রথম নিউজ , সাতক্ষীরা: ‘আমাদের বাড়ির টিউবয়েলের পানিতে লবণ ও আর্সেনিক। সেটার পানি ব্যবহার করা যায় না। এক কলস খাবার পানির জন্য প্রতিদিন আমাদের মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিতে হয়। সেখানে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পুকুর পাড়ে স্থাপিত ফিল্টার থেকে এক কলস খাবার পানি সংগ্রহ করি। বৃষ্টির সময় ট্যাংকিতে কিছু পানি ধরে রেখেছিলাম। সেটা এখন শেষ হয়ে গেছে। এই পানি পান করে আমাদের শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হয়। তারপরও উপায় নেই, বাধ্য হয়ে পুকুরের পানি পান করি।’
কথাগুলো বলছিলেন সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা আশাশুনির প্রতাপনগরের বাসিন্দা আনিছা বেগম। সাতক্ষীরা উপকূলের প্রায় সব গ্রামের নারীদের কথা একই রকম। তাদের দিনের বড় একটি সময় পার হয় এক কলস সুপেয় পানি সংগ্রহের পেছনে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নদ নদীগুলোতে উজানের পানি না আসায় দেশের দক্ষিণ পশ্চিমের উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার বেশিরভাগ এলাকায় সুপেয় পানির চরম সংকট রয়েছে। বেড়েছে লবণাক্ততার প্রভাবও। ফলে দিন দিন সুপেয় পানির এই সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিপুল সংখ্যক মানুষের বিশুদ্ধ পানির জন্য কিছু বেসরকারি সংস্থা ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও এর সুফল পায়নি স্থানীয়রা। তবে জেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সংকট নিরশনে একাধিক প্রকল্প চলমান রয়েছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের সোরা গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকায় নলকূপের পানি লবণাক্ত। অনেকে পুকুরের পানি পান করে। বড় প্লাস্টিকের ট্যাংকে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা হয়। কিন্তু তা দিয়ে বেশিদিন চলে না। বাধ্য হয়ে লবণাক্ত ও নোংরা পানি পান করে নানা রকম রোগে ভুগছে এখানকার মানুষ।
শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন দাতিনাখালী গ্রামের বাসিন্দা হোসেন আলী বলেন, প্রতি বছর এক থেকে দুটি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে এই এলাকায়। নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রতি বছর লবণ পানিতে প্লাবিত হচ্ছে আমাদের বাড়িঘর। নষ্ট হয়েছে সুপেয় পানির উৎসগুলো। আমাদের এলাকায় অনেকগুলো পানির ফিল্টার তৈরি করেছিল একটি এনজিও। তবে প্রকল্প শেষ হওয়ার পর সেই ফিল্টারগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে।
আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী আবু দাউদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের সময় দুই দফা বেড়িবাঁধ ভেঙে আমার ইউনিয়নে টানা দুই বছর জোয়ার ভাটি হয়েছে। লবণ পানির কারণে এখানকার সুপেয় পানির উৎসগুলো একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামত করা হয়েছে। তবে এখনো মানুষের জন্য পর্যাপ্ত সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা যায়নি। এখানকার মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করছে।
শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম বলেন, দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা। এখানে বাইরে থেকে পানি আনা সম্ভব না। এখানকার নলকূপের পানি লবণাক্ত ও আর্সেনিকযুক্ত। এখানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পুকুর খনন, পন্ড ফিল্টার স্থাপনসহ নানা প্রকল্প নেওয়া হলেও সেটি পর্যাপ্ত নয়।
সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, গেল বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানির চাপে খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে আশাশুনির প্রতাপনগর ও শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালীনি ও গাবুরা ইউনিয়নের কিছু এলাকায় নতুন করে লবণ পানি প্রবেশ করে। ফলে সেখানকার মিষ্টি পানির বিভিন্ন উৎস একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নতুন করে সুপেয় পানির উৎস তৈরিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews