গাজায় ইসরাইলি বর্বরতা বেড়েই চলেছে
তুর্কি ও ইসরাইলি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গাজায় গ্রাউন্ড অফেন্সিভ চালানোর প্রস্তুতি সমপন্ন করেছে ইসরাইল। বিমান হামলাতেই গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৯২ জনে। এরমধ্যে শিশুর সংখ্যা প্রায় ২৫০০। গত ১৮ দিন ধরে ইসরাইলি বর্বরতায় আহত হয়েছেন আরও ১৬ হাজার গাজাবাসী। দিন যত যাচ্ছে ইসরাইলের হামলা আরও ভয়াবহ হচ্ছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৭০৪ জন ফিলিস্তিনি ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন। খবর আল-জাজিরার।
এদিকে তুর্কি ও ইসরাইলি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গাজায় গ্রাউন্ড অফেন্সিভ চালানোর প্রস্তুতি সমপন্ন করেছে ইসরাইল। বিমান হামলাতেই গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এরমধ্যে গ্রাউন্ড অফেন্সিভ চালানো হলে সেখানে মানবিক বিপর্যয় সকল নজির ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের বলছে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে আশ্রয় নিতে। আবার গত কয়েকদিন ধরে তারা যত হামলা চালাচ্ছে তার প্রায় সবই হচ্ছে এই দক্ষিণাঞ্চলেই। ইসরাইলি এই বর্বরতা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছে পশ্চিমা বিশ্ব।
উল্টো তারা আরও ইসরাইলকে সমর্থন দিচ্ছে। ইসরাইলকে সর্বোচ্চ সমর্থন দিতে গত কয়েকদিনে দেশটি সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, জার্মানিসহ পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা। সর্বশেষ ইসরাইলের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করতে মঙ্গলবার তেলআবিব পৌঁছেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। বার্তা সংস্থা এএফপি’র একজন সাংবাদিক বলেছেন, দিনের শুরুতে বিমান থেকে নামেন ম্যাক্রন।
পশ্চিমাদের এমন আচরণকে ডবল স্ট্যান্ডার্ডস বলে আখ্যায়িত করেছেন কাতারের আমীর। তিনি বলেন, যথেষ্ট হয়েছে। ইসরাইলকে মানুষ হত্যার ফ্রি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। ইসরাইলি দখল ও আগ্রাসনের প্রকৃত চিত্র অস্বীকার করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন ফিলিস্তিনি শিশুদের জীবনের কোনো মূল্য নেই। তাদের কোনো চেহারা নেই কিংবা নাম নেই।
মঙ্গলবার ভোরেও গাজার দক্ষিণের রাফা ও খান ইউনিসে অভিযান চালিয়ে তারা হত্যা করেছে কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিকে। গত ১৮ দিন ধরে প্রতিদিন শত শত শিশু প্রাণ হারাচ্ছে গাজায়। এসব মানুষের মৃত্যুতেও যেন কাঁদার মানুষ নেই। এত এত মৃত্যু আর লাশ দেখে দেখে সেখানকার অধিবাসীরা মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। চোখ শুকিয়ে গেছে। কাঁদলে কোনো অশ্রু আসে না চোখে।
আল জাজিরার সাংবাদিক মারাম হুমাইদ লিখেছেন- গাজায় স্বাগতম। এটা এমন একটি স্থান, যেখানে প্রতিটি ফোনকল খবর দিচ্ছে কেউ না কেউ মারা গেছেন। প্রতিটি মেসেজে জানানো হয় বন্ধুর বাড়ি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি বিমান হামলা মানুষের হৃদয়ে কম্পন ধরায়। এই ভূমিতে বাড়ি বা বাসা বলতে বসবাসের এবং বিশ্রাম নেয়ার যে নিরাপদ জায়গাকে বোঝায়, তা আর নেই। এর অস্তিত্ব অনিশ্চিত। কোনো সতর্কতা ছাড়াই ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। বসবাসকারীদের সবচেয়ে বড় যে আশাটা টিকে আছে তা হলো পরিবার নিয়ে একসঙ্গে বেঁচে থাকা। কোনো প্রিয়জনকে যেন না হারান। সামষ্টিক ধ্বংসযজ্ঞের যেন শিকার না হন। রেজিস্ট্রি করা জায়গা থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে অসংখ্য পরিবারকে। একবার তাদের কথা চিন্তা করুন। একনজরে দেখে মনে হবে এ এক বিপর্যয়। কিন্তু সতর্ক যাচাই করলে দেখবেন এটা এক নির্মম, নিষ্ঠুর বোমার বিয়োগান্ত আঘাতের ফল।
এদিকে আরও দুই জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। তারা বলেছে, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় ওই দুই জিম্মিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। মুক্তি পাওয়া ওই দুই ইসরাইলি নারী এখন তেলআবিবের হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। এরই মধ্যে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হয়েছে। তবে তাদের স্বামীরা এখনো গাজায় জিম্মি আছে। আল জাজিরা বলছে, দখলকৃত পশ্চিমতীরে বিভিন্ন শহরে তল্লাশি চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এ সময় তারা বেশকিছু ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে। ওদিকে গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ইসরাইলে হামাসের হামলার সঙ্গে ইরানকে যুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করার পর ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান বলেন, তেহরানের কোনো নির্দেশনা ছাড়াই গাজায় অবস্থানরত ফিলিস্তিনি গ্রুপগুলো তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, স্থল, আকাশ ও নৌপথে গাজায় সর্বাত্মক অভিযান চালাতে প্রস্তুত ইসরাইলি বাহিনী। তিনি আরও জানান, এই অপারেশন খুব শিগগিরই শুরু হবে।