উন্নয়নের চাপাবাজির নামে দেশকে দেউলিয়া করে দেয়া হয়েছে-রিজভী

বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ক্ষমতাসীন দলের লুটেরা দুর্নীতিবাজ চক্র আয়েশী জীবন কাটালেও সাধারণ মানুষের এখন 'নুন আন্তে পান্তা' ফুরায় অবস্থা।

উন্নয়নের চাপাবাজির নামে দেশকে দেউলিয়া করে দেয়া হয়েছে-রিজভী

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী বলেছেন সরকারের তথাকথিত উন্নয়নের নামে দেশে যে সীমাহীন লুটপাট হয়েছে তার সকল দেনা সাধারণ মানুষের ঘাড়ে পড়েছে। চলতি বছর শুধুমাত্র ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হবে লাখ কোটি টাকার বেশী। উন্নয়নের চাপাবাজির নামে দেশকে দেউলিয়া করে দেয়া হয়েছে। আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ক্ষমতাসীন দলের লুটেরা দুর্নীতিবাজ চক্র আয়েশী জীবন কাটালেও সাধারণ মানুষের এখন 'নুন আন্তে পান্তা' ফুরায় অবস্থা।

সরকারের লোকজনের সীমাহীন দূর্নীতিতে দ্রব্যমূল্য, সার-বীজ, কীটনাশকসহ জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধিসহ তীব্র তাপদাহে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে জনজীবনে নাভিশ্বাস চলছে। এই তীব্র দাবদাহে শহরে ৫/৬ ঘন্টা এবং গ্রামাঞ্চলে ১২/১৪ ঘন্টা লোডশেডিং চলছে। নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতিতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আবারো বিদ্যূতের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। ইতোমধ্যে দেড় বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ। ডলারের বিনিময় হার অ¯স্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকগুলো লুটপাট করে দেউলিয়া করে দেয়া হয়েছে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংকসহ সকল ব্যাংক গিলে ফেলেছে ক্ষমতাসীন রাঘব-বোয়ালরা। প্রধানমন্ত্রী সারাক্ষণ বিএনপি’র বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তাহলে অর্থপাচার করলো কারা ? অর্থপাচারকারীদের নাম প্রকাশিত হচ্ছে কেবলমাত্র ক্ষমতাসীন দলের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এবং আওয়ামী নেতাদের। ঋণের নামে ব্যাংক খালি করলো কারা ? বিপুল রিজার্ভের তথ্য দিয়ে জোরেসোরে ঢোল বাজালেন প্রধানমন্ত্রী, সেই রিজার্ভ এখন তলানীতে ঠেকলো কিভাবে ?

এই সরকার উন্নয়ন ঘটিয়েছেন শুধুমাত্র কেলেংকারিতে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে কেলেংকারি, পদ্মা সেতুতে কেলেংকারি, মেগা প্রজেক্টের নামে কেলেংকারি, বিদ্যুৎ, গ্যাস পানিতে মহাকেলেংকারি, প্রশ্নফাঁসে কেলেংকারি, নিয়োগ বানিজ্যে কেলেংকারিসহ সবচেয়ে বড় নজীরবিহীন কেলেংকারি হচ্ছে ভোট ডাকাতির কেলেংকারি। তথাকথিত উন্নয়নের নামে দেশে যে সীমাহীন লুটপাট হয়েছে তার সকল দেনা সাধারণ মানুষের ঘাড়ে পড়েছে। চলতি বছর শুধুমাত্র ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হবে লাখ কোটি টাকার বেশী। উন্নয়নের চাপাবাজির নামে দেশকে দেউলিয়া করে দেয়া হয়েছে।

বিএনপি নেতা বলেন,  দেশকে একটি পারিবারিক জমিদারিতে পরিণত করে ১৮ কোটি মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রজা বানানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে নির্বিচার দলীয়করণ, মানবাধিকার হরণ, নানা কালাকানুনের মাধ্যমে কন্ঠ¯^রের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীদের অপকর্মের সমালোচনা করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নবম-দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীসহ কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থী এখনও কারাগারে। কেবলমাত্র সরকারের সমালোচনা করার জন্য গত কয়েক মাসে প্রায় দুই শতাধিক গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নিশ্চুপ-নির্বাক সমাজ প্রতিষ্ঠাই লিপ্ত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বিরোধী দল ও সমালোচনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর তিক্ত গরল বক্তব্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রাঙ্গন থেকে শান্তি, সহমর্মিতা বিদায় নিয়েছে। এই সরকারের আমলে বৈষম্য, নিপীড়ণ ও বিদ্বেষের এক বিষাক্ত বৃত্তের মধ্যে দেশের জনগণকে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। অবৈধ ক্ষমতার প্রতি অনুরাগের জন্য এদের বিবেচনা শক্তি এবং ন্যায়বিচার প্রণালী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। নিজেদের অনাচার এবং অপশাসন আড়াল করতে বিএনপিবিদ্বেষের হাইপার-প্রচারণা চলছে।

তিনি বলেন, মানুষ ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। দলীয়করণের রাজনীতি গণতান্ত্রিক রাজনীতি নয়। সুবিচার নিশ্চিত করতে হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিরোধী দল শত্রæদল নয়। কিন্তু নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রী বিএনপিসহ সকল বিরোধী পক্ষ ও মতকে শত্রু জ্ঞান করেন।
তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক কুজ্ঝটিকা এতটাই ঘন হয়েছে যে, সরকার তার অপকর্ম আড়াল করতে পারবে না। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলন জয়যুক্ত করতে দেশনায়ক তারেক রহমানের প্রাজ্ঞ ও দুরদর্শী নেতৃত্বে গণতন্ত্রকামী মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে শেখ হাসিনার কোন রণকৌশলই কাজে লাগবে না। কারণ তিনিই হচ্ছেন বর্তমান দুঃসময়ের শ্রষ্টা।

কারগারে যুবদল নেতাদের নির্যাতন করা হচ্ছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, আমরা ইতোপূর্বে কারাগারে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর কারাকর্তৃপক্ষের অমানুষিক নিপীড়ণ-নির্যাতনের কথা জানিয়েছি। যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবকে ২৪ ঘন্টা লকআপে রাখা হয়েছে। কেন তার ওপর এই বর্বরোচিত আচরণ তা জেল কর্তৃপক্ষকে জবাব দিতে হবে। এক শ্বসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে জেলের ছোট্ট কক্ষে দিনরাত পার করতে হচ্ছে সাইফুল আলম নীরবকে। এটি সুষ্পষ্ট যে, স্বারষ্ট্রমন্ত্রী প্রভাব খাটিয়ে সাইফুল আলম নীরবকে কারাগারের মধ্যে যন্ত্রণা দিচ্ছেন। কারণ একই নির্বাচনী এলাকায় ¯^রাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিদ্ব›দ্বী হয়ে বিএনপি’র প্রার্থী হন সাইফুল আলম নীরব। রাজনৈতিক প্রতিশোধের শিকার হয়েছেন ডায়াবেটিসসহ নানা অসুখে জর্জরিত সাইফুল আলম নীরব।

একইভাবে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্নাকে কারাগারে আটকিয়ে রাখতে একের পর এক গায়েবী মামলা দেয়া হচ্ছে। যে সকল মামলার সাথে মুন্নার লেশমাত্র সম্পর্ক ছিল না। কারাজীবন প্রলম্বিত করার জন্যই অবৈধ সরকার মুন্নার ওপর বহুমাত্রিক নিপীড়ণ নামিয়ে এনেছে। যুবসমাজকে টার্গেট করেই মুন্নাকে কারান্তরীণ করা হয়েছে যাতে তারুণ্যের ঢল রাজপথে উপচে পড়তে না পারে। বর্তমান অবৈধ সরকার অশুভ উদ্দেশ্য নিয়েই কোন মামলা না থাকলেও মুন্নাকে গ্রেফতার করে। ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান মুসাব্বির জামিনে মুক্তি পেলেও তাকে বারবার কারাফটক থেকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।

তবে আমি দৃঢ়কন্ঠে বলতে চাই-সাইফুল আলম নীরব, মোনায়েম মুন্না, কমিশনার হারুনুর রশীদ, এস এম জাহাঙ্গীর, ইউসুফ বিন জলিল, গোলাম মাওলা শাহীন, রফিক হাওলাদার, আজিজুর রহমান মুসাব্বির, আসিফসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার রেখে শেখ হাসিনা রাজনীতির ময়দান শান্ত, নিরাপদ ও সুখময় করতে পারবেন না। তিনি অবিলম্বে উল্লিখিত নেতৃবৃন্দের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহবান জানান। কারাগারে তাদের ওপর নিপীড়ণ-নির্যাতন বন্ধেরও আহবান জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মিথ্যাচারের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। এসময় রিজভী বলেন ক্ষনে ক্ষনে তাদের বক্তব্য পরিবর্তন হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আগামী নির্বাচন হবে না। দেশ-বিদেশের মানুষও তা মেনে নিবে না। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, মীর শরফত আলী সপু, ডা. রফিকুল ইসলাম, আসাদুল করিম শাহীন, আব্দুল খালেক, আমিরুল ইসলাম খাম আলীম, আমিনুল ইসলাম ,শেখ শামীম, তরিকুল আলম তেনজিং, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।