গাজীপুরে আবারো আলোচনায় জাহাঙ্গীর আলম
প্রথম নিউজ, গাজীপুর: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে গাজীপুর মহানগরসহ পুরো জেলার রাজনীতিতে এখন আলোচিত নাম সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। কেউ তাঁকে হ্যামিলিয়নের বাশিওয়ালা, কেউবা তাঁকে মানবতার ফেরিওয়ালা, কেউবা তাঁকে রাজনীতির ম্যাজিকম্যান হিসাবে আখ্যায়িত করছেন। গাজীপুরের রাজনীতিতে এক যুগের অধিক সময় ধরে ঘুরেফিরে স্থানীয় অন্য যে কোন নেতার চেয়ে জাহাঙ্গীর আলমের নাম আলোচিত হচ্ছে বেশি। বর্তমানে তিনি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জায়দা খাতুনের উপদেষ্টা। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের আগের মেয়াদে তিনি নির্বাচিত মেয়র ছিলেন। পাশাপাশি তখন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন।
জাহাঙ্গীর আলম এক রকম তরুণ বয়সে (২০০৯ সালে) গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসেন। এরপর ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে দাঁড়ান। পরে অবশ্য তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে পরাজিত করে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নান জয়ী হন। ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাঁকে মনোনয়ন দেয়। বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে ফের গাজীপুরের রাজনীতিতে চমক দেখান। মেয়র নির্বাচিত হয়ে সিটি কর্পোরেশন এলাকার সরু সরু প্রায় ৮০০ কিলোমিটার রাস্তা ২০/৩০ এমনকি ৪০/৫০ ফুট পর্যন্ত সম্প্রসারণ ও নতুন রাস্তা নির্মাণ করেন। নির্মাণ করেন পয়নিষ্কাষণের ড্রেন।
রাস্তা সম্প্রসারণ করায় সিটি এলাকার যানজট বহুলাংশে কমে যায়। এদিকে মেয়র থাকা অবস্থায় ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের নিয়ে একটি মন্তব্যের অডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় তাকে নিয়ে ফের আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়। এক পর্যায়ে দল ও মেয়র পর থেকে বহিঃস্কত হন। ২০২২ সালে ওই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আগে দল তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে। কিন্ত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মেয়র পদের মনোনয়ন বঞ্চিত হন। পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। আবার দল থেকে বহিস্কার করা হয়। তার মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও তার মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে হেভিওয়েট প্রার্থীর বিরুদ্ধে মা জায়দা খাতুনকে নিজের জনপ্রিয়তা দিয়ে নির্বাচিত করান। জেলাব্যাপি আলোচনা শুরু হয় ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলমের জনপ্রিয়তা নিয়ে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ তার বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিলেও বর্তমানে তার দলীয় পদ-পদবী নেই। বিগত দিনগুলোতে সিটির বিভিন্ন মনজিদের ইমামদের ভাতা প্রদান, তার নিজ ‘জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষা ফাউন্ডেশন’ নামে সিটির মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, ১৫ আগষ্টে গণভোজের জন্য সিটির বিভিন্ন এলাকায় এক সঙ্গে শতাধিক গরু বিতরণসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজের জন্য আলোচনায় থাকতে দেখা গেছে। এখন জাহাঙ্গীর আলম আলোচনায় রয়েছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রত্যক্ষ প্রচারণনায় অংশ নিয়ে। গাজীপুরের তিনটি সংসদীয় আসন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকা পড়েছে। এই আসল তিনটি হল গাজীপুর-১, ২ ও ৫। আসনগুলোতে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন যথাক্রমে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আ.ক. ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি। স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে তাদের সাথে লড়ছেন যথাক্রমে কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাসেল, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলিমুদ্দিন বুদ্দিন এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি-জিএস ও গাজীপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান। তাদের তিনজনের মার্কায় ট্রাক। এদের মধ্যে শুধু আখতারুজ্জামান এর আগে জাতীয় সংসদের নির্বাচন করেছেন। বাকি দুইজন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুন মুখ। জাহাঙ্গীর আলম এই তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন দিয়ে প্রতিদিনই বিভিন্ন পথসভায় যোগ দিচ্ছেন।
সভাগুলোতে শতশত, হাজার হাজার লোক সমাগম হচ্ছে। কিছুদিন মেয়র থাকা অবস্থায় তার উন্নয়ন কর্মকান্ড এবং দীর্ঘদিন ধরে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তাদের কর্মকান্ডের চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য রাখছেন। এসব পথসভাসহ বিভিন্ন আড্ডার রাজনৈতিক আলোচনায় জাহাঙ্গীর আলমকে কেউ হ্যামিলিয়নের বাশিওয়ালা, কেউবা মানবতার ফেরিওয়ালা, ম্যাজিকম্যান, গাজীপুরের উন্নয়নের মহানায়ক, কেউবা রাজনীতির সুপারম্যান হিসাবে আখ্যায়িত করছেন। তাদের মতে, জাহাঙ্গীর আলমের জনপ্রিয়তা ও তার বিশাল সমর্থকদের সমর্থন এই তিন আসনে এবার ভোটের চিত্র পাল্টে দিতে পারে।