কম দামে রাশিয়ার তেল কিনে ভারতের লাভ ৩৫ হাজার কোটি রুপি

একটি তেলবাহী ট্যাংকারকে রাশিয়ান বন্দর ছেড়ে যেতে দেখা যাচ্ছে

 কম দামে রাশিয়ার তেল কিনে ভারতের লাভ ৩৫ হাজার কোটি রুপি
 কম দামে রাশিয়ার তেল কিনে ভারতের লাভ ৩৫ হাজার কোটি রুপি-প্রথম নিউজ

প্রথম নিউজ, ডেস্ক : একটি তেলবাহী ট্যাংকারকে রাশিয়ান বন্দর ছেড়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। চলতি বছরের মার্চ মাসের ছবি

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এরপর রাশিয়াকে ঠেকাতে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। এতে করে অনেক দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে দূরে সরে গেলেও কৌশলী অবস্থান নেয় ভারত।

মূলত নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার কাছ থেকে ডিসকাউন্টে তেল কিনতে থাকে ভারত। আর কম দামে তেল আমদানি করে ভারতের লাভ হয়েছে আনুমানিক ৩৫ হাজার কোটি রুপি। ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পর তেল আমদানির মাধ্যমে ভারতের এই বিপুল আর্থিক লাভের বিষয়টি জানেন এমন বেশ কয়েকজনের বরাত দিয়ে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়ার পর একে একে দূরে সরে যায় মস্কোর ঐতিহ্যবাহী ক্রেতারা। আর এরপরই রাশিয়ান অশোধিত তেলের জন্য দর কষাকষি শুরু করে ভারত। একপর্যায়ে নিষেধাজ্ঞার কারণে চালানে আটকে থাকা তেল বড় ডিসকাউন্টে ভারতকে দেওয়া শুরু করে রুশ ব্যবসায়ীরা।

মূলত উন্নত দেশগুলোর চাপ সত্ত্বেও রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত এবং এখনও তা অব্যাহত আছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের বাস্তবতায় চীনের পর রাশিয়ান অপরিশোধিত তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ভারত। ভারত তার মোট আমদানিকৃত তেলের ১২ শতাংশই কিনে থাকে রাশিয়ার কাছ থেকে যা ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ছিল ১ শতাংশেরও কম।

গত জুলাই মাসে সৌদি আরবকে তৃতীয় স্থানে নামিয়ে রাশিয়া ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী হয়ে ওঠে। যদিও গত আগস্ট মাসেই রিয়াদ তার অবস্থান ফিরে পেলেও রাশিয়া ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী হিসেবেই রয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

ভারতের বাণিজ্য দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই মাসে রাশিয়া থেকে ভারতের খনিজ তেল আমদানি আট গুণ বেড়ে ১১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে গেছে। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, চলতি বছরের মার্চের পর রাশিয়া থেকে ভারত মোট ১২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ তেল আমদানি করেছে। গত বছর যা ছিল মাত্র ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে চলতি বছর জুন ও জুলাই মাসে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের তেল আমদানি করে ভারত।

ভারতীয় এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, তেলের দাম ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ দেশটি আমদানির মাধ্যমেই তেলের চাহিদার ৮৩ শতাংশ পূরণ করে থাকে। বিপুল এই আমদানি ভারতের অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ২০২১-২২ সালে তেল আমদানিতে খরচ দ্বিগুণ হয়ে ১১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

চলতি মাসের শুরুতে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এক সেমিনারে বলেন, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি মূল্যস্ফীতি ব্যবস্থাপনা কৌশলের অংশ এবং অন্য অনেক দেশও একই রকম (কৌশল ব্যবহার করে) কিছু করছে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, আরও স্পষ্ট বা সঠিক ধারণা দিতে গেলে বলতে হবে, রিফাইনাররা তেল কেনে সরকার নয়। কিন্তু সস্তা তেল অর্থনীতির সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্যারামিটারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলে খরচ কম হয়, আমদানি খরচ কমে যায় এবং ডলারের চাহিদা কমিয়ে চলতি হিসাবের ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া সরকারের ভর্তুকি বিলও কমে আসায় সামাজিক কল্যাণ এবং অবকাঠামোর জন্য অর্থ ব্যয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

এবারই দ্বিতীয়বারের মতো বৈশ্বিক তেলের বাজারে দর কষাকষির মাধ্যমে ভারত অর্থ সাশ্রয় করেছে। ২০২০ সালে করোনা মহামারি মধ্যে বিশ্ব স্থবির হয়ে গেলে তেলের দাম কমে যায় এবং ভারত সরকার কৌশলগত ভাবে তেল মজুদ করে। সেসময় পরে তেলের দাম বাড়লেও রিফাইনাররা ২৫ হাজার কোটি রুপি সাশ্রয়ের জন্য জাহাজে তেল সংরক্ষণ করে।

আর এখন নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ভারতে রাশিয়ান তেলের প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে যথেষ্ট সক্রিয় ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom